তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অর্ধশতকে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে লড়াইয়ের পুঁজি গড়া বাংলাদেশ সহজ জয়ই পেয়েছে। মুস্তাফিজুর রহমানের দারুণ বোলিং আর বোলার পরিবর্তনে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার বুদ্ধিমত্তা ও দুরদর্শিতায় অতিথিদের ৬১ রানে হারিয়েছে তারা।
এই জয়ে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। এই জয়ে আইসিসি ওয়ানডে র্যাংঙ্কিংয়ে একটি পয়েন্ট পেল তারা।
চলতি বছর এনিয়ে দুটি ওয়ানডে সিরিজে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ। এর আগে পাকিস্তানকে ৩-০ ব্যবধানে হারায় তারা। সর্বশেষ বাংলাদেশ সফরেও ওয়ানডে সিরিজে সব ম্যাচ হেরেছিল জিম্বাবুয়ে। গত বছর নভেম্বরে তাদের ৫-০ ব্যবধান হারায় মাশরাফিরা।
বুধবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেট ২৭৬ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ৪৩ ওভার ৩ বলে ২১৫ রানে অলআউট হয়ে যায় জিম্বাবুয়ে।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি জিম্বাবুয়ের। দ্বিতীয় বলেই চামু চিবাবাকে হারায় তারা। মুস্তাফিজুর রহমানের দারুণ এক বলে বোল্ড হয়ে যান চার দিয়ে শুরু করা চিবাবা।
সপ্তম ওভারে আবার আঘাত হানেন মুস্তাফিজ। এই বাঁহাতি স্পিনারের স্লোয়ার কাটারে নাসির হোসেনকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান অন্য উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান রেগিস চাকাভা।
নবম ওভারটি করতে যাচ্ছিলেন মুস্তাফিজ। তাকে থামিয়ে আল আমিন হোসেকে খুঁজেছিলেন অধিনায়ক। তখন মাঠে ছিলেন না আল আমিন। তিনি মাঠে এলেও সিদ্ধান্ত পাল্টে নাসিরকে দিয়ে ওভারটি করান মাশরাফি।
অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান চতুর্থ বলেই দেন নাসির। তার বলে এলবিডব্লউর ফাঁদে পড়েন পাল্টা আক্রমণে দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করা ক্রেইগ আরভিন।
৪৭ রানে প্রথম তিন ব্যাটসম্যানকে হারানো জিম্বাবুয়ে প্রতিরোধ গড়ে শন উইলিয়ামস ও চিগুম্বুরার ব্যাটে। উইকেট ধরে রাখার সঙ্গে দ্রুত রানও তোলেন এই দুই জন।
আগের ম্যাচে ২৪২ রানের লক্ষ্য থাকায় সাব্বির রহমান-মাহমুদউল্লাহকে বোলিংয়ে আনেননি মাশরাফি। এবার পৌনে তিনশ রানের পুঁজি থাকায় জুটি ভাঙতে লেগ স্পিনার সাব্বিরকে আক্রমণে আনেন অধিনায়ক। চিগুম্বুরাকে বোল্ড করে বিপজ্জনক হয়ে উঠা চতুর্থ উইকেটে ৮০ রানের জুটি ভাঙেন সাব্বিরই।
ম্যালকম ওয়ালারের সঙ্গে উইলিয়ামসের ৫৯ রানের আরেকটি জুটি জয়ের পথেই রাখে জিম্বাবুয়েকে। এই জুটিও ভাঙে মাশরাফির দুরদর্শিতায়। ৩৬তম ওভারটি করতে প্রথমে বল দিয়েছিলেন নাসিরকে। শেষ মুহূর্তে তাকে সরিয়ে আল আমিনকে বোলিংয়ে আনেন অধিনায়ক।
আগের ম্যাচে চিগুম্বুরা-সিকান্দার রাজার প্রতিরোধ ভাঙা আল আমিন এবারও হতাশ করেননি অধিনায়ককে। তার দারুণ এক বলে নাসিরের চমৎকার এক ক্যাচে পরিণত হয়ে ফিরে যান ওয়ালার।
জিম্বাবুয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখা উইলিয়ামসকে ফেরান মাশরাফি। তার বলে সাব্বিরকে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে সর্বোচ্চ ৬৪ রান করেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
ইনিংসের শুরুতে জিম্বাবুয়েকে বড় ধাক্কা দেওয়া মুস্তাফিজ অতিথিদের শেষ আশাটুকুও নিভিয়ে দেন পরপর দুই বলে রাজা ও লুক জংউইকে ফিরিয়ে। দুটি ক্যাচই নেন সাব্বির। রাজাকে ফেরান দুর্দান্ত এক ডাইভিং ক্যাচে। জংউই বিদায় নেন সহজ এক ক্যাচ দিয়ে।
মুস্তাফিজের হ্যাটট্রিক ঠেকিয়ে দেন গ্রায়েম ক্রেমার। পরের ওভারে ফিরে টিনাশে পানিয়াঙ্গারাকে ফেরান মুস্তাফিজ। এ নিয়ে ৯ ম্যাচের ছোট্ট ক্যারিয়ারে তৃতীয়বার পাঁচ উইকেট নিলেন ২০ বছর বয়সী এই পেসার।
মুস্তাফিজের ছয় উইকেটের আশায় পাঁচটি স্লিপ ও দুটি গালিসহ ভীষণ আগ্রাসী ফিল্ডিং সাজান। কিন্তু চারটি বল কোনোমতে কাটিয়ে দেন টাওরাই মুজারাবানি। বাঁহাতি স্পিনার আরাফাত সানিকে তিনি ফিরতি ক্যাচ দিলে বছরের ত্রয়োদশ জয়টি পেয়ে যায় বাংলাদেশ।
৩৪ রানে ৫ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার মুস্তাফিজ।
এর আগে তামিম-ইমরুলের প্রথম শতরানের উদ্বোধনী জুটিতে শুরুটা ভালো হয় বাংলাদেশের। দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান শুরুর দিকে প্রান্ত বদল করে খেলতে পারেননি। এই সময়ে চার-ছক্কায় দলের সংগ্রহ এগিয়ে নেন তারা। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে প্রান্ত বদল করে খেলা শুরু করেন তামিম-ইমরুল।
রানের দিক থেকে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সেরা উদ্বোধনী জুটি তাদেরই। কিন্তু এই জুটি কখনও তিন অঙ্কে পৌঁছাতে পারেনি। এবার সেই আক্ষেপ দূর করলেন তামিম-ইমরুল। আগের সেরা ৮০ রানের জুটিকে ছাড়িয়ে ১৪৭ রানে গিয়ে থামেন তারা। টানা দুই ম্যাচে অর্ধশতক পাওয়া ইমরুল সিকান্দার রাজার বলে স্টাম্পড হলে ভাঙে ২৯.৩ ওভার স্থায়ী জুটিটি।
৭৩ রান করা ইমরুলের ৯৫ বলের ইনিংসটি ৬টি চার ও চারটি ছক্কা সমৃদ্ধ। ওয়ানডেতে এটি তার দ্বাদশ অর্ধশতক।
ব্যক্তিগত ৭৩ রানে ফিরে যান অন্য উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তামিমও। লেগ স্পিনার গ্রায়েম ক্রেমারের বলে স্টাম্পড হন তিনি। ৭টি চার ও একটি ছক্কায় সাজানো ৯৮ বলের এই ইনিংস খেলার পথে শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে দুই হাজার রানের মাইলফলক অতিক্রম করেন তামিম।
শেষ পর্যন্ত সাকিব আল হাসানকে (দুই হাজার ৫০) ছাড়িয়ে দুই হাজার ৫৬ রানে থামেন তামিম।
তিন নম্বরে নামা মুশফিকও এদিন শের-ই-বাংলায় দুই হাজার রান পূর্ণ করার পথে ছিলেন। ২৫ বলে ২৮ রান করে তিনিও স্টাম্পড হলে সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেননি তিনি। মিরপুরে মুশফিকের রান এখন ১ হাজার ৯৮৮।
রানের জন্য লড়াইয়ে থাকা লিটন দাস ফেরেন বদলি ফিল্ডার ওয়েলিংটন মাসাকাদজার দারুণ এক ক্যাচে।
এরপর লুক জংউইয়ের এক ওভারে সাব্বির রহমান ও নাসির হোসেন ফিরে গেলে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সাব্বির-নাসির ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্রেমারের তালুবন্দি হন। ৩ উইকেটে ২২২ থেকে ২২৬ রানে ছয় উইকেট হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশকে এগিয়ে নেন মাহমুদউল্লাহ ও অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।
৪৫তম ওভারের শেষ বলে রান আউট হয়ে যেতে পারতেন মাহমুদউল্লাহ। শট খেলেই রানের জন্য দৌড় শুরু করেছিলেন তিনি। অন্য প্রান্তে থাকা মাশরাফি সারা দেননি। সরাসরি থ্রো স্টাম্প ভাঙার আগেই উইকেটরক্ষক চাকাভার গ্লাভসে লেগে বেল পড়ে যায়।
আউট হয়েছেন ভেবে প্যাভিলিয়নের দিকে হাঁটা শুরু করেন মাহমুদউল্লাহ। ততক্ষণে ভুল বুঝতে পেরে স্টাম্প তুলে নেন চাকাভা। কিন্তু বল আগেই ‘ডেড’ হয়ে যাওয়ায় বেঁচে যান সে সময় ২৫ বলে ৩২ রান করা মাহমুদউল্লাহ।
দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের গড়ে দেওয়া ভালো ভিতের সুবিধা কাজে লাগাতে পারেননি পরের দিকের ব্যাটসসম্যানরা। তাই আরও বড় সংগ্রহের সম্ভাবনা জাগিয়েও পৌনে তিনশ’ রানে থেমে যায় স্বাগতিকদের ইনিংস।
মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ৪ ওভারে ৩৭ রানের জুটিতে দলের সংগ্রহ আড়াইশ’ পার করে ফিরে যান মাশরাফি। আগের দুই ম্যাচে রান না পাওয়া মাহমুদউল্লাহ দারুণ এক অর্ধশতকে দলকে ভালো সংগ্রহ এনে দেন।
এক বল বাকি থাকতে রান আউট হয়ে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ। ৪০ বলে খেলা তার ৫২ রানের ইনিংসটি গড়া ৫টি চার ও একটি ছক্কায়।
জিম্বাবুয়ের জংউই ও ক্রেমার দুটি করে উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৭৬/৯ (তামিম ৭৩, ইমরুল ৭৩, মুশফিক ২৮, লিটন ১৭, মাহমুদউল্লাহ ৫২, সাব্বির ১, নাসির ০, মাশরাফি ১৬, আরাফাত ৩*, মুস্তাফিজ ১; পানিয়াঙ্গারা ১০-১-৪৯-১, মুজারাবানি ৪-১-২১-০, জংউই ৯-০-৫০-২, চিগুম্বুরা ৬-০-২৯-০, রাজা ৮-১-৪৮-১, ক্রেমার ১০-০-৫৩-২, ওয়ালার ৩-০-২৪-১)
জিম্বাবুয়ে: ৪৩.৩ ওভারে ২১৫ (চিবাবা ৪, চাকাভা ১৭, আরভিন ২১, উইলিয়ামস ৬৪, চিগুম্বুরা ৪৫, ওয়ালার ৩২, রাজা ৯, জংউই ১১, ক্রেমার ৫*, পানিয়াঙ্গারা ৩, মুজারাবানি ০; মুস্তাফিজ ৮-০-৩৪-৫, মাশরাফি ৯-০-৪০-১, নাসির ৭-০-৩৬-১, আল আমিন ৮-০-৪৪-১, আরাফাত ৯.৩-০-৪৭-১, সাব্বির ২-০-১২-১)
ফল: বাংলাদেশ ৬১ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: তামিম ইকবাল
চলতি বছর এনিয়ে দুটি ওয়ানডে সিরিজে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ। এর আগে পাকিস্তানকে ৩-০ ব্যবধানে হারায় তারা। সর্বশেষ বাংলাদেশ সফরেও ওয়ানডে সিরিজে সব ম্যাচ হেরেছিল জিম্বাবুয়ে। গত বছর নভেম্বরে তাদের ৫-০ ব্যবধান হারায় মাশরাফিরা।
বুধবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেট ২৭৬ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ৪৩ ওভার ৩ বলে ২১৫ রানে অলআউট হয়ে যায় জিম্বাবুয়ে।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি জিম্বাবুয়ের। দ্বিতীয় বলেই চামু চিবাবাকে হারায় তারা। মুস্তাফিজুর রহমানের দারুণ এক বলে বোল্ড হয়ে যান চার দিয়ে শুরু করা চিবাবা।
সপ্তম ওভারে আবার আঘাত হানেন মুস্তাফিজ। এই বাঁহাতি স্পিনারের স্লোয়ার কাটারে নাসির হোসেনকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান অন্য উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান রেগিস চাকাভা।
নবম ওভারটি করতে যাচ্ছিলেন মুস্তাফিজ। তাকে থামিয়ে আল আমিন হোসেকে খুঁজেছিলেন অধিনায়ক। তখন মাঠে ছিলেন না আল আমিন। তিনি মাঠে এলেও সিদ্ধান্ত পাল্টে নাসিরকে দিয়ে ওভারটি করান মাশরাফি।
অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান চতুর্থ বলেই দেন নাসির। তার বলে এলবিডব্লউর ফাঁদে পড়েন পাল্টা আক্রমণে দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করা ক্রেইগ আরভিন।
৪৭ রানে প্রথম তিন ব্যাটসম্যানকে হারানো জিম্বাবুয়ে প্রতিরোধ গড়ে শন উইলিয়ামস ও চিগুম্বুরার ব্যাটে। উইকেট ধরে রাখার সঙ্গে দ্রুত রানও তোলেন এই দুই জন।
আগের ম্যাচে ২৪২ রানের লক্ষ্য থাকায় সাব্বির রহমান-মাহমুদউল্লাহকে বোলিংয়ে আনেননি মাশরাফি। এবার পৌনে তিনশ রানের পুঁজি থাকায় জুটি ভাঙতে লেগ স্পিনার সাব্বিরকে আক্রমণে আনেন অধিনায়ক। চিগুম্বুরাকে বোল্ড করে বিপজ্জনক হয়ে উঠা চতুর্থ উইকেটে ৮০ রানের জুটি ভাঙেন সাব্বিরই।
ম্যালকম ওয়ালারের সঙ্গে উইলিয়ামসের ৫৯ রানের আরেকটি জুটি জয়ের পথেই রাখে জিম্বাবুয়েকে। এই জুটিও ভাঙে মাশরাফির দুরদর্শিতায়। ৩৬তম ওভারটি করতে প্রথমে বল দিয়েছিলেন নাসিরকে। শেষ মুহূর্তে তাকে সরিয়ে আল আমিনকে বোলিংয়ে আনেন অধিনায়ক।
আগের ম্যাচে চিগুম্বুরা-সিকান্দার রাজার প্রতিরোধ ভাঙা আল আমিন এবারও হতাশ করেননি অধিনায়ককে। তার দারুণ এক বলে নাসিরের চমৎকার এক ক্যাচে পরিণত হয়ে ফিরে যান ওয়ালার।
জিম্বাবুয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখা উইলিয়ামসকে ফেরান মাশরাফি। তার বলে সাব্বিরকে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে সর্বোচ্চ ৬৪ রান করেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
ইনিংসের শুরুতে জিম্বাবুয়েকে বড় ধাক্কা দেওয়া মুস্তাফিজ অতিথিদের শেষ আশাটুকুও নিভিয়ে দেন পরপর দুই বলে রাজা ও লুক জংউইকে ফিরিয়ে। দুটি ক্যাচই নেন সাব্বির। রাজাকে ফেরান দুর্দান্ত এক ডাইভিং ক্যাচে। জংউই বিদায় নেন সহজ এক ক্যাচ দিয়ে।
মুস্তাফিজের হ্যাটট্রিক ঠেকিয়ে দেন গ্রায়েম ক্রেমার। পরের ওভারে ফিরে টিনাশে পানিয়াঙ্গারাকে ফেরান মুস্তাফিজ। এ নিয়ে ৯ ম্যাচের ছোট্ট ক্যারিয়ারে তৃতীয়বার পাঁচ উইকেট নিলেন ২০ বছর বয়সী এই পেসার।
মুস্তাফিজের ছয় উইকেটের আশায় পাঁচটি স্লিপ ও দুটি গালিসহ ভীষণ আগ্রাসী ফিল্ডিং সাজান। কিন্তু চারটি বল কোনোমতে কাটিয়ে দেন টাওরাই মুজারাবানি। বাঁহাতি স্পিনার আরাফাত সানিকে তিনি ফিরতি ক্যাচ দিলে বছরের ত্রয়োদশ জয়টি পেয়ে যায় বাংলাদেশ।
৩৪ রানে ৫ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার মুস্তাফিজ।
এর আগে তামিম-ইমরুলের প্রথম শতরানের উদ্বোধনী জুটিতে শুরুটা ভালো হয় বাংলাদেশের। দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান শুরুর দিকে প্রান্ত বদল করে খেলতে পারেননি। এই সময়ে চার-ছক্কায় দলের সংগ্রহ এগিয়ে নেন তারা। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে প্রান্ত বদল করে খেলা শুরু করেন তামিম-ইমরুল।
রানের দিক থেকে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সেরা উদ্বোধনী জুটি তাদেরই। কিন্তু এই জুটি কখনও তিন অঙ্কে পৌঁছাতে পারেনি। এবার সেই আক্ষেপ দূর করলেন তামিম-ইমরুল। আগের সেরা ৮০ রানের জুটিকে ছাড়িয়ে ১৪৭ রানে গিয়ে থামেন তারা। টানা দুই ম্যাচে অর্ধশতক পাওয়া ইমরুল সিকান্দার রাজার বলে স্টাম্পড হলে ভাঙে ২৯.৩ ওভার স্থায়ী জুটিটি।
৭৩ রান করা ইমরুলের ৯৫ বলের ইনিংসটি ৬টি চার ও চারটি ছক্কা সমৃদ্ধ। ওয়ানডেতে এটি তার দ্বাদশ অর্ধশতক।
ব্যক্তিগত ৭৩ রানে ফিরে যান অন্য উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তামিমও। লেগ স্পিনার গ্রায়েম ক্রেমারের বলে স্টাম্পড হন তিনি। ৭টি চার ও একটি ছক্কায় সাজানো ৯৮ বলের এই ইনিংস খেলার পথে শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে দুই হাজার রানের মাইলফলক অতিক্রম করেন তামিম।
শেষ পর্যন্ত সাকিব আল হাসানকে (দুই হাজার ৫০) ছাড়িয়ে দুই হাজার ৫৬ রানে থামেন তামিম।
তিন নম্বরে নামা মুশফিকও এদিন শের-ই-বাংলায় দুই হাজার রান পূর্ণ করার পথে ছিলেন। ২৫ বলে ২৮ রান করে তিনিও স্টাম্পড হলে সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেননি তিনি। মিরপুরে মুশফিকের রান এখন ১ হাজার ৯৮৮।
রানের জন্য লড়াইয়ে থাকা লিটন দাস ফেরেন বদলি ফিল্ডার ওয়েলিংটন মাসাকাদজার দারুণ এক ক্যাচে।
এরপর লুক জংউইয়ের এক ওভারে সাব্বির রহমান ও নাসির হোসেন ফিরে গেলে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সাব্বির-নাসির ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্রেমারের তালুবন্দি হন। ৩ উইকেটে ২২২ থেকে ২২৬ রানে ছয় উইকেট হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশকে এগিয়ে নেন মাহমুদউল্লাহ ও অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।
৪৫তম ওভারের শেষ বলে রান আউট হয়ে যেতে পারতেন মাহমুদউল্লাহ। শট খেলেই রানের জন্য দৌড় শুরু করেছিলেন তিনি। অন্য প্রান্তে থাকা মাশরাফি সারা দেননি। সরাসরি থ্রো স্টাম্প ভাঙার আগেই উইকেটরক্ষক চাকাভার গ্লাভসে লেগে বেল পড়ে যায়।
আউট হয়েছেন ভেবে প্যাভিলিয়নের দিকে হাঁটা শুরু করেন মাহমুদউল্লাহ। ততক্ষণে ভুল বুঝতে পেরে স্টাম্প তুলে নেন চাকাভা। কিন্তু বল আগেই ‘ডেড’ হয়ে যাওয়ায় বেঁচে যান সে সময় ২৫ বলে ৩২ রান করা মাহমুদউল্লাহ।
দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের গড়ে দেওয়া ভালো ভিতের সুবিধা কাজে লাগাতে পারেননি পরের দিকের ব্যাটসসম্যানরা। তাই আরও বড় সংগ্রহের সম্ভাবনা জাগিয়েও পৌনে তিনশ’ রানে থেমে যায় স্বাগতিকদের ইনিংস।
মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ৪ ওভারে ৩৭ রানের জুটিতে দলের সংগ্রহ আড়াইশ’ পার করে ফিরে যান মাশরাফি। আগের দুই ম্যাচে রান না পাওয়া মাহমুদউল্লাহ দারুণ এক অর্ধশতকে দলকে ভালো সংগ্রহ এনে দেন।
এক বল বাকি থাকতে রান আউট হয়ে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ। ৪০ বলে খেলা তার ৫২ রানের ইনিংসটি গড়া ৫টি চার ও একটি ছক্কায়।
জিম্বাবুয়ের জংউই ও ক্রেমার দুটি করে উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৭৬/৯ (তামিম ৭৩, ইমরুল ৭৩, মুশফিক ২৮, লিটন ১৭, মাহমুদউল্লাহ ৫২, সাব্বির ১, নাসির ০, মাশরাফি ১৬, আরাফাত ৩*, মুস্তাফিজ ১; পানিয়াঙ্গারা ১০-১-৪৯-১, মুজারাবানি ৪-১-২১-০, জংউই ৯-০-৫০-২, চিগুম্বুরা ৬-০-২৯-০, রাজা ৮-১-৪৮-১, ক্রেমার ১০-০-৫৩-২, ওয়ালার ৩-০-২৪-১)
জিম্বাবুয়ে: ৪৩.৩ ওভারে ২১৫ (চিবাবা ৪, চাকাভা ১৭, আরভিন ২১, উইলিয়ামস ৬৪, চিগুম্বুরা ৪৫, ওয়ালার ৩২, রাজা ৯, জংউই ১১, ক্রেমার ৫*, পানিয়াঙ্গারা ৩, মুজারাবানি ০; মুস্তাফিজ ৮-০-৩৪-৫, মাশরাফি ৯-০-৪০-১, নাসির ৭-০-৩৬-১, আল আমিন ৮-০-৪৪-১, আরাফাত ৯.৩-০-৪৭-১, সাব্বির ২-০-১২-১)
ফল: বাংলাদেশ ৬১ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: তামিম ইকবাল
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন