তুরস্কের সরকার বলছে আংকারায় সন্দেহভাজন আত্মঘাতী বোমা হামলায় এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ৯৫ জন।
আর দুইশর বেশি মানুষ ভয়াবহ ঐ হামলায় আহত হয়েছেন। তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন। এই হামলার হতাহতরা বেশির ভাগি কুর্দি সমর্থিত এইচডিপি পার্টির সমর্থক, তারা এই হামলার জন্য সরকারকেই দায়ী করছে। বিস্ফোরন দুটি ঘটে শহরের কাছে সেন্ট্রাল রেল স্টেশনের কাছে। বামদল গুলোর আয়োজনে সভায় যখন মানুষজন জড়ো হচ্ছিল ঠিক তখনি এই জোরা বিস্ফোরন হয়।
বলা হচ্ছে তুরস্কে এই ধরণের ভয়াবহ হামলা এর আগে হয়নি। প্রধানমন্ত্রী আহমেত ডাভুটোগু দেশটিতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন।
তিনি বলেছেন এই হামলা দুইজন আত্মঘাতী হামলা কারি ঘটিয়েছেন সেটার প্রমাণ তাদের রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট রেসেপ তায়েপ এরদোয়ান বলেছেন দেশটির পার্লামেন্টারি নির্বাচনের তিন সপ্তাহ আগে এই হামলা বলে দেয়ে এটা একটা সন্ত্রাসী-কার্যক্রম। তিনি তুর্কমেনিস্তানে তার নির্ধারিত সফর বাতিল করেছেন।
তুরস্কের সরকার এবং পিকেকে গ্রুপের মধ্যে যে সংঘর্ষ হচ্ছে সেটা সমাপ্তির দাবি জানিয়ে বামদলগুলো ঐ সভার আয়োজন করে।
স্থানীয় সময় দুপুর ১২ টায় শুরু হওয়ার কথা ছিল কিন্তু সকাল ১০ টার দিক যখন মানুষজন সভাস্থলে আসতে শুরু করে তখনি বিস্ফোরন দুটি হয়।
কুর্দি সমর্থিত এইচডিপি পার্টি ছিল ঐ সভায় অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে একটি।
তারা একটি বিবৃত্তিতে জানিয়েছে তারা বিশ্বাস করে দলটির সদস্যরাই ঐ হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল।
হামলার জন্য দলটি সরকারকে দায়ী করছে এবং আসন্ন নির্বাচন সম্পর্কিত সব সভা বাতিল করেছে।
মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এই তুরস্ক রাষ্ট্রটি রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনীতি, পিকেকে-র সাথে সংঘর্ষ, ইসলামিক স্টেটের হুমকি এবং ২০ লক্ষ শরণার্থী সমস্যা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে।
এর মধ্যে আংকারাতে এই হামলা সংকেত দিচ্ছে তুরস্ককে একটা অন্ধকার সময় এখন মোকাবেলা করতে হচ্ছে।
তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় গতকাল শনিবারের বিস্ফোরণে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আজ হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছেন।
আঙ্কারার যে জনসভায় বিস্ফোরণটি ঘটেছিল, তার আয়োজকরা এখন বলছেন, বিস্ফোরণে ১২৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন।অনেকেই নিহতদের স্মরণে ঘটনাস্থলে পুষ্পস্তবক অর্পণ করছেন।
সংবাদদাতারা বলছেন, উপস্থিত মানুষজন শোক পালন করছেন ঠিকই, কিন্তু একই সাথে তাদের মধ্যে প্রচন্ড ক্ষোভও কাজ করছে।
জনগণের মধ্যে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে তার একটা কারণ নিরাপত্তা ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা।
নিহতদের প্রতি শোক জানাতে আসা লোকদের সরকারবিরোধী শ্লোগানে এই ক্ষোভের প্রতিফলন ছিল স্পষ্ট।
তুরস্কের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুতর এই বোমা আক্রমণের জন্য তারা সরকারকেই দায়ী করছেন।
তারা বলছেন, সরকার যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে নি, এবং প্রেসিডেন্ট রেচেপ তায়েপ এরদোয়ান তার কুর্দি-বিরোধী কথাবার্তার মধ্যে দিয়ে জাতিকে বিভক্ত করে ফেলেছেন এবং এক পক্ষকে আরেক পক্ষের পেছনে লাগিয়ে দিয়েছেন।
কুর্দি সমর্থক নেতাদের বক্তব্য হচ্ছে, এই আক্রমণের পেছনে সরকারেরও হাত আছে - যা তুর্কি সরকার প্রত্যাখ্যান করেছে । প্রধানমন্ত্রী আহমেত দাভুতুলু বলেছেন, দুটি আক্রমণই চালিয়েছে আত্মঘাতী হামলাকারীরা এবং তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
কিন্তু এমন ব্যাপক প্রাণহানির পর তুরস্কের সমাজে ঐক্যের পরিবর্তে বিভক্তিই যেন বেশি প্রকট হয়ে উঠছে।
তুরস্কে আর মাত্র তিন সপ্তাহ পরই জাতীয় নির্বাচন।
একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নির্বাচন যথাসময়েই হবে তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোর দার করা হবে।
bbc bangla
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন