ঢাকার গুলশানে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এইচ বি এম ইকবালের ভাতিজার গাড়ির ধাক্কায় চারজন আহত হওয়ার ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছে হাই কোর্ট।
একইসঙ্গে ওই ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ নিতে ‘বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা’ কেন ‘আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত’ বলে ঘোষণা করা হবে না- তাও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক, রমনা), অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (তদন্ত, রমনা) ও গুলশান থানার ওসিকে দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের অবকাশকালীন হাই কোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেয়।
গত ১২ অক্টোবর আওয়ামী লীগ নেতা ইকবালের ১৬ বছর বয়সী ভাতিজার গাড়ির ধাক্কায় দুই রিকশাচালকসহ চারজন আহত হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় উঠে আসে, পুলিশও তা স্বীকার করে।
গণমাধ্যমে বিষয়টি এলেও ওই ঘটনায় কোনো পদক্ষেপ পুলিশ না নেওয়ার পর তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোতে আলোচনা চলছে।
এর মধ্যে বিবাদীদের পদক্ষেপ নিতে নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে সোমবার সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ আইনজীবীসহ ছয়জন হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করেন,যার ওপর মঙ্গলবার শুনানি হয়।
আবেদনকারীরা হলেন - ব্যারিস্টার ওমর ফারুক, আইনজীবী কে এইচ বাহার রুমী, মাহফুজ-বিন-ইউসুফ, শামীম আরা, নাজমুল খন্দকার নাজমুল আহসান ও এস এম আসলাম।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার অনীক আর হক। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুল করীম ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল টাইটাস হিল্লোল রেমা।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুল করীম সাংবাদিকদের বলেন, “ওই ঘটনায় আইনগত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করায় গুলশান থানার ওসির বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে না- রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।”
গত ১২ অক্টোবর গুলশান-২ এর ৭৪ নম্বর সড়কে ওই ঘটনা ঘটে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই সেদিন গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিলেন ওই কিশোর।
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী লাইসেন্স পেতে ১৮ বছর বয়স হতে হয়।
ঘটনার পরদিন গুলশান থানার এক এসআই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই ছেলে মাতাল অবস্থায়ছিল। গুলশানের ৭৪ নম্বর সড়ক দিয়ে বেপরোয়া চালানোর সময় দুটি রিকশাকে ধাক্কা দেয়। এতেই চারজন আহত হন।
অবশ্য ওই কিশোরের মাতাল থাকার বিষয়টি সেদিন অস্বীকার করেন গুলশান থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম।
আহতদের মধ্যে রফিকুল ইসলাম (৪০) নামে গ্রামীণ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কয়েকদিনের মধ্যে তিনি হাসপাতাল ছাড়তে পারবেন বলে চিকিৎসকরা আশা করছেন।
আহত বাকিরা চিকিৎসা নিয়ে ঘটনার দিনই বাড়ি ফিরে যান।
ঘটনার পর পুলিশ ওই কিশোরকে আটক করলেও পরে ছেড়ে দেয়। লাইসেন্স না থাকায় তার বিরুদ্ধে মোটরযান আইনে একটি অভিযোগ দায়ের হলেও কোনো মামলা করা হয়নি। রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী অনীক আর হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মোটরযান আইন অনুযায়ী দুর্ঘটনার পর ২১ দিনের মধ্যে মামলা করতে হয়। আমাদের হিসাবে এখনও ১৪ দিন বাকি আছে। ঘটনার পর পুলিশ কোনো আইনি পদক্ষেপ না নেওয়ায় বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে রিটটি করা হয়। আদালত রুল দিয়েছে।
“ওই ১৪ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হবে ও পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
এই বিষয়ে পুলিশের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ কমিশনার মোস্তাক হোসেন খান মঙ্গলবার বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখনও আমরা আদালতের নির্দেশনা হাতে পাইনি। আদালত যা বলবে আমরা সে নির্দেশনা অনুসরণ করব।”
পুলিশ ছেড়ে দেওয়ার এক দিন পর ওই কিশোরকে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “যদি বাইরে গিয়ে থাকে তাহলে আইন অনুযায়ী তাকে আনার ব্যবস্থা করা হবে।”
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রফিকুলের সঙ্গে পুলিশ যোগাযোগ রাখলেও তিনি এখনও কোনো অভিযোগ করেননি বলে দাবি করেন মোস্তাক হোসেন।
এই ঘটনায় মামলা না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে গুলশানের ওসি সিরাজুল ইসলাম সেদিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেলে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
“তবে এসব ঘটনায় কেউ যদি মারাও যায়, তবুও আসামি জামিন পেয়ে থাকেন,” কাউকে গ্রেপ্তার না করার ক্ষেত্রে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছিলেন তিনি।
সাবেক সংসদ সদস্যের ভাতিজার নির্দোষ বলে সাফাই গেয়ে গুলশান থানার ওসি আরও বলেছিলেন, “ওই ছেলে গাড়ি চালানোর সময় হঠাৎ করেই একজন পথচারী সামনে পড়ে। তাকে বাঁচাতে গিয়েই এই দুর্ঘটনা ঘটে।”
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন