মুম্বাইতে উগ্র হিন্দুত্ববাদী দল শিবসেনার হাঙ্গামায় ভারত ও পাকিস্তানের ক্রিকেট বোর্ডের প্রধানদের মধ্যে বৈঠক ভন্ডুল হয়ে যাওয়ার পর দুদেশের ক্রিকেট সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকেছে।
চলমান ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ থেকে ইতিমধ্যেই পাকিস্তানি আম্পায়ার ও ভাষ্যকারদের সরিয়ে নিতে হয়েছে, আর পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান শাহরিয়ার খান সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন বিসিসিআই-কে নিয়ে তিনি অত্যন্ত হতাশ।ডিসেম্বরে ভারত-পাকিস্তান সিরিজ যেমন এখন বাতিল হওয়ার মুখে, তেমনি আগামী বছর ভারতে অনুষ্ঠেয় টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপেও পাকিস্তানের অংশগ্রহণ এখন চরম অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
আইসিসিতে আম্পায়ারদের এলিট প্যানেলের সদস্য আলীম দারের আজ মঙ্গলবার থাকার কথা ছিল চেন্নাইতে, ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার পরবর্তী ওয়ান ডে ম্যাচে আম্পায়ারিং করার জন্য।
একই দিন কমেন্ট্রি বক্সে থাকার কথা ছিল পাকিস্তানি তারকা ওয়াসিম আক্রাম ও শোয়েব আখতারদেরও। আরও কথা ছিল, পাকিস্তানি ক্রিকেট বোর্ডের সদস্য নাজিম শেঠি মুম্বাইতে ভারতীয় বোর্ডের সঙ্গে বৈঠক সেরে দিল্লিতে আসবেন।
কিন্তু মুম্বাইতে গতকাল শিবসেনার হাঙ্গামায় সেই সব অঙ্কই এখন ভেস্তে গেছে – আলীম দার থেকে শুরু করে নাজিম শেঠি সবাই দুবাইয়ের বিমান ধরে ফিরে গেছেন। ভারতীয় বোর্ডও জানিয়ে দিয়েছেন, এখন আর দুপক্ষের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের কোনও সম্ভাবনা নেই।
বিসিসিআই সচিব ও বিজেপি নেতা অনুরাগ ঠাকুর জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে পাকিস্তানি ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান শাহরিয়ার খানের কোনও বৈঠক হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘‘মি: খান ভারতে এসেছিলেন ভারতীয় বোর্ডের নতুন প্রধান শশাঙ্ক মনোহরের সঙ্গে দেখা করতে, দুদেশের ক্রিকেট সম্পর্ক নিয়ে কথা বলতে। এটাতে বাধা দেওয়া উচিত হয়নি। দুদেশের মধ্যে ক্রিকেট চালু করা উচিত কি না, বিসিসিআই সে সিদ্ধান্ত নেবে ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা আর ভারতীয়দের অনুভূতির কথা মাথায় রেখেই।’’
আনুষ্ঠানিক বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পর পাকিস্তানি বোর্ডের প্রধান শাহরিয়ার খান মঙ্গলবার দিল্লিতে এসে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন আইপিএল চেয়ারম্যান রাজীব শুক্লা বা সাবেক বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট শরদ পাওয়ারের সঙ্গে।
আসন্ন দশেরা উৎসব উপলক্ষে তিনি সবার জন্য মিষ্টি নিয়ে গেছেন ঠিকই, কিন্তু ভারতীয় বোর্ডের ওপর তিনি যে অসম্ভব বিরক্ত সেই হতাশা গোপন করার কোনও চেষ্টাই করেননি।
তিনি বলছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাটিতে ডিসেম্বরে সিরিজ খেলার ব্যাপারে ভারতীয় বোর্ড তাদের সঙ্গে সমঝোতায় সই করেছে, এখন সেই চুক্তির খেলাপ করাটা প্রতারণার সামিল।
ভারতীয় বোর্ডের বক্তব্য এ ব্যাপারে কোনও সইসাবুদ হয়নি, শুধু মৌখিক কথাবার্তা হয়েছে মাত্র। বিজেপি এমপি ও বোর্ড সচিব অনুরাগ ঠাকুর যুক্তি দিচ্ছেন, শেষ পর্যন্ত ক্রিকেট হবে কি না তা কিন্তু বোর্ড নয়, সরকারের ওপর নির্ভর করে।
তাঁর কথায়,‘‘দুই দেশের বোর্ডের মধ্যে কথাবার্তা চলতেই পারে, কিন্তু ক্রিকেট তখনই হবে যখন পরিস্থিতির উন্নতি হবে। দুদেশের সরকার যদি একসাথে বসে কথা বলে ও ক্রিকেট আয়োজনের ব্যাপারে একমত হয় তখনই খেলা সম্ভব।’’
কিন্তু ভারতে ক্রিকেট পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বোর্ড কর্মকর্তাদের এ ধরনের মন্তব্যর একটাই অর্থ হয় – ডিসেম্বরে ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট সিরিজের কোনও সম্ভাবনাই নেই।
ফলে পরিস্থিতিতে নাটকীয় বদল না-হলে ভারত-পাকিস্তান সিরিজ যেমন বাতিল হচ্ছে, তেমনি আসন্ন মার্চ-এপ্রিলে ভারতে অনুষ্ঠেয় টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপেও হয়তো পাকিস্তানকে দেখা যাবে না।
আইসিসি প্রেসিডেন্ট ও পাকিস্তানি তারকা জাহির আব্বাস ইতিমধ্যেই সেরকম বয়কটের হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন – এবং দুদেশের ক্রিকেট-অনুরাগীরা চট করে সম্পর্কে উন্নতির কোনও আশাও দেখছেন না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন