বুধবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৫

'অর্থ পাচার বা সন্ত্রাসে অর্থায়নের ঘটনা ধরা পড়ছে না'

 
    bangladesh_money_taka
 
 
বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচার এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন ঠেকানোর আইনগুলো কঠোর করা হয়েছে ঠিকই - কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তা ঠিকমতো প্রয়োগ হচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলছেন, আইন প্রণয়ন হলেও পরিস্থিতির বড় ধরণের পরিবর্তন হয়নি। অর্থ পাচারের কোন বড় ঘটনা ধরা পড়ছে না। সন্ত্রাসে অর্থায়নের ঘটনাও ধরতে পারে নি।"
কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলছে, অর্থ পাচার এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছেম এবং পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনাও হচ্ছে।
তবে মি. খালেদ এমন এক সময় এ কথা বললেন, যখন অর্থ পাচার এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশে কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে তা দেখতে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন আন্তর্জাতিক দল ঢাকায় এসেছে।
অর্থ পাচার এবং সন্ত্রাসে অর্থায়নের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদন্ড নির্ধারণী সংস্থার ঝুঁকির তালিকায় বাংলাদেশের নাম ছিল ২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত। এই সংস্থার প্রতিবেদন বিদেশী বিনিয়োগকারিদের ওপরও প্রভাব ফেলে।
এই তালিকা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টায় বাংলাদেশ কিছু পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেছিল। এ পদক্ষেপগুলো যাচাই করার জন্যই ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় গ্রুপের বিশেষজ্ঞ দল ঢাকা এসেছে।
এই দলটি মূল্যায়ন করবে যে অর্থ পাচার এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশ কতটা এগিয়েছে। বিশেষজ্ঞ দলটি মঙ্গলবার ঢাকায় দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদকের সাথে বৈঠক করেছে।
দুদকের চেয়ারম্যান মোঃ বদিউজ্জামান জানিয়েছেন, বিদেশে অর্থ পাচার সম্পর্কিত মামলাগুলোর অগ্রগতি কি, এগুলো কিভাবে এগুচ্ছে, এসব বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা জানতে চেয়েছিল। দুদকের পক্ষ থেকে বিস্তারিত জানানো হয়েছে।
দুদকের চেয়ারম্যান আরও জানিয়েছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে আরাফাত রহমানের বিদেশে পাচার করা ২১ কোটি টাকা দেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে।
"এ ধরণের আরও কয়েকটি মামলার রেজাল্ট পেয়েছি আর কিছু মামলা চলছে। এগুলি তাদের অবহিত করেছি।" বলেন মি. বদিউজ্জামান।
কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গর্ভনর খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেছেন, এসব অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সক্ষমতার অভাব রয়েছে।
মি. খালেদ বলেন, "আইন প্রণয়নের বিষয়টি সন্তোষজনক। কিন্তু আইন প্রয়োগ করে পরিস্থিতির বড় ধরণের পরিবর্তন হয়নি বলেই আমি মনে করি। অর্থ পাচারের তেমন কোন ঘটনাই ধরা পড়ছে না। অথচ এটা একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য না যে মানিলন্ডারিং হচ্ছে না।
তিনি বলেন, "বড় বড় কোন ঘটনাই ধরা পড়ছে না। সন্ত্রাসে যে অর্থায়ন - তা ধরতে কিন্তু পারে নি। আসলে এসব অপরাধ ধরার ক্ষেত্রে ইন্টেলিজেন্সের সক্ষমতার অভাব রয়েছে বলে আমি মনে করি।"
তবে কর্মকর্তারা বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি আলাদা ইউনিট করা হয়েছে অর্থ পাচার এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্ণর আবু হেনা মো: রাজি হাসান বলেছেন, জাতীয় কৌশল নিয়ে এর অধীনে যে তৎপরতা চলছে, তাতে অর্থপাচার এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
ঢাকায় দু’সপ্তাহের এই সফরে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ দলটি কেন্দ্রীয় ব্যাং, সিআইডি পুলিশ গোয়েন্দা পুলিশ এবং ব্যবসায়ী সংগঠনসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে একের পর এক বৈঠক করছে।
অর্থ পাচার প্রতিরোধে মানি লন্ডারিং আইন এবং সন্ত্রাস দমন আইনে কঠোর বিধান করার বিষয়কে তুলে ধরা হচ্ছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন