চলতি বছরের মধ্যেই অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ করা হবে, এই ঘোষণার মধ্যে দিয়ে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত একটি বিতর্কিত সেমিনার রোববার শেষ হয়েছে।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ-প্রভাবিত একটি থিঙ্কট্যাঙ্ককে কেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় রামমন্দির নিয়ে আলোচনাসভা করতে দিল, কংগ্রেস ও বামপন্থীরা সেই প্রশ্নে প্রতিবাদ জানালেও সেমিনারে অবশ্য বাধা দিতে পারেননি।
আলোচনায় প্রধান বক্তা বিজেপি নেতা ড. সুব্রহ্মণ্যম স্বামী ঘোষণা করেছেন – সুপ্রিম কোর্টে মামলা জিতেই এ বছর রামমন্দির গড়ার কাজ শুরু হবে, এর জন্য কোনও বল প্রয়োগের দরকার হবে না।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস ফ্যাকাল্টির সামনে কংগ্রেস ও বাম দলগুলির ছাত্র সংগঠনগুলো গতকাল থেকেই যে আলোচনাসভার প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন, তার মূল বিষয় ছিল রামমন্দির।
ওই সভার আয়োজন করে অরুন্ধতী বশিষ্ঠ অনুসন্ধান পীঠ নামে একটি সংগঠন, যার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সদ্যপ্রয়াত বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নেতা অশোক সিংঘল।
দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে এমন একটি বিতর্কিত বিষয় নিয়ে তাদের আলোচনার অনুমতি দিল, ছাত্রদের প্রতিবাদের মূল কথা ছিল সেটাই।
কিন্তু সভার মূল বক্তা ও বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী পরিষ্কার জানিয়ে দেন, রামমন্দির নিয়ে তারা আসল তথ্য মানুষের কাছে তুলে ধরতে চাইছেন, এর মধ্যে কোনও কোনও অন্যায় নেই।
ড. স্বামী বলেন, ‘‘আমরা একটি রুদ্ধদ্বার আলোচনা করছি, যেখানে শুধু আমাদের মতাদর্শের লোকদেরই আহ্বান জানানো হয়েছে। রামমন্দিরের নানা দিক নিয়ে তাদের শিক্ষিত করে তুলতেই এই আলোচনা। আপনি মার্ক্সের কথা বলতে পারবেন, আর আমি শ্রীরামচন্দ্রের কথা বললেই সাম্প্রদায়িক বিভাজন – এটা আবার কী ধরনের দ্বিচারিতা?’’
তিনি নিজের বক্তৃতায় আরও দাবি করেন, সুপ্রিম কোর্টে এই মুহুর্তে অযোধ্যার বিতর্কিত ধর্মীয় স্থান নিয়ে যে মামলা চলছে তাতে রামমন্দির ট্রাস্টেরই জয় হবে – এবং ২০১৬ সালের মধ্যেই সেখানে শুরু হয়ে যাবে মন্দির নির্মাণের কাজ।
সাবেক কংগ্রেসি প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী পর্যন্ত রামমন্দির নির্মাণের সমর্থক ছিলেন বলেও ড. স্বামী দাবি করেন।
তবে মুসলিম নেতা ও হায়দ্রাবাদের এমপি আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বলছেন, এই সব মন্তব্য আদালত অবমাননারই সামিল।
মি ওয়াইসির প্রশ্ন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট কী করবে সেটা উনি কীভাবে জানলেন? কেউ যদি আগে থেকেই দাবি করে সুপ্রিম কোর্টের ফয়সালা তার জানা আছে, সেটা তো শীর্ষ আদালতের দিকেই আঙুল তোলা। এ বছরের মধ্যেই ফয়সালা হয়ে যাবে বলে উনি যে বলছেন, উনি কি বিচারপতি না কি ?’’
বিরোধী কংগ্রেস আবার অভিযোগ করেছে, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতিকরণ করতেই এই সেমিনারের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
দলীয় মুখপাত্র শোভা ওঝার কথায়, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে রাজনীতির আখড়া বানাতে চাইছে, আর সে কারণেই পুনের ফিল্ম ইনস্টিটিউটের পর এবার দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়েও ড: স্বামীকে দিয়ে রামমন্দিরের মতো ইস্যু আমদানি করা হল। এরকম বিতর্কিত বিষয়ে ওখানে সেমিনার করাটা একেবারেই অন্যায়।’’
বিরোধীরা অভিযোগ করছেন, আগামী বছর উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনের আগেই ইচ্ছে করে বিজেপি রামমন্দির ইস্যুকে খুঁচিয়ে তুলে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ করতে চাইছে।
কিছুদিন আগে বিশ্ব হিন্দু পরিষদও ঘোষণা করেছে, মন্দির বানানোর জন্য সারা দেশ থেকে অযোধ্যায় পাথর এসে পৌঁছতে শুরু করেছে। ফলে মন্দির নির্মাণ শুরু হোক বা না-হোক, হাওয়া গরম করার চেষ্টা চলছে পুরো দমেই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন