“সন্ত্রাসীদের মৃতদেহগুলোকে শূকরের চামড়ায় মুড়ে উপুড় করে শূকরের বিষ্ঠার মধ্যে ফেলে দেওয়া হোক যাতে তাদের ভাগ্যে হুর না জোটে।"
পাঠানকোটের বিমানঘাঁটিতে হামলা নিয়ে এই বিতর্কিত টুইটটি করেছেন ভারতের ত্রিপুরার রাজ্যপাল তথাগত রায়।
এই সাংবিধানিক পদে যোগ দেওয়ার আগে পর্যন্ত তিনি ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী বিজেপি-র একজন শীর্ষ নেতা ছিলেন।
ত্রিপুরার রাজ্যপাল টুইট করে যা লিখেছেন তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বিবিসি-কে বলেছেন, ফিলিপিন্সে ১৯১০ সাল নাগাদ আর রাশিয়াতে চেচেন বিদ্রোহ দমন করতে এভাবেই শূকরের চামড়ায় বিদ্রোহীদের মৃতদেহ মুড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে, যাতে জঙ্গী এবং সশস্ত্র বিদ্রোহীদের মধ্যে মৃত্যুভয় তৈরি করা যায়।
গভর্নর রায় বলেন, "ওই উপায় যথেষ্ট কার্যকর হয়েছিল সেই সময়ে" – এমনই দাবী মি. রায়ের ।
তিনি বলেন, যারা ভারতে বারে বারে সশস্ত্র হামলা চালাচ্ছে, তাদের মধ্যেও মৃত্যু ভয় তৈরি করতে হবে, "আর শূকর বিষ্টার মধ্যে দেহ ফেলে দিলে যে হুর পাবে না তারা জন্নাতে গিয়ে, সেটাও মাথায় ঢুকিয়ে দিতে হবে।"
যে ধর্মের আশ্রয় নিচ্ছে ওই নরপশুরা, তাদের ধর্মীয় উপায় দিয়েই মৃত্যুভয় দেখানোর এর থেকে আর ভাল কোনও উপায় নেই – এই উপদেশটাই তিনি একজন সাংবিধানিক পদে আসীন ব্যক্তি হিসাবে দিতে চেয়েছেন বলেই বিবিসি-কে বলেন তথাগত রায়।
কিন্তু মি. রায়ের এই টুইট নিয়ে শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক।
পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম মুসলিম নেতা মৌলানা সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী বলেন, “তথাগত রায় একজন মুসলমান বিদ্বেষী নাগরিক। কিন্তু একজন রাজ্যপালের কাছ থেকে ফুটপাতের মানুষে মতো কথা শোনাটা ভাল দেখায় না।‘
“যারা এই উগ্রতা করছে, তাদের সঙ্গে ইসলাম ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই – এটা সারা বিশ্ব জানে। তবুও ওই হামলার পরে শূকরের প্রসঙ্গ টেনে আনা হল – ভাবাবেগে আঘাত দেওয়া হল। তবে এসব করে হিন্দু মুসলমানের মধ্যে যে ভাব-ভালবাসা আছে, তা ভাঙ্গা যাবে না,” মন্তব্য মৌলানা চৌধুরীর।
ত্রিপুরার ক্ষমতাসীন দল সি পি আই এমের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক কমিটি পলিটবুরোর সদস্য মুহম্মদ সেলিম বলছিলেন, “তথাগত রায় শুধু যে আগে কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতা ছিলেন তা তো নয়। সাংবিধানিক পদে যোগ দেওয়ার পরেও তিনি আরএসএস কর্মীর মতোই কাজ করছেন – রাজভবনকেও সেভাবে ব্যবহার করছেন আর এরকম সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে লেখা টুইট করছেন তাঁর ব্যক্তিগত একাউন্ট থেকে।“
ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি বলছে, মি. রায় এখন আর তাদের দলে নেই, তাই ওই টুইট নিয়ে তারা কোনও মন্তব্য করবে না।
তবে দলের পশ্চিমবঙ্গ শাখার সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চ্যাটার্জী জানাচ্ছেন, “আপনার নিজের ভাই, ছেলে বা আত্মীয় যদি ওই হামলায় মারা যেত, তাহলে বোঝা যেত যে মুখ দিয়ে ভাল কথা কত বেরয়।“
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন