বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির আদেশ বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর নিজামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। তবে শেষ পর্যন্ত সেটি করা সম্ভব হয়েছে।
নিজামীর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন আদালতে যেসব সাক্ষ্য প্রমাণ করা হয়েছে সেখানে পাকিস্তানী আর্মিকে মূল হোতা হিসেবে বর্ণণা করা হয়েছে। সেখানে মতিউর রহমান নিজামীকে সহযোগি হিসেবে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, "আমরা বলেছিলাম মূল অপরাধী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১৯৫জনকে ক্ষমা করে দেয়ার পর তো মতিউর রহামন নিজামীসহ সহযোগীদের মৃত্যুদণ্ড হতে পারেনা"।
মি. নিজামীকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে তার দল জামায়াতে ইসলামী।
দলটির ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদ ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল ডা: শফিকুর রহমান ই-মেইলে পাঠানো এক যুক্ত বিবৃতিতে হরতাল ঘোষণার কথা জানিয়েছেন।
হত্যা,গণহত্যার অভিযোগের পাশাপাশি বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতা মতিউর রহমান নিজামীকে ২০১৪ সালে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছিলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেছিলো যে তার বিরুদ্ধে আনা ১৬টি অভিযোগের মধ্যে আটটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
এর মধ্যে চারটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড এবং অপর চারটি অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছিলো।
তবে আপিল বিভাগ তিনটি অভিযোগে মি. নিজামীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে।
এর আগে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরেই আপিল করেছিলেন মি. নিজামী।
পরে আপিল বিভাগের এক শুনানিতে বয়স ও অসুস্থতা বিবেচনা করে তার সাজা কমানোর আবেদন করেন তার আইনজীবীরা।
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি বেঞ্চে গত মাসেই মি. নিজামীর আপিল আবেদনের শুনানি ও যুক্তি খণ্ডন শেষ হয়েছিলো।
আপিল শুনানিতে মি. নিজামীর আইনজীবীদের বক্তব্য ছিল যে রাষ্ট্রপক্ষ পর্যাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করতে পারেননি।
তাদের দাবি ছিল মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে এসে বুদ্ধিজীবী হত্যার সময় জামায়াত নেতা নিজামী জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংগঠন বা আল-বদর বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেননা।
তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলেছিলেন বুদ্ধিজীবী হত্যার সময় মি. নিজামীর হাতেই ছিল আল-বদর বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ।
তাদের মূল বক্তব্য ছিল হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকা কিংবা উস্কানি দেয়া দুটো একই ধরনের অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে মি. নিজামীকে ২০১০ সালের ২৯শে জুন আটক করা হয়।
এর দু’বছর পর তার বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন