শুক্রবার, ৮ জানুয়ারী, ২০১৬

এটা তো নিশ্চিতভাবে স্বৈরশাসন: জিএম কাদের

 

Image caption২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের আগে ও পরে বাংলাদেশে ব্যাপক সহিংসতা ঘটে
(বিবিসি বাংলার টিভি অনুষ্ঠান ‘বিবিসি প্রবাহে’ আজ দেখবেন ৫ই জানুয়ারি নির্বাচন-পরবর্তী বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং বিরোধীদল বিহীন সরকার ও রাজনীতি নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন। এই টিভি প্রতিবেদন এবং এ নিয়ে আলোচনা দেখতে চোখ রাখুন আজ রাত ৯:৩৫ মিনিটে চ্যানেল আই’তে।)
বাংলাদেশে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে কার্যত বিরোধীদল বিহীন একটি সংসদ বাংলাদেশে বিরাজ করছে বলে বিরোধী রাজনৈতিকরা দাবি করেছেন। বিরোধী রাজনৈতিক মহলে সরকারকে অগণতান্ত্রিক হিসেবেও আখ্যায়িত করা হচ্ছে। তাহলে বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ কী?
বাংলাদেশে গণতন্ত্র এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ''১৫৪ জন প্রার্থীকে তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করেছে। আওয়ামী লীগের মতো একটি রাজনৈতিক দল এখন জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তাকে এখন যে সমস্ত পন্থা নিতে হচ্ছে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এই পন্থাগুলো কিন্তু একটি গণতান্ত্রিক দলের পন্থা না, যেমন জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকা, নির্বাচনকে ম্যানিউপুলেট করা।''
Image captionবিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
তবে তার সঙ্গে একমত নন আওয়ামী লীগের নেতারা।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, ''গণতন্ত্র কিভাবে থাকবে? ব্যালট হয় ভোট হয়, পৌরসভা নির্বাচন দেখেন বিএনপির কর্মীরা যদি মাঠে থাকতে না পারে। তাদের তো মনোবলটাই নাই। যে কোনো রাজনৈতিক দল যদি আন্দোলনে পরাজিত হয়, সে সবকিছুতে পরাজিত হয়।''
''আমরা `৭৯ সালে জিয়াউর রহমানের অধীনে ইলেকশন করেছিলাম। জানতাম আমরা ক্ষমতায় আসতে পারবো না। মাত্র ৩৯টি আসনে আমরা বিজয়ী হয়েছি। সেদিন যদি আমরা ইলেকশন না করতাম, `৮৬তে যদি আমরা ইলেকশন না করতাম, `৯১তে যদি আমরা ইলেকশন না করতাম তাহলে `৯৬তে ২১ বছর পর আমরা ক্ষমতায় আসতে পারতাম না।''
Image captionআওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ
দুই নেতার বক্তব্যেই বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি রাজনৈতিক অবস্থানের বিষয়টি উঠে আসে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মতে এ অবস্থার কারণে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তার ভাষায়, ``শুধু বিএনপি অ্যাফেকটেড না সব রাজনৈতিক দল অ্যাফেকটেড হয়েছে। সিভিল সোসাইটি ইজ অলসো অ্যাফেকটেড। কেউ কোনো কথা বলতে পারছে না। এখানে একটা সর্ট অফ ফ্যাসিজম চলছে।``
অন্যদিকে, তোফায়েল আহমেদ জানান, যা কিছু হচ্ছে 'সংবিধান অনুযায়ী হচ্ছে।`
তিনি বলেন, ``বাংলাদেশে দুটো প্রধান পার্টি। একটা আওয়ামী লীগ আর একটা বিএনপি। এখন আপনি যদি নির্বাচন না করেন, তাইলে নির্বাচনটা বন্ধ করে দিয়ে আমরা কি সামরিক শাসন আনবো?''
Image captionজাতীয় পার্টির নেতা জিএম কাদের
বিএনপির জাতীয় নির্বাচন বর্জনের কারণে বাংলাদেশের সংসদ এখন কার্যত: বিরোধীদল বিহীন বলে মনে করেন খোদ বিরোধী দলের নেতারাই।
জাতীয় পার্টির নেতা জিএম কাদের বলেন, ``যদিও গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে বিরোধীদলের নামকরণ করা হয়েছে, এ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি সরকারবিরোধী কোনো প্রস্তাবে না ভোট দেয়নি। এটা একটা একদলীয় সংসদ বলা যায়।``
জাতীয় পার্টি চাপের মুখে এ অবস্থানে এসেছে উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, ''এই সরকার তার গণতান্ত্রিক চরিত্র হারিয়েছে।''
তার ভাষায়: ''এখন বর্তমানে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই বলেই আমি মনে করি। একটার পর একটা নির্বাচন খারাপ হচ্ছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যথেষ্ট সংকুচিত করা হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। এটাতো নিশ্চিতভাবে স্বৈরশাসন।''
Image captionগণফোরাম সভাপতি ডক্টর কামাল হোসেন
সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কথা বলে ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের আগে সরকার মধ্যবর্তী নির্বাচন দেয়ার কথা বলেছিল। যদিও এখন দলটি বলছে ২০১৯ সালের আগে জাতীয় নির্বাচন হবে না।
এ প্রসঙ্গে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, ''সরকার বলেছিল এটা। তারও অপেক্ষায় মানুষ আছে। ১৬ কোটি মানুষ আমাদের, কিন্তু মৌলিক বিষয়ে ঐক্যমত্য আছে। এখানে কেউ অন্য কিছু চায় না, কার্যকর গণতন্ত্র চায়।''
ড. হোসেন বলেন পাকিস্তান আমল কিংবা বাংলাদেশ আমল যখনই বিতর্কিত নির্বাচন হয়েছে তখনই কিন্তু সমস্যাগুলো সৃষ্টি হয়েছে।
আলাপ আলোচনার মাধ্যমেই সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
``আজকে একটা কথা বলা হচ্ছে যে উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই উন্নয়ণ গুরুত্বপূর্ণ। তবে সংবিধানের মূলনীতি বাদ দিয়ে তো উন্নয়ন হবে না। সংবিধানের মূলনীতির মধ্যে আছে গণতন্ত্র।``

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন