সোমবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৫

'যেমন গণতন্ত্রের প্রত্যাশা ছিল, তা পূরণ হয় নি'

 
           
বাংলাদেশে ১৯৯০-এ যে গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে সেনাশাসনের যুগের অবসান হয়েছিল - তার ২৫তম বার্ষিকীতে অনেকেই বলছেন যে গণতন্ত্রের প্রত্যাশা তারা করেছিলেন তা পূর্ণ হয় নি।
'যা চেয়েছিলাম তা হয় নি', 'অনেকগুলো নির্বাচন হয়েছে, কিন্তু যাদের দেখছি তারা একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ' - এমনটাই বলছেন অনেকে।
বাংলাদেশে এরশাদ সরকারের পতনের ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে আজ। গণআন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর অবসান ঘটে জেনারেল এইচ এম এরশাদের শাসন।
বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাঁক বলে মনে করা হয় এই আন্দোলনকে। কিন্তু এই ২৫ বছরে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ কতটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? সাধারণ মানুষ কি মনে করছে?
১৯৯০ সালে জেনারেল এরশাদ সরকারের পতনটি ছিল একটি দীর্ঘ রাজনৈতিক আন্দোলনের ফসল। যে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল বাংলাদেশের তৎকালীন এবং বর্তমান প্রায় সকল বড় রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ।
সেই আন্দোলনে সফলতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করেছিল একটি নতুন সময়ে, যেখানে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং জনগণের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হবার আশা ছিল সবার মধ্যে। কিন্তু সেই আশা কতটা পূরণ হয়েছে?
“আমরা যেটা চেয়েছিলাম সেটা হয়নি। যেই শ্রেণীর হাতে ক্ষমতা, তারা একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং জনগণের মঙ্গলার্থে একটি শাসনব্যবস্থা মনেপ্রাণে চায়নি।” বলেন মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ, ৯০ এর আন্দোলনের সময় তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
তার মতো ঢাকায় সাধারণ মানুষদের অনেকেই রাজনীতি নিয়ে সন্তুষ্ট নন।
“আমরা যাদের দেখছি তারা মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। এটাতেই অভ্যস্ত হয়ে গেছি আমরা।” বলেন আরেকজন পথচারী।
কিন্তু এই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার গুরুদায়িত্ব যাদের হাতে ছিল, সেই রাজনীতিবিদরা এই হতাশার দায়ভার কতটা নিচ্ছেন?
আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুহ উল আলম লেনিন বলছেন, সামরিক এবং স্বৈরাচার শাসন থেকে উত্তরণ এবং সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা ৯০এর গণআন্দোলনের বড় অর্জন।কিন্তু তার মতে, আরো অনেক কিছু করার আছে এবং এজন্যে সময়ের প্রয়োজন।
“এই অর্জনের পথে বাধা আছে। সাম্প্রদায়িকতা আছে, জঙ্গিবাদ আছে, মৌলবাদ আছে, সুপ্তভাবে হলেও অসহিঞ্চুতা আছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ইংল্যান্ডের যেমন ২০০ বছর সময় লেগেছিল, আমাদেরও কিছুটা লাগবে। এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই।” বলেন মি. লেনিন।
বাংলাদেশের অপর প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিও মনে করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে প্রতিকূলতা রয়েছে। কিন্তু এই পথে একটি বড় বাধা পড়েছে বলে মনে করছেন বিএনপির সিনিয়র নেতা ড. ওসমান ফারুক।
তিনি বলছেন, ব্যর্থতা রাজনীতিবিদদের রয়েছে, তবে এর বাইরেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বাধা আসছে এবং সেটিকেই তারা বড় করে দেখছেন।
“শত প্রতিকূলতা স্বত্ত্বেও ৯০ সালের পর তিনটি নির্বাচন হয়েছে এবং তিনটি সরকার সুষ্ঠুভাবে কাজ করেছে। এ ধারা ব্যাহত হয়েছে যখন ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের নেতৃত্বে আরেকটি স্বৈরাচারী সরকার এলো। যদি তারা এই ধারা ব্যাহত না করতো, তাহলে হয়তো এতদিনে আমরা ট্রায়াল এন্ড এররের মাধ্যমে বহুদলীয় গণতন্ত্র আরো সুসংহত করতে পারতাম।” বলেন মি. ফারুক।
তবে যেই সরকারকে হটিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, সেই এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিও এখন বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তাদের বক্তব্য হল, গণতন্ত্র রক্ষায় তারা সেসময় ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছিলেন। দলটির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু বলছেন, কিন্তু এরপর বড় রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় উপযুক্ত ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি বলেন, “২৫ বছর ধরে দুটি দল পালাবদল করে মিউজিক্যাল চেয়ারের মতো সরকারে ছিল। তাদের দায়িত্বই সবচেয়ে বেশি ছিল।”
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতিষ্ঠা নিয়ে বাংলাদেশে তর্ক-বিতর্ক আগেও ছিল এবং এখনো রয়েছে। নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা নিয়ে অসন্তোষও রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
এই বিতর্ক কবে শেষ হবে সেটি হয়তো কেউ বলতে পারছেন না, তবে রাজনীতিবিদরাও মনে করেন সহসাই বাংলাদেশে এই বিতর্ক শেষ হচ্ছে
না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন