শনিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৫

জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে বয়ান দিতে ইমামদের পরামর্শ

 
    bangladesh mosque                           
বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতার হুমকি মোকাবেলায় মসজিদের ইমামদের জঙ্গীবাদ-বিরোধী বয়ান দিতে পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ।
একজন কর্মকর্তা বলছেন, এ ক্ষেত্রে মসজিদ-মাদ্রাসা ও ইমামদের যুক্ত করাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে দেশটির নিরাপত্তা সংস্থাগুলো।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মনে করছে দেশে জঙ্গি কার্যক্রমের হুমকি মোকাবেলায় এই মসজিদগুলো ভূমিকা রাখতে পারে।
সম্প্রতি পুলিশ প্রধান এ কে এম শহিদুল হক মসজিদের ইমামদের সাথে এ নিয়ে একটি বৈঠকও করেছেন। ইসলামের ধর্মের নাম ব্যবহার করে কেউ যাতে জঙ্গিবাদের দিকে আকৃষ্ট না হয়, সেজন্যই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানালেন পুলিশ প্রধান।
তিনি বলেন, “ইসলামের খন্ডিত ব্যাখ্যা দিয়ে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এর বিপরীতে সঠিক ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে হবে, সেজন্য জুম্মার নামাজের সময় বা নানা ধরনের ইসলামিক জলসায় জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বয়ান দিতে আহবান জানিয়েছি।”
প্রশ্ন হলো, এ কৌশল কতটা কাজে দেবে?
বাংলাদেশে অনেকের কাছেই ঢাকা মসজিদের শহর হিসেবে পরিচিত। প্রতিটি পাড়া মহল্লায অসংখ্য মসজিদ। সম্প্রতি ঢাকাসহ পুরো দেশের মসজিদগুলো আবারো আলোচনায় এসেছে।
মানবাধিকার কর্মীদের হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশে গত পাঁচ বছরে বছরে গড়ে একশো জন ব্যক্তিকে জঙ্গি কর্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ততার অবিযোগে আটক করা হয়েছে। যাদের অনেকেই আবার জামিনে বেরিয়ে এসেছেন।
নতুন নতুন জঙ্গি সংগঠনের নামও শোনা যাচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থা সম্প্রতি মুজাহিদ অব বাংলাদেশ নামের একটি নতুন জঙ্গি সংগঠনের কথা জানিয়েছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষক শাহেদুল আনাম খান বলছেন জঙ্গিবাদের বিপদ সম্পর্কে সরকার অনুধাবন করতে পেরেছে বলে তার মনে হয়।
সেজন্য মসজিদের ইমামদের সম্পৃক্ত করার বিষয়টিকে তিনি ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন। মি. খান বলেন, যে ধরনের সন্ত্রাসবাদের মুখোমুখি আমরা হচ্ছি, সেটাকে মোকাবেলা করতে হলে দু’ভাবে করতে হবে। মতাদর্শিকভাবে মোকাবেলা করাটা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এই মুহুর্তে বাংলাদেশে ৪০টির মতো জঙ্গি সংগঠন রয়েছে। তবে সবচেয়ে সক্রিয় এবং আলোচিত জঙ্গি সংগঠনগুলোর মধ্যে আনসারউল্লাহ বাংলা টিম এবং জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ। অনেকে আবার পুরনো নাম বাদ দিয়ে নতুন নাম ধারণ করছে।
ব্লগার হত্যার জন্য আনসারউল্লাহ বাংলা টিম এবং অন্যান্য নাশকতামূলক কর্মকান্ডের জন্য জামাতুল মুজাহিদিনকে সন্দেহ করা হচ্ছে। সরকার মনে করে জঙ্গি সংগঠনগুলো যে নামেই থাকুক না কেন তাদের পেছনে রাজনৈতিক মদদ রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেন জঙ্গিবাদের বিষয়টিকে শুধু মসজিদ মাদ্রাসায় নয় বয়ানের মাধ্যমেই নয়, সরকার এটিকে রাজনৈতিকভাবেও মোকাবেলা করছে ।
মি: ইমাম বলেন, এই জঙ্গিবাদ মোকবেলার জন্য আমারা ইমামদের বহু টাকা খরচে করে ইমামদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করেছি। তাছাড়া রাজনৈতিক দল হিসেবে আমারা নানা ধরনের কর্মসুচী করছি ।”
তবে মসজিদ বা মাদ্রাসায় জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রচারনার যে কৌশল সরকার নিয়েছে সেটি কতটা কাজে দেবে সরকারের এই উদ্যোগ?
মোহাম্মদপুরের একটি মসজিদের ইমাম মো: ইসমাইল হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন. "আমার প্রশ্ন হইল, মসজিদে যারা আসে তারা তো ভালো মনুষ। যারা জঙ্গি কাজ করে তারা তো মসজিদে আসেনা।"
বাংলাদেশে জঙ্গি কার্যক্রমের অভিযোগে বিভিন্ন সময় মাদ্রাসার ছাত্রদের যেমন আটক করা হয়েছে, তেমনি যারা মাদ্রাসায় পড়াশুনা করেননি সে রকম অনেক ব্যক্তিকেও আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত।
এমন অবস্থায় শুধু মসজিদ বা মাদ্রাসা ভিত্তিক প্রচারনা কতটা কাজে আসবে সেটি নিয়েও অনেকের প্রশ্ন আছে।
পুলিশ প্রধান এ কে এম শহিদুল হকও সে কথা মানছেন। তিনি বলছেন মাদ্রাসার বাইরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেউ কেউ জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকছে বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে। সেদিকে তারা নজর রাখছেন।
সরকারের দিক থেকে জঙ্গি কার্যক্রমের বিরুদ্ধে মসজিদের ইমামদের ব্যবহারের কথা বলা হলেও এসব কথাবার্তা বেশিরভাগ ঢাকা শহর-কেন্দ্রিক। গ্রামাঞ্চলের বহু মসজিদ-মাদ্রাসায় সরকারী উদ্যোগ সম্পর্কে তেমন কোন সচেতনতা নেই।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক শাহেদুল আনাম খান বলছেন, সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে নানা চিন্তা থাকলেও মাঠ পর্যায়ে সিটি কতটা বাস্তবায়ন হচ্ছে সেটিও মূল্যায়ন করতে হবে।
মি: আনাম বলেন , গ্রামে-গঞ্জে এনিয়ে সচেতনতা তৈরী করতে হবে। কিন্তু সেটা কতটা হচ্ছে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সম্প্রতি ইসলামী চিন্তাবিদদের সাথে পুলিশ প্রধান যে বেঠক করেছেন সেখানে স্যাটেলাইট চ্যানেল পিস টিভি’র বাংলাদেশে সম্প্রচার বন্ধ করার দাবী জানিয়েছেন কেউ কেউ।
তাদের সেখানে ড: জাকির নায়েক যে ধরনের বক্তব্য দেন, সেটি অনেক সময় পরোক্ষভাবে জঙ্গিবাদ প্রতি উৎসাহিত করতে পারে বলে তাদের ধারণা।
এনিয়ে ইসলামী চিন্তাবিদদের মধ্যেও মতভেদ রয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে মসজিদের ইমাম কিংবা মাদ্রাসার শিক্ষকদের মধ্যেও বিভিন্ন ধারা আছে। সেজন্য সমন্বিত উপায়ে আদর্শিকভাবে জঙ্গিবাদ মেকাবলা করা সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম বলছেন শিক্ষানীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে সরকার এ বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করেছে । আমরা কর্মমুখী শিক্ষার দিকে জোর দিয়েছি। মাদ্রাসার ছাত্ররা যাতে কিছু করে খেতে পারে।”
কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন বাংলাদেশ যে ধরনের জঙ্গিবাদের হুমকি মোকাবেলা করছে সেটি এখন আর আগের মতো নেই।
অনলাইন ভিত্তিক বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নতুন একটি চ্যালেঞ্জ তৈরী করেছে। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের অস্তিত্ব নিয়ে এখন কারো মনে কোন সংশয় নেই।
তবে পৃথিবীজুড়ে জঙ্গিবাদের যে ধারা তৈরী হয়েছে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য আরো বেশি চ্যালেঞ্জ তৈরী করবে বলে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন