বাংলাদেশে ফেসবুকে 'মজা লস?' নামে জনপ্রিয় একটি গ্রুপের অ্যাডমিনকে গ্রেফতারের পর দেশটিতে রাজনৈতিক বিষয়ে ব্যঙ্গবিদ্রূপের সীমা কোথায় হওয়া উচিত তা নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে।
ফেসবুকের ওই গ্রুপের একজন অ্যাডমিনকে সরকার গতকাল আটক করে রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণার অভিযোগে।কিন্তু এ ঘটনার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় এরকম সাইটগুলোতে যারা যান, তারা অনেকেই আশংকা করছেন, বাংলাদেশে নির্দোষ ব্যঙ্গবিদ্রূপের স্বাধীনতাও সরকার হরণ করতে চলেছে।
তবে প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা বলেছেন, ব্যঙ্গবিদ্রূপ অনেকে ক্ষেত্রেই শালীনতার মাত্রা ছাড়িয়ে রাজনৈতিক প্রচারণায় পরিণত হচ্ছে, সেটা গ্রহণযোগ্য নয়।
ফেসবুকের 'মজা লস?' নামে ফেসবুকের এই পেজটিতে হাস্যরস্যাত্বক ব্যঙ্গবিদ্রূপ করা হয় স্ট্যাটাস, ছবি ও ভিডিওর মাধ্যমে। সমসাময়িক নানা বিষয় ছাড়াও রাজনৈতিক ইস্যু এবং নেতানেত্রীদের ব্যঙ্গ করেও পোষ্ট ও ছবি দেয়া হয় সেখানে।
এধরণের বেশ কয়েকটি পেজ ফেসবুকে দেখা আয়। আসিফ ইন্তাজ রবি এসব পেজ এবং ওয়েবসাইটগুলো নিয়মিত পাঠক।
আসিফ ইন্তাজ বলছিলেন, "দিন শেষে তার কাছে এই পেজগুলো পড়াটা নির্ভেজাল বিনোদনের মত। বিশ্বের নানা দেশে - সেসব দেশের সমসাময়িক বিষয় নিয়ে হাস্যরসাত্মক অনুষ্ঠান, ও পত্রিকা বের হয়ে থাকে। মাঝে মাঝে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের অবতারণা করা হলেও প্রকাশ ভঙ্গি মজাদার হওয়ায় এক অর্থে সহজ ভাবে নেয়া হয় এসব পোষ্টকে।"
তাহলে বাংলাদেশে এ ধরণের ব্যঙ্গবিদ্রূপের ক্ষেত্রে আটকের মত ঘটনা কেন হচ্ছে?
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলছিলেন, ব্যঙ্গ করার নামে যদি শালীনতার বাইরে চলে যায় সেক্ষেত্রে সেটি উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা বলা হয়। জনগণের নিরাপত্তার খাতিরে সরকার এই পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে তিনি জানান।
ফেসবুক বন্ধ করা নিয়ে সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে হাস্যরস্যাত্বক পোষ্ট দেয় এই মজা লস পেজটি। মজা লসের এডমিনকে আটক করা হয় রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে ।
বাংলাদেশে চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী - যিনি রনবী নামে খ্যাত এবং রাজনৈতিক বিভিন্ন ইস্যুতে কার্টুন আঁকেন - বলছিলেন, ব্যঙ্গ কার্টুন করার ক্ষেত্রে তাকে সেল্ফ-সেন্সরশিপ করতে হয়। তিনি বলছিলেন, বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থা ও সহনশীলতার বিষয়টি মাথায় রাখতে হয়।
রনবী মনে করেন ব্যঙ্গ করার ক্ষেত্রে যদি বিষয়টি সরাসরি বক্তব্য হয় তাহলে তা ব্যঙ্গের পর্যায়ে থাকে না। এদিকে ফান পেজের যারা নিয়মিত ফলো করেন বা পরেন তারা, 'মজা লস?' পেজের এডমিনকে আটক করারর ঘটনায় নিজের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
'মজা লস?' ছাড়াও 'কইয়া দিমু টেলিভিশন', 'রেডিও মুন্না', 'মতিকন্ঠ' নামে ওয়েবসাইট ও পেজ রয়েছে যেখানে সমসাময়িক ইস্যু ছাড়াও রাজনৈতিক বিষয়ে ব্যঙ্গবিদ্রূপ করা হয়।
তাদের লাইকের সংখ্যা প্রায় সাত লাখের কাছাকাছি। আর দৈনিক মতিকন্ঠের ফেসবুক পাতায় প্রায় দুই লক্ষ লাইক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন