বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৫

সরকারি বাধার মুখে চাকমা চলচ্চিত্র 'মর থেঙ্গারি'?

 
                     বাংলাদেশে বিলুপ্তপ্রায় চাকমা ভাষায় নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র 'মর থেঙ্গারি' বা 'আমার বাইসাইকেল'      
           
বাংলাদেশে চাকমা ভাষায় তৈরি প্রথম চলচ্চিত্রের পরিচালক অভিযোগ করছেন যে চলচ্চিত্রটি অবাণিজ্যিকভাবে প্রদর্শন করতে গিয়ে তিনি সরকারী বাধার মুখে পড়েছেন। ছবিটিকে সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র দেবার বিষয়টি ছয়মাস ধরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ তুলেছেন।
চলচ্চিত্রটিতে সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয়বস্তু নিয়ে আপত্তি তোলা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করছেন।
তবে বাংলাদেশ সেন্সর বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, অং রাখাইন নামের ওই পরিচালক তার ‘মর থেঙ্গারি’ বা 'আমার বাইসাইকেল' শিরোনামের চলচ্চিত্রটি কোনোরকম অনুমতি ছাড়াই বাংলাদেশে প্রদর্শন করেছেন বলে অভিযোগ আছে এবং এ নিয়ে তদন্ত হবার কারণেই ছবিটিকে সেন্সরের জন্য সূচী ভুক্ত করতে দেরী হয়েছে।
অং রাখাইন বাংলাদেশের একটি সংখ্যালঘু রাখাইন গোষ্ঠীর সদস্য। 'মর থেঙ্গারি' বা 'আমার বাইসাইকেল' নামের এই চাকমা ভাষার চলচ্চিত্রটি নিয়ে তিনি কাজ করছেন গত দশ বছর ধরে।
এক পর্যায়ে ২০১২ সালে তিনি ছবির শুটিং শুরু করেন এবং ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ঢাকার একটি চলচ্চিত্র উৎসবে প্রথমবারের এটি প্রদর্শন করেন।
পরবর্তীতে ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও ফিল্ম ক্লাবগুলোতে ঘরোয়া ভাবে ছবিটি প্রদর্শন করছিলেন তিনি।
                                     'মর থেঙ্গারি' বা 'আমার বাইসাইকেল' চলচ্চিত্রের পরিচালকের অভিযোগ, ছবিটির সেন্সর ছাড়পত্র দিতে তাকে ছয়মাস ধরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে                
অং রাখাইন বলছিলেন, এরই এক পর্যায়ে তিনি সেন্সর ছাড়াই কেন চলচ্চিত্রটি প্রদর্শন করছেন জানতে চেয়ে সরকার থেকে তাকে চিঠি পাঠানো হয়।
কিন্তু মিস্টার রাখাইন বলছেন, গত জুন মাসে সেন্সর ছাড়পত্রের জন্য চলচ্চিত্রটি জমা দেয়ার পর জুলাই মাসের শেষভাগে সেন্সর প্রদর্শনীর জন্য সূচীভূক্ত করা হয় এবং এক পর্যায়ে কোনও কারণ না দেখিয়েই তা স্থগিত করা হয়।
সেই থেকে তিনি এখন পর্যন্ত দ্বারে দ্বারে ঘুরেও তার চলচ্চিত্রের সেন্সর ছাড়পত্রের ব্যাপারে অগ্রগতি জানতে পারেননি।
অং রাখাইনের বক্তব্য অনুযায়ী, পার্বত্য অঞ্চলে চাকমা জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা নিয়েই তার মর থেঙ্গারি ছায়াছবির বিষয়বস্তু, একটি বাইসাইকেলকে কেন্দ্র করে যার কাহিনী আবর্তিত হয়েছে, এক পর্যায়ে ছবিটিতে একটি নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতীকী উপস্থিতি দেখানো হয়, মিস্টার রাখাইন মনে করেন এর ফলেই হয়তো তার সিনেমার ব্যাপারে আপত্তি এসেছে এবং তাকে ছাড়পত্র দিতে গড়িমসি করা হচ্ছে।
এ নিয়ে সেন্সর বোর্ড তার কাছে যে চিঠিটি পাঠিয়েছে তার একটি কপি বিবিসি বাংলার হাতেও রয়েছে, চিঠিটি মূলত একটি কারণ দর্শাও নোটিশ, একটি অংশে লেখা রয়েছে, চলচ্চিত্রটিতে বাংলাদেশ সরকার এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সুনাম ক্ষুন্নকারী দৃশ্য ও সংলাপ উপস্থাপন করা হয়েছে, যা পার্বত্য চট্টগ্রামে, সেনাবাহিনী বিরোধী প্রোপাগান্ডার অংশ হিসেবে প্রচার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান জাকির হোসেইন বলছেন,মর থেঙ্গারি ছবিটির সেন্সরের জন্য সূচীভূক্ত হবার অপেক্ষায় আছে, অচিরেই এটির সেন্সর করা হবে।
সেন্সর বোর্ড বলছে, ছবিটি সেন্সরের জন্য সূচীভূক্ত হবার অপেক্ষায় আছে                
জাকির হোসেইন বলছেন, একটি অভিযোগ রয়েছে যে, সেন্সর বিহীন অবস্থায় জাতীয় জাদুঘরে ছবিটির প্রদর্শনী করা হয়েছে। সেই অভিযোগ তদন্ত হয়েছে এবং সেখানে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। ছবিটির ভেতরে সামরিক কোন বিষয় নিয়ে আপত্তির বিষয়ে পরিচালককে চিঠি দেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখন সেন্সর হবে, তখন সেন্সর বোর্ডের সদস্যরাই দেখবেন, চলচ্চিত্রটির ভেতর কি আছে না আছে।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, বাংলাদেশে বিলুপ্ত প্রায় চাকমা ভাষায় এই 'মর থেঙ্গারি' প্রথম কোনও চলচ্চিত্র। প্রায় ত্রিশ লাখ টাকায় ব্যয়ে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন মিস্টার রাখাইন।
৬৪ মিনিট ব্যাপ্তিকালের এই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন চাকমা সম্প্রদায়ের সদস্যরা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন