ভারতে বিরোধী কংগ্রেস দলের নেতা রাহুল গান্ধী একজন ব্রিটিশ নাগরিক, এই অভিযোগে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখে তার সংসদের সদস্য পদ বাতিল করার দাবি তুলেছেন বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী।
নিজের বক্তব্যের সমর্থনে তিনি দাখিল করেছেন ব্রিটেনের কোম্পানি আইন অনুযায়ী দাখিল করা রাহুল গান্ধীর রিটার্ন, যাতে মি গান্ধীকে ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে দেওয়া হয়েছে লন্ডনের একটি ঠিকানাও।রাহুল গান্ধীর দল অবশ্য দাবি করেছে দশ-বারো বছরের পুরনো ওই রিটার্ন পেশ করার সময় কোনও ভুল হয়ে থাকতে পারে।
ভারতে কংগ্রেস দলের ৪৫ বছর বয়সী নেতা রাহুল গান্ধীকে নিয়ে বিতর্ক অবশ্য নতুন কোনও ঘটনা নয়।
এ বছরের গোড়াতেই তার লম্বা সময় ধরে দেশের বাইরে আচমকা উধাও হয়ে যাওয়া নিয়ে সমালোচনা কম হয়নি – মি গান্ধীর সেই অন্তর্ধান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তার দলকে হিমশিম খেতে হয়েছে।
পাশাপাশি তার বক্তৃতায় নানা ভুলভ্রান্তিকেও ব্যাখ্যা করা হয়েছে তার রাজনৈতিক অপরিপক্বতা হিসেবে।
যেমন রাহুল কখনও বলেছেন গুজরাটে প্রতি একজন বাচ্চার মধ্যে দুজন অপুষ্টিতে ভোগেন – কিংবা মেয়েরা ধর্ষণের শিকার বলতে গিয়ে বলে ফেলেছেন দুর্নীতির শিকার।
কিন্তু এখন তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগটা উঠেছে সেটা অনেক বেশি গুরুতর – আর সেটা হল তিনি না কি গোপনে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব নিয়েছেন।
ভারতীয় সংবিধানের নয়-নম্বর আর্টিকল অনুযায়ী দ্বৈত নাগরিকত্ব নেওয়াটা পুরোপুরি বেআইনি – অথচ ব্রিটেনে ব্যাকঅপস লিমিটেড নামে ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি কোম্পানির রিটার্ন দাখিল করতে গিয়ে সংস্থার ডিরেক্টর রাহুল গান্ধী নিজেকে ব্রিটিশ নাগরিক বলেই পরিচয় দিয়েছেন।
সে দেশের কোম্পানি রেজিস্ট্রারের দফতর থেকে সংগৃহীত নথি পেশ করে এই অভিযোগ তুলেছেন বিজেপির সুব্রহ্মণ্যম স্বামী – গান্ধী পরিবারের বিদেশি যোগসাজশ নিয়ে যিনি আক্রমণ শানিয়ে যাচ্ছেন বহু বছর ধরে।
মি স্বামী বলেছেন, ‘এই রিটার্নে সবচেয়ে বড় অপরাধটা হল তিনি নিজের নাগরিকত্ব ব্রিটিশ বলে জানিয়েছেন। আর সেটা একবার নয়, একাধিকবার। আমি তাই প্রধানমন্ত্রী ও লোকসভার স্পিকারকে দিনকয়েক আগেই চিঠি লিখে জানিয়েছি, এটা সত্যি হলে তার পার্লামেন্টের সদস্যপদ যেন খারিজ করা হয়, আর আইন অনুযায়ী তিনি ভারতের নাগরিকও আর থাকতে পারেন না।’
মুখ খোলেননি রাহুল
মি স্বামীর এই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ সামনে আসার পরই কংগ্রেসকে রক্ষণাত্মক মনে হয়েছে।
যদিও দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে বিহারে শোচনীয় পরাজয়ের হতাশা থেকেই বিজেপি এই ধরনের নোংরা আক্রমণে নেমেছে, কিন্তু মি স্বামীর পেশ করা নথিকে তারা জাল বলে উড়িয়ে দিতে পারেনি।
বরং দলের মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা বলেছেন, নাগরিকত্বের কলামে ব্রিটিশ লেখা থাকলে সেটা টাইপের ভুলে হয়ে থাকতে পারে।
মি সিং আরও যোগ করেন, ‘রাহুল গান্ধী জন্ম থেকেই ভারতীয় নাগরিক আছেন ও চিরকালই থাকবেন। আর এই ভুলটা কোনও অপরাধ নয় – আর এর প্রতি যেহেতু এখন আমাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে তাই এটা এখন শুধরে নেওয়াই যাবে।’
রাহুল গান্ধী নিজে এখনও এই বিতর্ক নিয়ে মুখ খোলেননি – তিনি এই মুহুর্তে কোথায় সেটাও অজানা, এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে তাঁর টিমও এর কোনও জবাব দেয়নি।
জন্মসূত্রে ইতালিয়ান সোনিয়া গান্ধীকে যেমন রাজনৈতিক জীবনে আগাগোড়া বিদেশিনী বলে আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে। এখন এই ব্রিটিশ নাগরিকত্বের অভিযোগ তার ছেলেকে কতটা বিব্রত করতে পারে সেটাও দেখার বিষয় হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন