বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দু’জন বিরোধী নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার সমালোচনা করে পাকিস্তানের বিবৃতির প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
ঢাকায় পাকিস্তানি হাইকমিশনারকে তলব করে এই প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।একাত্তরে মানবতা-বিরোধী অপরাধের দায়ে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর করার পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ’ প্রকাশ করে একটি বিবৃতি দেয়।
পরে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও প্রায় একই ধরণের একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তানের বিবৃতির পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকায় পাকিস্তানি হাইকমিশনার সুজা আলমকে ডেকে পাঠালে আজ সোমবার তিনি বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব মিজানুর রহমানের সাথে দেখা করেন।
এই বৈঠকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে পাকিস্তানি হাইকমিশনারকে বলা হয়েছে, “যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এই বিচার নিয়ে মন্তব্য করা নাক গলানোর শামিল যা দুঃখজনক।”
তবে বৈঠকের পর পাকিস্তান বলছে, তারা তাদের অবস্থানে অনড় রয়েছে।
ঢাকায় পাকিস্তানি কর্মকর্তারা বিবিসিকে বলেছেন, ইসলামাবাদ থেকে যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে তারা তাকে সমর্থন করছেন। তবে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিবাদকে তারা ইসলামাবাদের কাছে পাঠিয়ে দেবেন।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে রবিবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুদণ্ডের ঘটনা লক্ষ্য করেছি। এই ঘটনায় আমরা শঙ্কিত।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “১৯৭১ সালের ঘটনার ব্যাপারে বাংলাদেশে যে ত্রুটিপূর্ণ বিচার চলছে সেবিষয়ে আমরা আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াও লক্ষ্য করেছি।”
পাকিস্তান সরকার বলছে, “পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ১৯৭৪ সালের ৯ই এপ্রিল যে সমঝোতা হয়েছে সে অনুসারে বাংলাদেশে জাতীয় সমঝোতার প্রয়োজন আছে। এই সমঝোতায় ১৯৭১ সালের ব্যাপারে ভবিষ্যতের দিকে তাকানোর কথা বলা হয়েছে।”
বৈঠকের পর বাংলাদেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, “আমরা আশা করেছিলাম সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পর কোনো রাষ্ট্র এবিষয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করবে না। এজন্যে আমরা কিছুটা হতাশ।”
তারা আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত কাজ করেছেন। তিনি বলেন, আজকের ব্যাখ্যার পর বাংলাদেশ সরকার আশা করছে এবিষয়ে পাকিস্তান সরকারের অবস্থানে পরিবর্তন ঘটবে।
শাহরিয়ার আলম বলেন, “বছর দেড়েক আগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে যে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছিলো সেটি বাংলাদেশ সরকারকে জানানো হয়নি। সেকারণে বাংলাদেশ আশা করেছিলো যে ওখানেই হয়তো বিষয়টির অবসান ঘটেছে। কিন্তু তারপরেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যখন এধরনের বিবৃতি দেওয়া হয় সেটাকে রাষ্ট্রের অবস্থান বলেই ধরে নিতে হবে।”
“যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে শুধু পাকিস্তান নয়, কোনো দেশের কাছ থেকেই নেতিবাচক বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়।”
কিন্তু তুরস্ক সরকারও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে পাকিস্তানের অনুরূপ একটি বিবৃতি দিয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে, “প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা চাওয়ার পরও তাদের ফাঁসি কার্যকর করার ঘটনা এবং মৃত্যুদণ্ড কার্যকর অব্যাহত রাখা উদ্বেগের বিষয়।”
মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে অন্যান্য শাস্তি বিবেচনারও আহবান জানিয়েছে তুরস্ক।
এই বিবৃতির বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।
পাকিস্তানের বিবৃতির পর ‘গণজাগরণ মঞ্চ’ থেকে দেশটির সাথে কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করার যে দাবি উঠেছে সে বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, “এবিষয়ে সরকারের অবস্থান এতো দ্রুত বলা সম্ভব নয়। শুধু একটি ঘটনা থেকে কোনো রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার মাপকাঠি হতে পারে না।”
তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালের চুক্তির বিষয়ে পাকিস্তান বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। ওই সমঝোতায় যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে দেশচ্যুত নাগরিকদেরকে নিজ নিজ দেশে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
“সে অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে ১৯৫ জন বন্দীকে পাকিস্তানের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, এই চুক্তির আগেই বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্যে আইন করা হয়েছিলো।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন