শুক্রবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৫

গরুর মাংস নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড কাশ্মীর বিধানসভায়

   

                 বিধানসভার ভেতরের দৃশ্য                
ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভায় একজন স্বতন্ত্র সদস্য ইঞ্জিনিয়ার রশিদকে সভার ভেতরেই তুমুল মারধর ও হেনস্থা করেছেন রাজ্যে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির বিধায়করা।
তার অপরাধ, তিনি গতকাল শ্রীনগরের এমএলএ হোস্টেলের লনে একটি বিফ পার্টি বা গরুর মাংস পার্টির আয়োজন করেছিলেন।
মুসলিম-প্রধান ওই রাজ্যে বিফ বা গোমাংস নিষিদ্ধ করার আইন বলবৎ করা উচিত কি না, তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে এখন শুনানি চলছে।
এরই মধ্যে বিধায়ককে প্রকাশ্যে হেনস্থার ঘটনা ঘটল – যার জন্য বিজেপি এখনও দু:খ প্রকাশ পর্যন্ত করেনি।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও বিরোধী নেতা দুজনেই অবশ্য এই মারধরের তীব্র নিন্দা করেছেন।
শ্রীনগরের বিধানসভার সদস্য ইঞ্জিনিয়ার রশিদকে মারধরের যে ঘটনা নিয়ে আজ সারা দেশে তোলপাড় পড়ে গেছে, হাজার হাজার মানুষ ইউটিউবে ওই মারধরের ভিডিও দেখে ফেলেছেন – তার সূত্রপাত আসলে বুধবার বিকেলে।
বিফ বা গরুর মাংসের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিবাদে এমএলএ হোস্টেলের লনে সেদিন একটি বিফ পার্টির আয়োজন করেছিলেন বিধায়ক মি রশিদ।
                গরুর মাংসের দোকান                
পার্টিতে বিলি করা হয়েছিল গরুর মাংসের তৈরি শিককাবাব আর বিফ প্যাটি।
মি রশিদ ওই পার্টিতে ঘোষণা করেন, ‘রাজ্য বিধানসভা গোল্লায় যাক - তারা গোমাংস নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে বিল পাস করাক বা না-করাক তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। এই পার্টি থেকে আমি একটাই বার্তা দিতে চাই – আমার ধর্ম আমাকে যে অধিকার দিয়েছে সেখানে আমি বিধানসভা বা আদালতের হুকুম শুনতে রাজি নই!’
এর মাত্র দুদিন আগেই সুপ্রিম কোর্ট জম্মু ও কাশ্মীরে বিফ-নিষেধাজ্ঞার ওপর দুমাসের জন্য স্থগিতাদেশ জারি করেছিল।
এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আনা একটি বিল নিয়ে বিধানসভায় এদিন আলোচনারও কথা ছিল।
তবে আজ অধিবেশন শুরু হতে না হতেই দেখা যায়, বিজেপি-র চার পাঁচজন বিধায়ক ইঞ্জিনিয়ার রশিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন।
গগন ভগত, রাজীব শর্মা, রবিন্দর রায়না-সহ আরও দুয়েকজন বিজেপি এমএলএ একসঙ্গে মিলে তাকে ইচ্ছেমতো কিল-চড়-ঘুষি মারতে শুরু করেন।
অন্য বিধায়করা ও বিরোধী ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতারা ছুটে এসে কোনওক্রমে তাদের ঠেকান।
                             গরুর মাংস                
বিব্রত মুখ্যমন্ত্রী মুফতি মহম্মদ সঈদ বলেন, এভাবে কোনও বিধায়ককে হেনস্থা করা যায় না। তিনি শরিক বিজেপি-কে তাদের ভুল স্বীকার করতেও আহ্বান জানান।
বিজেপি নেতা ও উপ-মুখ্যমন্ত্রী নির্মল সিং যদিও বলেছেন সভায় যা ঘটেছে তা তিনি সমর্থন করেন না – তবে পাশাপাশি বিফ পার্টি আয়োজন করার জন্য তিনি মি রশিদের সমালোচনা করতেও ছাড়েননি।
আর সভার ভেতরেই মার-খাওয়া মি রশিদ দাবি করেছেন ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্য এর চেয়ে লজ্জার দিন আর আসেনি।
তিনি বলেন, ‘সাত-আটজন বিজেপি এমএলএ মিলে, কেউ আমার ঘাড় টিপে ধরে, কেউ পা চেপে ধরে, কেউ বুকে ঘুষি মেরে যেভাবে বেদম মারলেন, তাতে আমি অচেতন হয়ে যাই। আর কিছু আমার মনে নেই, শুধু মনে আছে সভার অন্য নেতারা এসে আমাকে বাঁচালেন।’
মি রশিদ সেই সঙ্গেই বলেন, ‘একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির সঙ্গে এই যদি ভারতীয় গণতন্ত্রের নমুনা হয়, এরাই যদি হুরিয়তকে মূল স্রোতে আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকেন – তাহলে সেই গণতন্ত্রকে ধিক!’
রাজ্যের বিরোধী নেতা ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাও এই মারধরের ঘটনাকে কঠোর ভাষায় নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন, এই হামলার কোনও নিন্দাই যথেষ্ট নয়।
                 কাশ্মীরেও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিলো গরুর মাংসের ওপর। প্রতিবাদে বিক্ষোভের দৃশ্য এটি। যদিও পরে সুপ্রিম কোর্ট নিষেধাজ্ঞার ওপর স্থগিতাদেশ জারি করে।                
মি আবদুল্লার কথায়, ‘আমি কোনোদিন কোনও আইনসভায় এমন দৃশ্য দেখিনি। বিধায়করা যদি তাদের আবেগ সংযত রাখতে না-পারেন তাহলে তাদের সভায় আসাই উচিত নয়। আর সুপ্রিমকোর্টের স্থগিতাদেশের পর কাশ্মীরে এখন দুমাসের জন্য বিফ তো নিষিদ্ধ নয়, তাহলে মি রশিদকে কীসের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে?’
এদিকে বিধানসভায় বিফ-সংক্রান্ত যে বিলটি নিয়ে আজ আলোচনার কথা ছিল, শেষ পর্যন্ত সেটিও আর হতে পারেনি।
মার-খাওয়া এমএলএ ইঞ্জিনিয়ার রশিদই স্পিকারের টেবিল থেকে বিলের কাগজপত্র ছিনিয়ে নিয়ে এদিনের মতো সভা ভণ্ডুল করে দিয়েছেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন