একজন মাদ্রাসা ছাত্রের মৃত্যুর জের ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে দিনভর সহিংসতার পর পুলিশ ও প্রশাসনের সাথে মাদ্রাসা ছাত্রদের সমঝোতা হয়েছে।
দাবি অনুযায়ী জেলা পুলিশের দুই সদস্যকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, কোন পরিস্থিতিতে মাদ্রাসার একজন ছাত্র মারা গেছে তা তদন্তের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
এসব প্রতিশ্রুতির পর, বিক্ষোভরত মাদ্রাসা ছাত্র ও শিক্ষকরা বুধবার তাদের হরতালের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন।
রাতের বেলায় জেলা প্রশাসন বলেছে, পরিস্থিতি এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে একটি কওমি মাদ্রাসার পাশে বাজারে মোবাইল ফোন কেনা নিয়ে বাক-বিতণ্ডা থেকে মাদ্রাসাটির ছাত্রদের সাথে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ হয় গতকাল (সোমবার)। সংঘর্ষে পুলিশ এবং সরকার দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগও জড়িয়ে পড়েছিল।
সংঘর্ষে আহত মাদ্রাসার ছাত্র মাসুদুর রহমানের মৃত্যু হয় আজ (মঙ্গলবার) ভোররাতে। এই মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে শত শত ছাত্র লাঠিসোটা নিয়ে শহরটিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
বিক্ষোভকারি মাদ্রাসার ছাত্ররা রেল লাইন এবং সড়ক অবরোধ করে অন্যান্য জায়গার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো হামলার লক্ষ্য ছিল
স্থানীয় একজন সাংবাদিক আব্দুন নূর জানিয়েছেন,বিক্ষোভ থেকে সারাদিন ধরেই ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের মতো সহিংস ঘটনা ঘটেছে।
তিনি জানান, বিক্ষোভকারিরা রেল লাইন উপরে ফেলে এবং ষ্টেশনে ভাঙচুর করে। তারা আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীত বিদ্যালয় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এছাড়া শিল্পকলা একাডেমী এবং আরও কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠনে আক্রমণ করে ভাঙচুর করে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়েও ভাঙচুর করে।
সোমবারের সংঘর্ষে যে ছাত্রের মৃত্যু হয়, তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে সবচেয়ে বড় মাদ্রাসা জামিয়া ইউনিছিয়া মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন। এই মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষকরাই মঙ্গলবারের বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন।
ঐ মাদ্রাসার শিক্ষক এবং বিক্ষোভের অন্যতম নেতা সাজেদুর রহমান বলেছেন, মোবাইল ফোন নিয়ে তুচ্ছে ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকালের সংঘর্ষের সময় পুলিশ এবং ছাত্রলীগ মিলে তাদের মাদ্রাসায় ঢুকে ছাত্রদের আক্রমণ করেছিল এবং গুলি চালিয়েছিল। সেজন্য তারা স্থানীয় পুলিশের দু’জন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
তবে মাদ্রাসার এই শিক্ষক তাদের বিক্ষোভ থেকে সহিংসতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, যারা সহিংস ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে, তারা তাদের কেউ নয়।
বিক্ষুব্ধ মাদ্রাসা ছাত্রদের আক্রমণের মুখে এক পর্যায়ে ঢাকা-সিলেট এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
এছাড়া কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কেও যান চলাচল বন্ধ ছিল।
নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি শহরে আধা সামরিক বাহিনী বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
কাদির কল্লোল
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন