“বাংলাদেশে এডিবির অর্থায়ন তো বাড়ছে। আগামী তিন বছরের বিজনেস প্ল্যান ঠিক করা হয়েছে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী, তিন বছরে ৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে এডিবি।”
গত তিন অর্থবছরে ম্যানিলাভিত্তিক এই অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে মোট ৩০০ কোটি ডলার অর্থায়ন করেছে। চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দিচ্ছে ১২০ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের (বিডিএফ) বৈঠকে যোগ দিতে ঢাকায় আসা ঝাং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠক করেন।
সংবাদ সম্মেলনে এডিবির ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তা বাংলাদেশের উন্নয়নের ব্যাপক প্রশংসাও করেন।
তিনি বলেন, ৪২ বছর ধরে এডিবি বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছে। এতদিনে এডিবির অর্থায়নে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে বা হচ্ছে, তাতে তারা সন্তুষ্ট।
বাংলাদেশে ওয়েনচাই ঝাংয়ের এটা দ্বিতীয় সফর করছে। এর আগে ২০১৪ সালের নভেম্বর তিনি এসেছিলেন।
দুই সফরের মধ্যবর্তী সময়ে বাংলাদেশ কোন ক্ষেত্রে ভালো করেছে বলে চোখে পড়েছে- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,“মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) এর লক্ষ্য অর্জন করাই বাংলাদেশের অন্যতম সাফল্য।
“বিশেষ করে দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনা আর সবার জন্য প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত অন্যতম সাফল্য। যে কারণে বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের সাফল্য রয়েছে।”
তবে বাংলাদেশের সামনে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করেন এডিবির এই কর্মকর্তা।
তার মতে, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অবকাঠামো উন্নয়ন, বিশেষ করে জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন।
এছাড়া পুঁজিবাজার উন্নয়ন ও এসএমই অর্থায়ন সহজলভ্য করা, তরুণ সমাজকে যথাযথ শিক্ষার মধ্যে আনা ও স্থানীয় সরকারের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও গতি আনাকেও চ্যালেঞ্জ মনে করছেন তিনি।
এগুলো মোকাবেলা করতে পারলে বাংলাদেশের ভিশন-২০২১ বা তার পরের লক্ষ্য ২০৩০ বা ২০৪০ অর্জন সহজ হবে বলে মন্তব্য করেন ঝাং।
পুঁজিবাজারের উন্নয়ন হলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ গতিশীল হবে বলে মনে করেন তিনি।
ঝাং বলেন, “আঞ্চলিক যোগাযোগ তথা এশিয়ান করিডোর স্থাপনে বাংলাদেশ অবস্থানগত কারণেই ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ। এডিবি এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে। আমরা এই কারণে এটা চাই যে, আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়লে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল হবে।”
বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে বিশেষ করে গ্যাস খাতের উন্নয়নে (উৎপাদন, বিতরণ, সঞ্চালন) বিনিয়োগ করতে আগ্রহের কথা জানান তিনি।
এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন করবে, যা এডিবিও করে থাকে।
এতে বাংলাদেশের এডিবির ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে নতুন কোনো শর্ত আসবে কি না- জানতে চাইলে ঝাং সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেন।
তিনি সেইসঙ্গে বলেন, “এআইআইবির সঙ্গে এডিবি যৌথভাবে কাজ করবে। এক্ষেত্রে এডিবির কোনো সমস্যা হবে না। দরকার হলে এআইআইবির সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগ করা হবে।”
সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশের প্রতি বছর গড়ে ৮ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন দরকার।
এ অর্থ জোগানোর ক্ষেত্রে সরকারের চ্যালেঞ্জ কী কী হতে পারে- জানতে চাইলে এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, এটা সরকারের পরিকল্পনার বিষয়। তবে অভ্যন্তরীণ ও বহিঃখাত থেকে অর্থ আসার সুযোগ রয়েছে। ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাতও বাড়াতে হবে। বেসরকারি খাততে সম্পৃক্ত করেও বিনিয়োগ বাড়ানো যেতে পারে।
“তবে আমি মনে করি এই অর্থ জোগানো বাংলাদেশের জন্য সমস্যা হবে না।”
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এডিবি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার আবাসিক প্রতিনিধি কাজুহিকো হিগুচিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
bdnews24
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন