বাংলাদেশে গতকাল দুটি প্রকাশনা সংস্থায় হামলা চালিয়ে একজনকে হত্যা এবং আরো তিনজনকে আহত হবার ঘটনার পর দেশটির প্রকাশক ও বুদ্ধিজীবী মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
একদিকে তারা যেমন ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন, অন্যদিকে আতঙ্কিতও হয়ে পড়েছেন।জাগৃতি প্রকাশনির কর্নধার নিহত ফয়সাল আরেফিন দীপনের মৃতদেহ ময়না তদন্তের পর আজ দুপুরেই তার পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুপুরের পরপরই অনুষ্ঠিত হয়েছে তার শেষকৃত্য। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন বলছে, দীপনকে উপুড় করে ভারী ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার ঘাড় ও মাথায় কোপানো হয়।
এই হামলার প্রতিবাদে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করছেন পেশাজীবী, প্রকাশক এবং শাহবাগের আন্দোলনকারীরা।
আজ আরো একজন প্রকাশককে হত্যার হুমকি দিয়ে বার্তা পাঠানোর ঘটনা ঘটেছে। সময় প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করে বলছেন, আল-আহরার ইউকে নামের একটি যুক্তরাজ্যভিত্তিক সঙ্ঘঠনের নামে তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে তার মোবাইল ফোনে আজ সকালে একটি ক্ষুদে বার্তা এসেছে।
এসব ঘটনা পরম্পরায় অনেককেই আতঙ্কিত হয়ে পড়তে দেখা গেছে। সকালে টিএসসির বিক্ষোভে ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন একজন অধ্যাপকের বক্তব্য জানতে বিকেলে বিবিসির তরফ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তিনি এখন আতঙ্কিত বোধ করছেন এবং বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান।
আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন প্রকাশকেরাও। বলছেন বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল পুস্তক প্রকাশক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মেজবাহউদ্দিন আহমেদ পাশা, তারা আতংক বোধ করছেন এবং এর প্রভাব প্রকাশনা শিল্পের ওপর পড়বে।
পুলিশ বলছে, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যে কজন ব্লগার নিহত হয়েছেন তাদের হামলাকারীরা এবং গতকাল প্রকাশকদের উপর যারা হামলা চালিয়েছে তারা একই সংগঠনের সদস্য এবং তারা একই রকম প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত।
পুলিশ বলছে দীপনের হত্যাকারী এবং শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর প্রকাশক সহ আরো তিনজনকে যারা হামলা করেছে তাদের হামলার ধরণের সাথে ২০১৩ সাল থেকে শুরু করে গত অগাস্ট মাস পর্যন্ত যে ৫জন ব্লগার খুন হয়েছেন তাদের উপর চালানো হামলার ধরণ মিলে যায়।
পুলিশের মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম বলছিলেন আনসারউল্লাহ বাংলা টিম বা এই 'আমব্রেলার নিচে' যারা কাজ করে তাদের দিকেই তাদের সন্দেহের তীর। এমনকি কোপানোর ধরণও এক, তাই নেপথ্যের ব্যক্তিরা এক বলেই তাদের প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে।
অবশ্য আনসার আল-ইসলাম নামে একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে এরই মধ্যে গতকালের হামলা দুটির দায় স্বীকার করা হয়েছে। তাদের পোস্ট করা টুইটে তারা নিজেদেরকে আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা বলে উল্লেখ করেছে।
তবে পুলিশী তদন্ত এখন পর্যন্ত খুব বেশীদূর এগোয় নি বলে জানা যাচ্ছে।
নিহত দীপনের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক সন্তান হত্যার বিচার চান না উল্লেখ করে থানায় কোনও অভিযোগও করেন নি। তবে নানা মহল থেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া আসছে।
শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ বিকেলে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ করে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের জন্য চব্বিশ ঘন্টা সময় বেঁধে দিয়েছে, অন্যথায় মঙ্গলবার সারা বাংলাদেশে আধাবেলা হরতাল পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
সোমবার সারাদেশে অর্ধদিবস সব ধরণের প্রকাশনা ও বিক্রয় কার্যক্রম বন্ধ রাখার কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশের পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতারা। আজ সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে শিক্ষক, ছাত্র, পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবী ও পুস্তক প্রকাশকেরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, সভার বক্তারা আগেকার হত্যাকান্ডগুলোর বিচার ও শাস্তি না হওয়াতেই এটা বারবার ঘটছে - এ কথা উল্লেখ করে সরকারের ব্যর্থতার তীব্র সমালোচনা করেছেন।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, গতকাল বিকেলে শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের কার্যালয় থেকে জাগৃতি প্রকাশনীর সত্বাধিকারী ফয়সাল আরেফিন দীপনের জবাই করা মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এর আগে দুপুরে লালমাটিয়ায় আরো একটি প্রকাশনা সংস্থা শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে ঢুকে হামলা চালিয়ে প্রকাশক ও ব্লগার আহমেদুর রশীদ টুটুলসহ তিনজনকে আহত করে হামলাকারীরা।
এ দুটো প্রকাশনা থেকেই ইতিপূর্বে নিহত যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ব্লগার ও লেকক অভিজিৎ রায়ের পুস্তক প্রকাশিত হয়েছিল।
এসব হামলার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসঙ্ঘ। হামলায় নিন্দা জানিয়ে এবং হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানিয়ে টুইট করেছেন ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশনারও।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন