মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৫

ঢাকা উত্তরের সব ওয়ার্ডে বসছে সিসি ক্যামেরা

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আগামী তিন মাসের মধ্যে প্রতিটি ওয়ার্ডে অন্তত ১০টি ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা ও ১০ জন করে কমিউনিটি পুলিশ নিয়োগ করা হবে। আজ মঙ্গলবার এক মতবিনিময় সভায় ঢাকা মহানগর পুলিশ কর্মকর্তাদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা জানান ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক।

রাজধানীর একটি হোটেলে আইনশৃঙ্খলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ক এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। যানজট নিরসন, জননিরাপত্তা ও দখল উচ্ছেদসহ বিভিন্ন বিষয়ে ডিএনসিসি ও ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সমন্বিতভাবে কাজ করবে বলেও সভায় জানানো হয়।
সভায় ডিএমপির অপারেশনস বিভাগের পক্ষ থেকে একটি তথ্যচিত্রে ডিএনসিসি এলাকার বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাব্য করণীয় তুলে ধরা হয়। তাতে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি এলাকায় কমিউনিটি পুলিশ গড়ে তোলা এবং সিসি ক্যামেরা বসানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। বলা হয়, সিসি ক্যামেরা থাকলে অপরাধী শনাক্ত করতে যেমন সুবিধা হয়, তেমনি সিসি ক্যামেরা থাকলে এলাকায় অপরাধের পরিমাণও কমে যায়।
বনানী, গুলশান, বারিধারা ও নিকেতন সোসাইটির প্রতিনিধিরা তাঁদের এলাকায় সিসি ক্যামেরা বসিয়ে এবং কমিউনিটি পুলিশ নিয়োগ দিয়ে কী সুফল পাচ্ছেন তা তুলে ধরেন। এ সময় মেয়র আনিসুল হক কীভাবে সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, খরচ কেমন লাগছে, খরচ বহন করা হয় কীভাবে ইত্যাদি নানা বিষয় জানতে চান।
মিরপুর, মোহাম্মদপুর এলাকার তিনজন কাউন্সিলর নিজেদের এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা তুলে ধরেন। তাঁরা বলেন, সোসাইটি না থাকায় এলাকায় সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়নি, নেই কমিউনিটি পুলিশ। কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে পুলিশ পৌঁছাতে দেরি হয়, কমিউনিটি পুলিশ থাকলে যা হতো না।
ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, বেশির ভাগ সড়কের ক্যামেরা যার যার বাড়িকেন্দ্রিক। বাড়িতে যদি চুরি-ডাকাতি হয়, খুন হয় তাহলে অপরাধীরা আসবে রাস্তা দিয়ে, বেরিয়ে যাবেও রাস্তা দিয়ে। অফিস-আদালতে যে সিসি টিভি আছে শুধু একটা সিসি ক্যামেরা রাস্তা কাভার করে তাহলেও ৯০ শতাংশ অপরাধ কমাতে পারব।
এ সময় আনিসুল হক বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরেরা আগামী তিন মাসের মধ্যে অন্তত ১০টি ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা ও ১০ জন কমিউনিটি পুলিশ নিয়োগ করবেন। সিসি ক্যামেরা বসাতে বনানী, বারিধারা, গুলশান ও নিকেতন এলাকার জন্য সাত কোটি এবং ডিএনসিসির অন্যান্য এলাকার জন্য দশ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন মেয়র।
সভায় আরেকটি তথ্যচিত্রে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ ডিএনসিসি এলাকার যানজটের কারণ ও নিরসনে সম্ভাব্য করণীয় তুলে ধরে। এতে যানজট নিরসনে তেজগাঁও এলাকার ট্রাকস্ট্যান্ড অপসারণ, কয়েকটি সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধ, ভাঙাচোরা সড়ক সংস্কার, সড়কবাতি সঠিকভাবে জ্বালানো, গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনালে ইউলুপ নির্মাণের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
সভায় দুই নারী কাউন্সিলর বলেন, রাজধানীর বাসগুলোতে নারীদের জন্য আসন সংরক্ষিত থাকার কথা। অথচ সেসব আসনে পুরুষেরা বসে থাকে। ফুটপাতে নারীরা হাঁটতে পারে না। এর জবাবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েতউল্লাহ বলেন, আগামী ১ নভেম্বর থেকে সব বাসে মহিলা সিট রাখা নিশ্চিত করা হচ্ছে। কোনো বাসে তা না থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওয়ার্ড-৩ এর কাউন্সিলর কাজী জহিরুল ইসলাম নিজের এলাকার সমস্যা তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, এলাকার প্রধান সমস্যা মাদক। কিছু সংখ্যক পুলিশ কর্মকর্তাদের কারণে, যারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তাঁদের কারণে এলাকায় মাদক বিস্তার লাভ করেছে।
ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘দুই-চারজন পুলিশ সদস্য খারাপ কাজ করতে পারে, তা পুরো পুলিশ বিভাগের চিত্র নয়। বলা হয়, ফুটপাত দখলে পুলিশের হাত থাকে। অস্বীকার করি না, উড়িয়ে দেই না। থাকতে পারে। সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ডিএনসিসির গৃহীত যেকোনো উদ্যোগে ডিএমপির পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়া হবে বলেও কমিশনার জানান। তিনি নিজ নিজ এলাকার জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দাদের সঙ্গে প্রতি মাসে সমন্বয় সভা করতে প্রতিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।
prothom alo

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন