বাংলাদেশের একজন পরীক্ষার্থীকে প্রযুক্তি ব্যবহার করে নকল করার দায়ে আজ শুক্রবার দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
অন্যদিকে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের তৎপরতার অভিযোগে ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশ আজ ১২জনকে আটক করেছে।বাংলাদেশে পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে প্রশ্ন ফাঁসের খবর নতুন নয়। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে প্রতিবছরই উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে নতুন নতুন কৌশলে পরীক্ষায় নকলের প্রবণতাও বাড়ছে।
সকাল ১০ টায় মোহাম্মদপুরের একটি স্কুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ক ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার সময় ধরা হয় নকল করার দায়ে ওই পরীক্ষার্থীকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের বাইরে এ ধরনের ৭৬টি কেন্দ্রে আজ একসাথে পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষা শুরুর ৪০ মিনিটি পরেই মোহাম্মদপুর কেন্দ্রের একটি কক্ষে এক পরীক্ষার্থীর সন্দেহজনক আচরণ লক্ষ করে তাকে আলাদা করেন দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মিজানুর রহমান।
শিক্ষার্থীর কাছ থেকে জব্দ করা হয় জামার বোতামের মত ছোট একটি যন্ত্র ও মোবাইল কার্ডের সিমযুক্ত -আড়াই থেকে তিন ইঞ্চি লম্বা কার্ড আরেকটি কার্ড। যেটা অনেকটা এটিএম বুথে তাৎক্ষনিক টাকা তোলার কার্ডের মত দেখতে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ এম আমজাদ আলি বলছিলেন এই যন্ত্রটির রেঞ্জ আধা কিলোমিটার অর্থাৎ দুই পক্ষকে অবস্থান করতে হবে আধা কিলোমিটারের মধ্যে।
পরে ঐ পরীক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে বসা ভ্রাম্যমাণ আদালতে নিয়ে আসা হলে শিক্ষক আর আদালতের প্রশ্নের মুখে সে বণর্ণা করে ধরা পড়ার আগ পর্যন্ত কীভাবে এই যন্ত্রটি ব্যবহার করে কানে শুনে শুনে সে প্রশ্নের উত্তর লিখে যাচ্ছিল।
সে বলছিল পরীক্ষা শুরুর অল্পক্ষণের মধ্যেই প্রশ্ন বাইরে চলে যায়। এরপর কেন্দ্রের বাইরে থেকে একটি পক্ষ তাদের কাছে থাকা একটি বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে প্রশ্নের উত্তর বলতে থাকে আর শিক্ষার্থী তার কাছে থাকা ছোট বোতামের মত যন্ত্র কানের মধ্যে লাগিয়ে সেই উত্তর শুনতে থাকে।
এই উত্তরের বিনিময়ে এই শিক্ষার্থীকে দিতে হয়েছে পাঁচ লক্ষ টাকা। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরীক্ষায় যান্ত্রিক ডিভাইস ব্যবহার করে জালিয়াতির দায়ে এই পরীক্ষার্থীকে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে।
কিন্তু কী করে একটি প্রশ্নপত্র কেন্দ্রের বাইরে যায় ?
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ এম আমজাদ আলি বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে যেসব পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে সেখানে পরীক্ষা গ্রহণের দায়িত্ব পালন যারা করছেন তারা সবাই বিষয়টাকে সমান গুরুত্ব দেন না। ফলে প্রশ্নপত্র কেন্দ্রের বাইরে এসব অসাধু চক্রের হাতে চলে যায়।
''তাছাড়া এসব অসাধু চক্র আমাদের সামনে কিছু বলতে পারে না কিন্তু তাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে।''
বাংলাদেশে পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে আগাম প্রশ্ন ফাঁসের খবর গণমাধ্যমের খবর হচ্ছে বেশ কয়েক বছর ধরেই। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ফেসবুকে প্রশ্ন ছড়িয়ে পড়ার খবরও দেখা গেছে।
কিন্তু এর সঙ্গে এখন যোগ হচ্ছে পরীক্ষার শুরুর পর প্রযুক্তির ব্যবহার করে নকল করার নতুন পদ্ধতি।
ক্যালকুলেটর, ঘড়ি, মোবাইল ফোনের মত দেখতে কার্ড কয়েক বছর ধরে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং পরীক্ষকরা বলছেন প্রতি বছরই তারা নতুন প্রযুক্তি বা ডিভাইসের ব্যবহার দেখতে পাচ্ছেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন