বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেনা গোয়েন্দাদের দেয়া খবর প্রকাশের অভিযোগে দেশটির শীর্ষস্থানীয় ইংরেজী দৈনিক ডেইলী স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
আজ ঢাকায় একুশে ফেব্রুয়ারী উপলক্ষে আয়োজিত একটি সমাবেশে তিনি বলেন, আত্মমর্যাদা থাকলে মি. আনাম পদত্যাগ করতেন।
সাবেক সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সংবিধান লঙ্ঘনকারীদের বিচার করা হবে বলেও হুঁশিয়ারী করেন শেখ হাসিনা।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় 'সেনা-গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই-এর দেয়া সংবাদ যাচাই না করে ছাপিয়ে' তিনি ভুল করেছেন - একটি টিভি অনুষ্ঠানে মাহফুজ আনাম সম্প্রতি এ কথা বলার পরপরই এ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক-আলোচনা শুরু হয় বাংলাদেশে ।
এর পর মাহফুজ আনামকে আটক ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তাঁর বিচার দাবী করেন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় মি. আনামের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করেন অনেকে - যাতে শত শত কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়।
তবে শেখ হাসিনা নিজে এতদিন এ নিয়ে কোন কথা বলেন নি। আজই সরাসরি ডেইলী স্টার সম্পাদকের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিলেন তিনি - যার ভাষা ছিল অত্যন্ত কঠোর।
টেলিভিশন টকশো’তে নিজের ভুল স্বীকার করার ব্যাখ্যা হিসেবে মি. আনাম বলেছিলেন যে সাংবাদিকতার নৈতিকতার অবস্থান থেকে তিনি ভুল স্বীকার করেছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "ডেইলি স্টারের মতো একটা পত্রিকা ডিজিএফআইএর একজন কর্মকর্তা যা লিখে দেবে তাই ছাপারে - এটা কোন পাগল বিশ্বাস করবে?"
শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে যুক্তি দেন যে বিবিসি ব্রিটেনের কোন একজন মন্ত্রী কিংবা এমপি সম্পর্কে ভুল সংবাদ প্রকাশ করার পর প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক পদত্যাগ করেছিলেন।
এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে কিছু না বললেও প্রধানমন্ত্রী মাহফুজ আনামের নিজ পদে থাকার বিষয়েই প্রশ্ন তোলেন।
"তিনি ভুল করেছেন বললেন, কিন্তু তার ভুলের খেসারত বাংলাদেশের জনগণ দিল, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দিল, ব্যবসায়ী মহল, ছাত্রসমাজ দিল, সকলে দিল - আর আমি আমার পরিবার তো দিয়েছিই। কই উনি ভুল স্বীকার করে পদত্যাগ করার সাহস তো দেখাতে পারলেন না? এতটুকু আত্মমর্যাদা থাকলে নিশ্চয়ই তিনি এর পর পদত্যাগ করতেন।"
টিভি টকশোয়ের বক্তব্যের পর মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানির অভিযোগে সারা দেশে প্রায় আশিটির মতো মামলা হয়েছে।
ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে মি. আনামের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হলেও তাঁর নিজের দল আওয়ামী লীগের নেতারা এ বিষয়ে খুব একটা কথা বলেনি বলে অভিযোগ করেন শেখ হাসিনা।
"আমার দু:খ হয়। আমাদের দলে অনেকে এ ব্যাপারে মুখ খুলেছে, অনেকের দেখি এ ব্যপারে মুখ খুলতে কেন যেন তাদের দ্বিধা। সত্য কথা বলতে কেন এত ভয়?" - বলেন তিনি।
ডেইলী স্টার ও নাম না নিয়ে আরেকটি সংবাদপত্রের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা অভিযোগ করেন যে এরা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মতই সংবিধান ধ্বংসের বিচার হবে জানান প্রধানমন্ত্রী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন