বুধবার, ২০ জানুয়ারী, ২০১৬

বিএনপির বিকল্প হতে চায় জাতীয় পার্টি

জাতীয় পার্টির বৈঠকে জেনারেল এরশাদ।
Image captionজাতীয় পার্টির বৈঠকে জেনারেল এরশাদ।
বাংলাদেশে জাতীয় পার্টির নেতা জেনারেল হুসেই মুহাম্মদ এরশাদ বিবিসিকে বলেছেন, সরকারের মন্ত্রীসভা থেকে তার দলকে বের করে তিনি একে বিএনপির বিকল্প একটা শক্তি হিসেবে দাঁড় করাতে চান।
তবে মন্ত্রীসভা থেকে বেরিয়ে আসার প্রশ্নে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন।
সম্প্রতি ছোট ভাইকে দলের কো-চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ করা এবং দলের মহাসচিবকে বহিষ্কার করে নতুন একজন মহাসচিব নিয়োগে তার সিদ্ধান্ত নিয়ে দলের ভেতর বিদ্রোহ দেখা দিয়েছে।
স্ত্রী রওশন এরশাদের নেতৃত্ব জাতীয় পার্টির একটি অংশ জেনারেল এরশাদের এই সিদ্ধান্ত খোলাখুলি প্রত্যাখ্যান করেছেন। কিন্তু জেনারেল এরশাদ দাবি করছেন, দলে ভাঙ্গনের কোন সম্ভাবনা নেই।
বিবিসি বাংলার সাথে এক সাক্ষাৎকারে জেনারেল এরশাদ বলেন, “অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য বিএনপিকে মানুষ পছন্দ করে না। আমাদেরকেও মানুষ বলে, জাতীয় পার্টি সরকারে আছে। ফলে তারা লাঙ্গলে কেন, নৌকা মার্কাতেই ভোট দেব। ফলে আমরা জাতীয় পার্টি বিএনপির বিকল্প হিসেবে একটা সত্যিকার বিরোধীদল হিসেবে দাঁড়াতে চাই।”
তবে সরকারের মন্ত্রীসভা থেকে বেরিয়ে আসতে সময়ের প্রয়োজন বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।
“আমাকে সম্মান দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ দূত করেছেন। ফলে ওনার সাথে আমার কথা বলতে হবে। উনি যদি রাজি হন, তাহলে আমি বেরিয়ে আসব। আর আমি বেরিয়ে আসলে তখন আমার দলের মন্ত্রীদেরও বেরিয়ে আসতে বলতে পারব। আশা করি, এটা হবে। তবে এখনই নয়, সময় লাগবে।”
বাংলাদেশের সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে রওশন এরশাদ দেখা কেরন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে।
Image captionবাংলাদেশের সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে রওশন এরশাদ দেখা কেরন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে।
২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে অংশ নেয়া না নেয়ার প্রশ্নে তখন জেনারেল এরশাদ তার বক্তব্য বার বার পরিবর্তন করায় জাতীয় পার্টির বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়ে।
সেই নির্বাচনে গঠিত সংসদে জাতীয় পার্টি বিরোধীদলের আসনে বসলেও দলটির তিনজন নেতা সরকারের মন্ত্রীসভায় রয়েছেন।
জেনারেল এরশাদ নিজেও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে রয়েছেন।
একই সাথে তিনি অনেকদিন ধরেই বলে আসছেন, তারা জোট সরকার থেকে বেরিয়ে আসবেন।
এখন আবার তিনি যখন সরকার থেকে বেরিয়ে আসার কথা বলছেন, তখনই তিনি তার দলের ভিতরে বিদ্রোহের মুখে পড়েছেন।
হঠাৎ করেই তিনি তার ভাই জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করেন।
এর পাল্টা হিসেবে তার স্ত্রী রওশন এরশাদের সমর্থকরা বৈঠক করে রওশন এরশাদকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন।
জেনারেল এরশাদ জিয়াউদ্দিন বাবলুকে বহিষ্কার করে রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব নিয়োগ করেন।
রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দল জেনারেল এরশাদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে।
এমনি পাল্টাপাল্টি তৎপরতায় দলটিতে ভাঙ্গনের কথা উঠছে।
তবে জেনারেল এরশাদ দাবি করেছেন, এবার তাদের দলে ভাঙ্গনের কোন সম্ভাবনা নেই।
তিনি বলেন, তার নিজের বয়স ৮৯ বছর এবং তার স্ত্রীর বয়স ৭৯।
ফলে তাদের দুজনের বয়স বিবেচনায় নিয়ে তিনি দলের হাল ধরার জন্য তার ভাই জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান করেছেন।
জেনারেল এরশাদ দাবি করেন, বিএনপির বিকল্প শক্তি হিসেবে দাঁড়ানোর লক্ষ্য থেকে জাতীয় পার্টিকে গোছানোর জন্য তিনি দলে এসব ব্যবস্থা নিয়েছেন।
৫ই জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের পর রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচিত হয়ে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার আসনে বসেন।
তার সমর্থক হিসেবে পরিচিত জিয়াউদ্দিন বাবলু হন জাতীয় পার্টির মহাসচিব।
ফলে দলে রওশন এরশাদের নিয়ন্ত্রণ বেড়েছে এবং জেনারেল এরশাদের নিয়ন্ত্রণ কমেছে, এমন একটা আলোচনা ছিল জাতীয় পার্টির ভিতরে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন