সোমবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৫

রান-পাহাড়ে চিড়ে চ্যাপ্টা ভারত

ভারতকে রানে চাপা দেওয়ার পথে ডু প্লেসি-ডি ভিলিয়ার্স। ছবি: এএফপিভারতকে রানে চাপা দেওয়ার পথে ডু প্লেসি-ডি ভিলিয়ার্স। ছবি: এএফপিমুম্বাইয়ে আজ ঝড়ের পূর্বাভাস ছিল। বৃষ্টি, সঙ্গে ঝোড়ো বাতাস। কিন্তু সন্ধ্যা-রাতের ঝড়টা দুপুর থেকেই শুরু হবে, আরব সাগরের বদলে উৎপত্তিস্থল হবে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে, কে জানত!
১৩ বলে ২৩। হাশিম আমলার ব্যাটেই ছিল সেই ঝড়ের পূর্বাভাস। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে শুরু থেকে একটাই রণকৌশল নিয়ে নেমেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। কুইন্টন ডি কক ভারতীয় বোলারদের কচু কাটা করলেন। মাঝখানে ফ্যাফ ডু প্লেসি, শেষে এবি ডি ভিলিয়ার্স। ওয়ানডে ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো এক ইনিংসে তিন ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি। তাতে চেপে ৪৩৮ রানের পাহাড়ে উঠে ভারতের মাটিতে প্রথম বারের সিরিজ জেতার অপেক্ষায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয়বারের মতো চার শ রান উঠল। তিন ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরির আগের কীর্তির দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৪৩৯ করেছিল প্রোটিয়ারা। আজ করল এক কম। এই ‘৪৩৮’ আবার দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য একটা আনন্দের প্রতিশব্দও হয়ে আছে। জোহানেসবার্গে ৪৩৪ করেও অস্ট্রেলিয়া হেরে গিয়েছিল প্রোটিয়ারা পরে ব্যাট করে ৪৩৮ করায়। এমন ‘ভৌতিক’ ঘটনা রোজ তো আর ঘটে না। ভারতের তাই সিরিজ জেতার আশা না করাই বোধ হয় ভালো।

দিনের শুরুতেই সবচেয়ে কম ইনিংসে ৬ হাজার রান তোলার রেকর্ড গড়েছেন আমলা। ব্যক্তিগত এই অর্জনের পর অবশ্য খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি অবশ্য। দলীয় ৩৩ রানের মাথায় মোহিত শর্মার বলে ধোনির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি। আমলার আউটে যদি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেও থাকে ভারতীয় দল, তবে সেই স্বস্তি খুব দ্রুতই উবে গেছে। ডি কক যে রুদ্রমূর্তিতে হাজির হওয়ার জন্য আজকের দিনটিকেই বেছে নিলেন। এক প্রান্তে ডু প্লেসিকে দর্শক বানিয়ে রান তুললেন ঝড়ের গতিতে। মাত্র ৭৮ বলে সেঞ্চুরি।
২৭তম ওভারে দলীয় ১৮৭ রানে সুরেশ রায়নার বলে যখন আউট হয়ে ফিরে যাচ্ছেন, তখন ডি ককের নামের পাশে ১০৯। ৮৭ বলের ইনিংসটায় ১৭টি চার এবং ১টি ছক্কা। কিন্তু এই ওপেনারকে আউট করেই যেন খাল কেটে হাঙর ডেকে আনল ভারত। উইকেটে এলেন অধিনায়ক ডি ভিলিয়ার্স।
এর পর সময়টা রীতিমতো দুঃস্বপ্নের মতো পার করেছে ভারতীয় বোলাররা। এর আগ পর্যন্ত খানিকটা রয়ে-সয়ে ব্যাট করছিলেন ডু প্লেসি। অধিনায়ককে পাওয়ার পর ভাবলেন, দায়িত্বটা ক্যাপটেনই নিক। আমি বরং মেরেই খেলি। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট নিয়ে মাঠ ছাড়ার আগে অধিনায়কের সঙ্গে ১৬৪ রানের জুটি গড়েছেন মাত্র ১০৩ বলে। সব মিলিয়ে ৯টি চার এবং ৬টি ছক্কায় সাজানো ইনিংসটা থেমেছে ১৩৩ রানে।
অন্যদিকে নিজের মতো করে বোলারদের শাসন করে যাচ্ছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। দলীয় ৩৫১ রানে ডু প্লেসি মাঠ থেকে বেরিয়ে গেলেও ডি ভিলিয়ার্স ঠিকই সমানে ব্যাট চালিয়ে গেছেন। ভারতীয় বোলারদের একটু ‘রেহাই’ দিয়ে ৪৭তম ওভারে আউট হওয়ার আগে ১১৯ রান করলেন। ৬১ বলের এই টর্নেডোর পথে ১১টি ছক্কা মেরেছেন। অবশ্য চার ছিল মাত্র ৩টি।
ব্যক্তিগত রেকর্ড দিয়ে দিনের শুরু করা দক্ষিণ আফ্রিকা শেষ করল দলীয় অনেক রেকর্ড দিয়ে। ভারতের মাটিতেই এটি যেকোনো দলের সর্বোচ্চ স্কোর, সব মিলিয়ে ওয়ানডে ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ।
ডি কক, ডু প্লেসি আর ডি ভিলিয়ার্সের সেঞ্চুরি নিয়ে এত কথা বলায় ভুবনেশ্বর কুমার ‘আপত্তি’ করতে পারেন। বলতে পারেন, আমিও তো সেঞ্চুরি করলাম! তা অবশ্য তিনি করেছেন। ১০ ওভারে দিয়েছেন ১০৬ রান!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন