শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৫

প্রেসিডেন্ট দলের সিদ্ধান্তে চলবেন: সু চি

 
ইয়াঙ্গুনে অং সান সু চির বাসভবনের সামনে গতকাল সেলফি তোলায় ব্যস্ত দেশটির অভিনেত্রী কে কে মো মিন্ত। ঐতিহাসিক নির্বাচনে জয়ের পথে রয়েছে সু চির দল এনএলডি। তারকাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে গতকাল প্রাতরাশের আয়োজন করেন সু চি l এএফপি


মিয়ানমারের আগামী দিনের প্রেসিডেন্টের ভূমিকা প্রশ্নে ক্রমশ অনমনীয় মনোভাব দেখাচ্ছেন দলটির নেতা অং সান সু চি। দেশটির সাধারণ নির্বাচনে তাঁর দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নিরঙ্কুশ বিজয় স্পষ্ট হয়ে ওঠার মুখে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ওই প্রেসিডেন্টের কোনো কর্তৃত্ব থাকবে না। তিনি দলের সিদ্ধান্ত মেনে কাজ করবেন।
আর ঐতিহাসিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য মিয়ানমারের বর্তমান প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন ও তাঁর সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। খবর রয়টার্সের।
নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ ফলাফল ঘোষণা এবং বিজয়ী দল হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাওয়ার অপেক্ষায় এখন এনএলডি। অপেক্ষার এই ক্ষণ যতই ফুরিয়ে আসছে, ততই ক্ষমতায় যাওয়ার পর নিজ ভূমিকা সম্পর্কে খোলাখুলি বক্তব্য দিচ্ছেন গণতন্ত্রকামী নেত্রী সু চি। এরই মধ্যে নোবেল বিজয়ী এই নেত্রী বলেছেন, প্রেসিডেন্ট হতে না পারলেও তাঁর ওপরেই থাকবেন তিনি।
আর এবার আরও স্পষ্টভাবে সু চি জানিয়ে দিলেন, তাঁর দল যাকেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করুক না কেন, তাতে কিছু আসে-যায় না; রাষ্ট্রক্ষমতা তিনিই চালাবেন। গত মঙ্গলবার তাঁর বাসভবনে সিঙ্গাপুরভিত্তিক টেলিভিশন ‘চ্যানেল নিউজ এশিয়া’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সু চি বলেছেন, ‘সব সিদ্ধান্ত আমিই নিয়ে থাকি। কেননা, আমি জয়ী দলের নেতা। কেবল সাংবিধানিক প্রয়োজন পূরণে এমন একজনকে প্রেসিডেন্ট করা হবে, যাঁকে আমরা পছন্দ করব।’
‘তাঁর কোনো কর্তৃত্ব থাকবে না। দলের সিদ্ধান্ত মেনেই তিনি কাজ করবেন।’ বললেন সু চি। সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, ‘প্রেসিডেন্টকে সেটাই করতে বলা হবে, যা প্রকৃতই তিনি পারবেন।’

অং সান সু চিপ্রেসিডেন্টের কোনো কর্তৃত্ব না থাকার ব্যাপারে সু চি যুক্তি দেন, ‘এটাই একমাত্র যৌক্তিক উপায়। কেননা, যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশে বিজয়ী দলের নেতাই সরকারে নেতৃত্ব দেন। এই সংবিধান যদি এটা সমর্থন না করে, তবে প্রচলিত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংগতি রেখে আমরা যাতে এগোতে পারি, সে জন্য আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে।’
এ রকম মন্তব্য কর্তৃত্ববাদীতুল্য কি না, এ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নে এনএলডি নেত্রীর জবাব, ‘জনগণই এনএলডির শক্তি হওয়ায় তারা এমন পথ থেকে পিছু হটবে না। তা ছাড়া, যে সরকার জনসমর্থনের ওপর নির্ভরশীল, তারা কখনো কর্তৃত্ববাদী হতে পারে না।’ বর্তমান বিরোধীদলীয় এই নেত্রী সামরিক বাহিনী ও অন্যান্য পক্ষের সঙ্গে ভবিষ্যতে সহযোগিতার সম্পর্ক বজায় রেখে চলার কথাও ব্যক্ত করেন সাক্ষাৎকারে।
মিয়ানমারের বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, সন্তানেরা বিদেশি নাগরিক হওয়ায় অং সান সু চি দেশটির প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। তবে দুজন ভাইস প্রেসিডেন্টের একজন হতে তাঁর বাধা নেই।
এনএলডি বলেছে, তারা পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে ২৫০-এর বেশি আসন পাবে। এই কক্ষ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ২২১ আসনের চেয়ে এটা ঢের বেশি। গত বুধবার মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের ঘোষিত ২৯৯টি আসনের মধ্যে দলটি পেয়েছে ২৫৬ আসন। উচ্চকক্ষ ও আঞ্চলিক পরিষদগুলোতেও এগিয়ে আছে দলটি।



বারাক ওবামার অভিনন্দন: গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণের ক্ষেত্রে মিয়ানমারে সফলভাবে ঐতিহাসিক নির্বাচন অনুষ্ঠান করায় গতকাল বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
থেইন সেইনের মুখপাত্র ই এইচতুত এ প্রসঙ্গে তাঁর ফেসবুক পাতায় বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা এক অবাধ ও নিরপেক্ষ ঐতিহাসিক নির্বাচন অনুষ্ঠান করায় প্রেসিডেন্ট ও পুরো সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।’

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন