চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং তাইওয়ানের নেতা মা ইং-জু বৈঠক করেছেন। সিঙ্গাপুরে গতকাল শনিবার এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। দুই ভূখণ্ডের শীর্ষ নেতারা ছয় দশকের বেশি সময় পর এই প্রথম এ ধরনের আলোচনায় অংশ নিলেন। খবর এএফপির।
১৯৪৯ সালে চীনা গৃহযুদ্ধ শেষে বেইজিংয়ের সঙ্গে তাইওয়ানের সম্পর্কে বড় ধরনের অবনতি ঘটে। স্নায়ুযুদ্ধের যুগে কয়েক দশক ধরে দুই পক্ষের নেতাদের মুখ দেখাদেখি বন্ধ ছিল। তাঁদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের ব্যাপারটা ছিল নিয়মিত ঘটনা। গতকালের বৈঠকে তাঁরা হাসিমুখে পরস্পর হাত মিলিয়েছেন, যা কয়েক বছর আগেও ছিল রীতিমতো অকল্পনীয় দৃশ্য। কিন্তু ২০০৮ সালে ইং-জু তাইওয়ানের ক্ষমতায় আসার পর বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগ নেন। তখন থেকেই দুই পক্ষের অর্থনৈতিক বন্ধন ও পর্যটন সম্পর্ক নতুন মাত্রা পায় এবং একটি বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
জিনপিং গতকালের আলোচনাকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে ‘ঐতিহাসিক অধ্যায়ের শুরু’ আখ্যা দিয়েছেন। তাইওয়ানের সঙ্গে একত্র হওয়ার ইচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘দুই পক্ষেরই পরস্পরের মূল্যবোধ ও জীবনযাত্রার ধরনকে সম্মান করা উচিত। গত ৬৬ বছরে আমাদের সম্পর্ক চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে। এতে স্পষ্ট হয়, বিভক্তি যত দীর্ঘ হোক না কেন—কোনো শক্তিই আমাদের আলাদা করতে পারবে না। আমরা একই পরিবার।’
জবাবে ইং-জু বলেন, প্রথম বৈঠক হলেও তাঁর মনে হচ্ছে যেন পুরোনো বন্ধুর সঙ্গেই আলাপ করছেন। তাঁদের পেছনে পড়ে আছে ৬০ বছরের ইতিহাস। শত্রুতার পরিবর্তে এখন তাঁরা মিলনের আভাস পাচ্ছেন।
বহুল আলোচিত বৈঠকে গতকাল কোনো চুক্তি সম্পাদন হয়নি। কোনো যৌথ বিবৃতিও দেননি নেতারা। দক্ষিণ চীন সাগরে জলসীমা নিয়ে পারস্পরিক বিরোধের বিষয়টিও আলোচনায় স্থান পায়নি। তবে শত্রুতার মাত্রা কমিয়ে শান্তির পথে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে দুই নেতা কথা বলেছেন। এ ধরনের আলোচনার মাধ্যমে তাইওয়ান নিজেদের পক্ষে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে চীনের কাছ থেকে অধিকতর স্বীকৃতি পাওয়ার চেষ্টা করছে।
চীন ও তাইওয়ান এখনো পরস্পরের আইনি বৈধতা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি। দুই পক্ষের মধ্যে সর্বশেষ শীর্ষ বৈঠক হয়েছিল ১৯৪৫ সালে। কমিউনিস্ট বিপ্লবী নেতা মাও সে তুং পুনর্মিলনের চেষ্টায় তখন চীনের জাতীয়তাবাদী প্রেসিডেন্ট চিয়াং কাই-শেকের সঙ্গে আলোচনা করলেও তা সফল হয়নি। এরপর কমিউনিস্টরা ক্ষমতায় এলে চিয়াংয়ের সেনাবাহিনী এবং প্রায় ২০ লাখ অনুসারী তাইওয়ান দ্বীপে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। সেই থেকে দুই ভূখণ্ডের শাসকদের মধ্যে শত্রুতাপূর্ণ সম্পর্ক বহাল রয়েছে। বেইজিংয়ের কর্তৃপক্ষ মনে করে, তাইওয়ান একটি বিচ্ছিন্ন প্রদেশ এবং একদিন তা আবার চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হবে। কিন্তু তাইওয়ানের অনেকে নিজেদের স্বাধীন মনে করে এবং সেখানে চীনা প্রভাব বৃদ্ধির ব্যাপারটি নিয়ে তাঁরা উদ্বিগ্ন। তাইপেতে তাইওয়ানের পার্লামেন্ট ভবনের সামনে দেশটির প্রায় ১০০ জন নাগরিক গত বুধবার রাতভর বিক্ষোভ করে গতকালের বৈঠক আয়োজনের নিন্দা জানান। bbc
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন