* দেশে রাজনৈতিক সংকট নেই। বিদেশি রাষ্ট্রনায়কেরাও সরকারের বৈধতা কিংবা নির্বাচনের বিষয়ে প্রশ্ন করেননি
* এতই যদি রাজনৈতিক সংকট থাকত, তাহলে বাংলাদেশ এলডিসির নেতৃত্ব কীভাবে পেল?
ইতালি ও জাপানের নাগরিক হত্যাকাণ্ডে বিএনপি-জামায়াতের হাত থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি মনে করেন, এ ঘটনায় সরকারের সব অর্জন ম্লান হয়ে যায়নি। বিদেশি নাগরিকদের হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও বিচার নিশ্চিত করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিয়ে দেশে ফেরার পর গতকাল রোববার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বিএনপি-জামায়াতের যোগসূত্র বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ ঘটনার পেছনে নিশ্চয়ই তাদের মদদ আছে। আমাদের অর্জনগুলো ম্লান করার জন্য এ ঘটনাগুলো ঘটানো হয়। এটার পেছনে নিশ্চয়ই একটা উদ্দেশ্য আছে। তাদের হাত আছে।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘দুজন বিদেশি নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে। তাঁদের হত্যার স্টাইলটা একই রকম। ইতালির নাগরিককে চারটি গুলি মারা হয়েছে। একটা গুলিও মিসফায়ার হয়নি। চারটা গুলিই লাগল। এটা সুপরিকল্পিত। আমি স্মরণ করাতে চাই এর আগে বিএনপির এক নেতার বক্তব্য। এরপর তাঁর রি-অ্যাকশন। সেগুলো যদি মিলিয়ে দেখেন, তাহলে জিনিসটা খুব স্পষ্ট হয়ে যায়।’ তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে। তারাই পঁচাত্তরের পর ২১ বছর ক্ষমতায় ছিল। আজকে তাদের যখন বিচার হচ্ছে, কিছু রি-অ্যাকশন তো হবেই। এখানে কিছু গণসচেতনতা দরকার।’
প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন শুরু করেন বেলা সাড়ে ১১টায়। প্রথমে তিনি লিখিত বক্তব্যে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনে যোগদান, বিভিন্ন বৈঠকে অংশ নেওয়া এবং সরকারের নানা অর্জন তুলে ধরেন। এরপর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।
প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গেই বলেন, দেশে কোনো রাজনৈতিক সংকট নেই। বিদেশি রাষ্ট্রনায়কেরাও সংকটের কথা বলেননি। সরকারের বৈধতা কিংবা নির্বাচনের বিষয়েও কেউ তাঁকে প্রশ্ন করেননি। প্রধানমন্ত্রী বেতন ও মর্যাদার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলনের ব্যাপারে বিরক্তি প্রকাশ করেন এবং শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নষ্ট না করার আহ্বান জানান।
বড় অর্জন বাদ দিয়ে ছোট দুর্ঘটনা নিয়ে বেশি সংবেদনশীল না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেখানেই থাকি, এখন তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। যখন যে ঘটনা ঘটছে খবর পাচ্ছি। ইনস্ট্রাকশন দিচ্ছি। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। কাজেই আমি আপনাদের বলব, সব অর্জন একেবারে ধ্বংস হয়ে গেল এ ঘটনায়; এই যদি আপনাদের চিন্তাভাবনা হয়, তাহলে আমার মনে হয়, ওই বিএনপি-জামায়াত রাজাকারদের যে উদ্দেশ্য, সেটাই সফল।’
প্রধানমন্ত্রী অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দল না আসার প্রসঙ্গে বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দল যে এল না, অস্ট্রেলিয়ায় কী ঘটল? সেখানেও সঙ্গে সঙ্গে দুজনকে গুলি করে মারল। আমি জানি না, আমাদের মিডিয়াগুলো হাইলাইট করেছে কি না। অস্ট্রেলিয়া কী জবাব দেবে? যেসব দেশ বাংলাদেশে একজন হত্যার পর রি-অ্যাকশন দেখাল, তারা অস্ট্রেলিয়ার এই হত্যাকাণ্ড এবং আমেরিকার স্কুলে গুলি করে হত্যার পর কী করল? তারা কি সেখানে ঘোষণা দিয়ে দিয়েছে, এখানে রেড অ্যালার্ট হয়ে গেছে? আমরা একটা ঘটনা ঘটলে বেশি সেনসেটিভ হয়ে যাই। অর্জনগুলো যেন শ্যাডো হয়ে গেল। অর্জনগুলো হারিয়ে গেল। আমরা এত মানসিক দৈন্যে কেন ভুগি?’
গবেষণায় এসেছে, সরকার ও দলের চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বেশি জনপ্রিয়। দল, সরকার ও ব্যক্তি শেখ হাসিনার মধ্যে এই পার্থক্য কেন—এ প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা গাছ যখন বেড়ে ওঠে, সেই গাছের শিকড় থাকে। আপনি গাছটা দেখেন, ফুলটা দেখেন, ফলটা দেখেন। কিন্তু শিকড়টা দেখেন না। আমার রেটিং যাই হোক না কেন, আমার শিকড় হচ্ছে আমার দল। দলের সহযোগিতা আছে, সমর্থন আছে বলেই আমি এত দূর উঠতে পেরেছি।’
বাংলা নববর্ষে উৎসব ভাতা চালু করা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে এই উৎসবে সবাই যোগ দেয়। সর্বজনীনভাবে এই উৎসব পালিত হয়। সেটা বিবেচনায় নিয়ে পয়লা বৈশাখে উৎসব বোনাস দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ মন্ত্রিপরিষদের বেশ কয়েকজন সদস্য, আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
দেশে সংকট নেই, বিদেশিদের আগ্রহ উন্নয়ন: বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা, মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে বিদেশি সরকারপ্রধানদের মনোভাবের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, নেদারল্যান্ডসের রানি, সুইডেন ও বেনিনের প্রধানমন্ত্রী—কেউ এসব বিষয়ে কোনো প্রশ্ন তোলেননি। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান, মন্ত্রী যাঁদের সঙ্গে দেখা হয়েছে, কেউ বাংলাদেশে সংকট বা নির্বাচন বিষয়ে আলোচনাই করেননি। বরং বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকেই তাঁরা সাধুবাদ জানিয়েছেন।
জাতিসংঘে বাংলাদেশ বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন এলডিসির নেতৃত্বে বাংলাদেশ। এতই যদি রাজনৈতিক সংকট থাকত, তাহলে বাংলাদেশ এলডিসির নেতৃত্ব কীভাবে পেল? সংকট দেশের বাইরে না, দেশের ভেতরের কিছু মানুষের মনের সংকট চলছে। বনের বাঘে খায় না, মনের বাঘে খায়। বাইরে কোনো সংকটের কথা কেউ বলেননি, দেখিওনি।’
বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের সময় মানুষ পুড়িয়ে মারার ঘটনাকে বিদেশিরা ভালোভাবে নেয়নি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা-ওটা ঘটনা তো ঘটতেই থাকবে এবং তারা চুপ করে তো বসে থাকবে না। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করব আর তারা চুপ করে বসে থাকবে, এটা আপনারা আশা করেন কী করে? তারা তো প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করতেই থাকবে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি দরকার জনসচেতনতা। আমাদের সচেতন হতে হবে। হ্যাঁ, তাদের লবিস্ট আছে, টাকাপয়সা আছে। হয়তো লবিস্ট নিয়োগ করে কিছু কথা বলাতে পারে, লেখাতে পারে, এটা ঠিক। কিন্তু বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারাটা আমরা রাখতে পেরেছি।’
আইএস নেই: দুজন বিদেশি নাগরিক হত্যায় আইএসের মতো জঙ্গি সংগঠনের সংশ্লিষ্টতার খবর সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইতালির নাগরিককে হত্যার পর শিকাগো থেকে সোশ্যাল স্ট্যাটাস আসে—আইএস এর সঙ্গে জড়িত। তার সম্পৃক্ততা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। ঘটনা তো তদন্ত করতে হবে। এখানকার গোয়েন্দারা কোনো সূত্র এখনো পায়নি। তখন কে একটা স্ট্যাটাস দিয়ে দিল, তা আমাদের গ্রহণ করতে হবে? কেন করতে হবে?’
জঙ্গি মোকাবিলায় বর্তমান সরকার নতুন কোনো কৌশল নিয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম ও সীমানা নেই। কেউ জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেবে না। দেশে কেউ কোথাও এ ধরনের কোনো খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানান। তারা যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
সাংসদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে: গাইবান্ধার আওয়ামী লীগের সাংসদ মন্জুরুল ইসলামের গুলিতে শিশু রক্তাক্ত হওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটা বিশাল সংগঠন, সেই সংগঠনে অনেক কিছুই ঘটতে পারে। কিন্তু আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি কি না, সেটাই বড় কথা। আমরা কিন্তু ঘটনা ধামাচাপা দিই না, প্রশ্রয়ও দিই না। কাল আসার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এটা নিয়ে আলাপ করেন। সঙ্গে সঙ্গে আমি বললাম, এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের রাজনৈতিক অবস্থা বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সুন্দরগঞ্জে জামায়াতের উৎপাত আছে। ওখানে সংগঠন টিকিয়ে রাখাই কঠিন। কারণ, ওখানে জামায়াতে ইসলামী খুন-খারাবি করছে। সেখানে আওয়ামী লীগের নেতাদের হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করতে হবে। তবে সরকার সাংসদের অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করেছে, মামলা দেওয়া হয়েছে।
দেশের সমস্যা দেশেরই সম্পদ দিয়ে মোকাবিলা করছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা করছি, শুরু করেছি। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। হাত পেতে চলা আর দাও দাও করা, এটা চাই না। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। বিজয়ী জাতি। মাথা উঁচু করে চলতে চাই। যদি আমাদের নুন-ভাতও খেতে হয়, নিজের উপার্জনে খাব। ধার করা টাকা দিয়ে বিরিয়ানি খেতে রাজি না।’
আওয়ামী লীগেও দেশপ্রেমিক ব্যক্তি আছেন, ভবিষ্যতে সরকার গঠন করলে তাঁদের নিয়েই দেশ পরিচালনা করা হবে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লন্ডনে এমন বক্তৃতা করেছেন বলে একজন সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনি কী বললেন? উনি আওয়ামী লীগে প্রেমিক খুঁজে পেয়েছেন? উনি আওয়ামী লীগে প্রেমিক কীভাবে খুঁজে পেলেন, আমি জানি না। উনি যদি আওয়ামী লীগে দেশপ্রেমিক খুঁজে পান, খুব ভালো কথা।’
নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াতের বিক্ষোভে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাঁর ব্যাপারে আমার কমেন্ট করার কিছু নাই। যার যে আপন জায়গা খুঁজে পেয়েছে। দেশবাসী বিচার করুক।’
prothom alo
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিয়ে দেশে ফেরার পর গতকাল রোববার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বিএনপি-জামায়াতের যোগসূত্র বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ ঘটনার পেছনে নিশ্চয়ই তাদের মদদ আছে। আমাদের অর্জনগুলো ম্লান করার জন্য এ ঘটনাগুলো ঘটানো হয়। এটার পেছনে নিশ্চয়ই একটা উদ্দেশ্য আছে। তাদের হাত আছে।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘দুজন বিদেশি নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে। তাঁদের হত্যার স্টাইলটা একই রকম। ইতালির নাগরিককে চারটি গুলি মারা হয়েছে। একটা গুলিও মিসফায়ার হয়নি। চারটা গুলিই লাগল। এটা সুপরিকল্পিত। আমি স্মরণ করাতে চাই এর আগে বিএনপির এক নেতার বক্তব্য। এরপর তাঁর রি-অ্যাকশন। সেগুলো যদি মিলিয়ে দেখেন, তাহলে জিনিসটা খুব স্পষ্ট হয়ে যায়।’ তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে। তারাই পঁচাত্তরের পর ২১ বছর ক্ষমতায় ছিল। আজকে তাদের যখন বিচার হচ্ছে, কিছু রি-অ্যাকশন তো হবেই। এখানে কিছু গণসচেতনতা দরকার।’
প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন শুরু করেন বেলা সাড়ে ১১টায়। প্রথমে তিনি লিখিত বক্তব্যে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনে যোগদান, বিভিন্ন বৈঠকে অংশ নেওয়া এবং সরকারের নানা অর্জন তুলে ধরেন। এরপর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।
প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গেই বলেন, দেশে কোনো রাজনৈতিক সংকট নেই। বিদেশি রাষ্ট্রনায়কেরাও সংকটের কথা বলেননি। সরকারের বৈধতা কিংবা নির্বাচনের বিষয়েও কেউ তাঁকে প্রশ্ন করেননি। প্রধানমন্ত্রী বেতন ও মর্যাদার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলনের ব্যাপারে বিরক্তি প্রকাশ করেন এবং শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নষ্ট না করার আহ্বান জানান।
বড় অর্জন বাদ দিয়ে ছোট দুর্ঘটনা নিয়ে বেশি সংবেদনশীল না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেখানেই থাকি, এখন তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। যখন যে ঘটনা ঘটছে খবর পাচ্ছি। ইনস্ট্রাকশন দিচ্ছি। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। কাজেই আমি আপনাদের বলব, সব অর্জন একেবারে ধ্বংস হয়ে গেল এ ঘটনায়; এই যদি আপনাদের চিন্তাভাবনা হয়, তাহলে আমার মনে হয়, ওই বিএনপি-জামায়াত রাজাকারদের যে উদ্দেশ্য, সেটাই সফল।’
প্রধানমন্ত্রী অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দল না আসার প্রসঙ্গে বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দল যে এল না, অস্ট্রেলিয়ায় কী ঘটল? সেখানেও সঙ্গে সঙ্গে দুজনকে গুলি করে মারল। আমি জানি না, আমাদের মিডিয়াগুলো হাইলাইট করেছে কি না। অস্ট্রেলিয়া কী জবাব দেবে? যেসব দেশ বাংলাদেশে একজন হত্যার পর রি-অ্যাকশন দেখাল, তারা অস্ট্রেলিয়ার এই হত্যাকাণ্ড এবং আমেরিকার স্কুলে গুলি করে হত্যার পর কী করল? তারা কি সেখানে ঘোষণা দিয়ে দিয়েছে, এখানে রেড অ্যালার্ট হয়ে গেছে? আমরা একটা ঘটনা ঘটলে বেশি সেনসেটিভ হয়ে যাই। অর্জনগুলো যেন শ্যাডো হয়ে গেল। অর্জনগুলো হারিয়ে গেল। আমরা এত মানসিক দৈন্যে কেন ভুগি?’
গবেষণায় এসেছে, সরকার ও দলের চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বেশি জনপ্রিয়। দল, সরকার ও ব্যক্তি শেখ হাসিনার মধ্যে এই পার্থক্য কেন—এ প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা গাছ যখন বেড়ে ওঠে, সেই গাছের শিকড় থাকে। আপনি গাছটা দেখেন, ফুলটা দেখেন, ফলটা দেখেন। কিন্তু শিকড়টা দেখেন না। আমার রেটিং যাই হোক না কেন, আমার শিকড় হচ্ছে আমার দল। দলের সহযোগিতা আছে, সমর্থন আছে বলেই আমি এত দূর উঠতে পেরেছি।’
বাংলা নববর্ষে উৎসব ভাতা চালু করা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে এই উৎসবে সবাই যোগ দেয়। সর্বজনীনভাবে এই উৎসব পালিত হয়। সেটা বিবেচনায় নিয়ে পয়লা বৈশাখে উৎসব বোনাস দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ মন্ত্রিপরিষদের বেশ কয়েকজন সদস্য, আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
দেশে সংকট নেই, বিদেশিদের আগ্রহ উন্নয়ন: বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা, মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে বিদেশি সরকারপ্রধানদের মনোভাবের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, নেদারল্যান্ডসের রানি, সুইডেন ও বেনিনের প্রধানমন্ত্রী—কেউ এসব বিষয়ে কোনো প্রশ্ন তোলেননি। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান, মন্ত্রী যাঁদের সঙ্গে দেখা হয়েছে, কেউ বাংলাদেশে সংকট বা নির্বাচন বিষয়ে আলোচনাই করেননি। বরং বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকেই তাঁরা সাধুবাদ জানিয়েছেন।
জাতিসংঘে বাংলাদেশ বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন এলডিসির নেতৃত্বে বাংলাদেশ। এতই যদি রাজনৈতিক সংকট থাকত, তাহলে বাংলাদেশ এলডিসির নেতৃত্ব কীভাবে পেল? সংকট দেশের বাইরে না, দেশের ভেতরের কিছু মানুষের মনের সংকট চলছে। বনের বাঘে খায় না, মনের বাঘে খায়। বাইরে কোনো সংকটের কথা কেউ বলেননি, দেখিওনি।’
বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের সময় মানুষ পুড়িয়ে মারার ঘটনাকে বিদেশিরা ভালোভাবে নেয়নি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা-ওটা ঘটনা তো ঘটতেই থাকবে এবং তারা চুপ করে তো বসে থাকবে না। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করব আর তারা চুপ করে বসে থাকবে, এটা আপনারা আশা করেন কী করে? তারা তো প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করতেই থাকবে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি দরকার জনসচেতনতা। আমাদের সচেতন হতে হবে। হ্যাঁ, তাদের লবিস্ট আছে, টাকাপয়সা আছে। হয়তো লবিস্ট নিয়োগ করে কিছু কথা বলাতে পারে, লেখাতে পারে, এটা ঠিক। কিন্তু বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারাটা আমরা রাখতে পেরেছি।’
আইএস নেই: দুজন বিদেশি নাগরিক হত্যায় আইএসের মতো জঙ্গি সংগঠনের সংশ্লিষ্টতার খবর সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইতালির নাগরিককে হত্যার পর শিকাগো থেকে সোশ্যাল স্ট্যাটাস আসে—আইএস এর সঙ্গে জড়িত। তার সম্পৃক্ততা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। ঘটনা তো তদন্ত করতে হবে। এখানকার গোয়েন্দারা কোনো সূত্র এখনো পায়নি। তখন কে একটা স্ট্যাটাস দিয়ে দিল, তা আমাদের গ্রহণ করতে হবে? কেন করতে হবে?’
জঙ্গি মোকাবিলায় বর্তমান সরকার নতুন কোনো কৌশল নিয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম ও সীমানা নেই। কেউ জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেবে না। দেশে কেউ কোথাও এ ধরনের কোনো খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানান। তারা যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
সাংসদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে: গাইবান্ধার আওয়ামী লীগের সাংসদ মন্জুরুল ইসলামের গুলিতে শিশু রক্তাক্ত হওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটা বিশাল সংগঠন, সেই সংগঠনে অনেক কিছুই ঘটতে পারে। কিন্তু আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি কি না, সেটাই বড় কথা। আমরা কিন্তু ঘটনা ধামাচাপা দিই না, প্রশ্রয়ও দিই না। কাল আসার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এটা নিয়ে আলাপ করেন। সঙ্গে সঙ্গে আমি বললাম, এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের রাজনৈতিক অবস্থা বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সুন্দরগঞ্জে জামায়াতের উৎপাত আছে। ওখানে সংগঠন টিকিয়ে রাখাই কঠিন। কারণ, ওখানে জামায়াতে ইসলামী খুন-খারাবি করছে। সেখানে আওয়ামী লীগের নেতাদের হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করতে হবে। তবে সরকার সাংসদের অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করেছে, মামলা দেওয়া হয়েছে।
দেশের সমস্যা দেশেরই সম্পদ দিয়ে মোকাবিলা করছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা করছি, শুরু করেছি। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। হাত পেতে চলা আর দাও দাও করা, এটা চাই না। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। বিজয়ী জাতি। মাথা উঁচু করে চলতে চাই। যদি আমাদের নুন-ভাতও খেতে হয়, নিজের উপার্জনে খাব। ধার করা টাকা দিয়ে বিরিয়ানি খেতে রাজি না।’
আওয়ামী লীগেও দেশপ্রেমিক ব্যক্তি আছেন, ভবিষ্যতে সরকার গঠন করলে তাঁদের নিয়েই দেশ পরিচালনা করা হবে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লন্ডনে এমন বক্তৃতা করেছেন বলে একজন সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনি কী বললেন? উনি আওয়ামী লীগে প্রেমিক খুঁজে পেয়েছেন? উনি আওয়ামী লীগে প্রেমিক কীভাবে খুঁজে পেলেন, আমি জানি না। উনি যদি আওয়ামী লীগে দেশপ্রেমিক খুঁজে পান, খুব ভালো কথা।’
নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াতের বিক্ষোভে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাঁর ব্যাপারে আমার কমেন্ট করার কিছু নাই। যার যে আপন জায়গা খুঁজে পেয়েছে। দেশবাসী বিচার করুক।’
prothom alo
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন