ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বা বিসিসিআইয়ের নতুন প্রেসিডেন্ট বা সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন শশাঙ্ক মনোহর। বোর্ড-প্রধানের পদে বসেই তিনি ভারতীয় ক্রিকেটকে ‘স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
রবিবার মুম্বইতে বিসিসিআইয়ের বিশেষ সাধারণ সভায় মি মনোহর সর্বসম্মতিক্রমে নতুন বোর্ড সভাপতি নির্বাচিত হন। তার বিরোধিতা করে অন্য আর কেউই প্রার্থী হননি।গত মাসে কলকাতায় জগমোহন ডালমিয়ার মৃত্যুর ফলেই ভারতীয় বোর্ড-প্রধানের পদে এই নির্বাচন প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। মাত্র কয়েক মাস আগে এ বছরের গোড়ার দিকে মি ডালমিয়া বিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
মি ডালমিয়ার জায়গায় শশাঙ্ক মনোহরের এই প্রত্যাবর্তন বেশ নাটকীয়ই বলা যায়, কারণ নাগপুরের দুঁদে আইনজীবী মি মনোহর ক্রিকেট প্রশাসন থেকে একরকম অবসরই নিয়ে ফেলেছিলেন।
এই নির্বাচনের ফলে আগামী ২০১৭ সাল পর্যন্ত মি মনোহর ভারতীয় বোর্ডের দায়িত্ব সামলাবেন। এর আগে ২০০৮ থেকে ২০১১ সালের মধ্যেও তিনি বোর্ড প্রেসিডেন্টের পদে ছিলেন।
শশাঙ্ক মনোহর ভারতীয় বোর্ড-প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় ক্রিকেটে বিতর্কিত এন শ্রীনিবাসনের প্রভাব আরও সঙ্কুচিত হল বলেই ধারণা করা হচ্ছে। মি শ্রীনিবাসন এদিন মুম্বইয়ে বোর্ডের বৈঠকেও যোগ দেননি।
পূর্বাঞ্চলের ছটি ইউনিটই মি মনোহরের নাম একযোগে সভাপতি হিসেবে প্রস্তাব করেছিল। এই সব ইউনিটের অনেকেই অল্প কিছুদিন আগেও ছিলেন মি শ্রীনিবাসনের ঘোষিত ও একনিষ্ঠ সমর্থক।
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তাঁর প্রথম সাংবাদিক বৈঠকেই মি মনোহর ঘোষণা করেছেন, ভারতীয় ক্রিকেটকে দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য বিসিসিআই আগামী দুমাসের মধ্যেই বেশ কয়েকটি কঠোর পদক্ষেপ নেবে।
যেমন ক্রিকেট থেকে ম্যাচ ফিক্সিং বা স্পট ফিক্সিংয়ে ভূত তাড়াতে ক্রিকেটারদের আলাদা করে শিক্ষিত করে তোলা হবে।
প্রতিটি রাজ্য ক্রিকেট সংস্থার অ্যাকাউন্টস সামলাবেন বাইরে থেকে নিযুক্ত নিরপেক্ষ অফিসাররা, প্রতিটি বড় খরচের হিসেবও ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।
কাজেকর্মে স্বচ্ছ্বতা ভারতীয় বোর্ডও তাদের সব তথ্য এবং হিসেবের খুঁটিনাটি নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে।
এছাড়া ভারতীয় বোর্ড নানা ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ বা ‘স্বার্থের সংঘাত’-জনিত অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখতে একজন এথিকস অফিসারও নিয়োগ করবে বলে মি মনোহর জানান।
এই ঘোষণা স্পষ্টত এন শ্রীনিবাসনকে নিশানা করেই, কারণ বোর্ড প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন তিনি যেভাবে আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি চেন্নাই সুপার কিংসের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন তাতে ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’-এর অভিযোগ উঠেছে বারে বারে।
মি শ্রীনিবাসন এখন ভারতীয় বোর্ডের প্রতিনিধি হিসেবে আইসিসি চেয়ারম্যানেরও দায়িত্ব সামলাচ্ছেন, কিন্তু শশাঙ্ক মনোহরের নেতৃত্বাধীন বোর্ড চাইলে তাঁকে প্রত্যাহারও করে নিতে পারে।
শশাঙ্ক মনোহরের নির্বাচনে যিনি বড় ভূমিকা রেখেছেন, সেই প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও ভারতীয় বোর্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট শরদ পাওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছেন শ্রীনিবাসনকে প্রত্যাহার করার সম্ভাবনা আছে যথেষ্ঠই।
শশাঙ্ক মনোহর একজন সৎ ও কড়া ধাঁচের প্রশাসক হিসেবেই পরিচিত, তার আমলে ভারতীয় ক্রিকেট নানা বিতর্কের কাদা ঝেড়ে ফেলে আবার নতুন ঝলমলে চেহারায় ফিরতে পারে বলে ভারতের ক্রিকেট-অনুরাগীরা অনেকেই আশা করছেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন