বাংলাদেশের রংপুর জেলার কাউনিয়া থানায় অজ্ঞাত আততায়ীর গুলিতে এক জাপানি নাগরিক নিহত হবার ঘটনায় চার ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, শনিবার সকাল ১১ টার দিকে আলুটারি এলাকায় হোশি কুনিও নামের আনুমানিক ৫০ বছর বয়স্ক ওই জাপানি নাগরিক গুলিবিদ্ধ হন এবং হাসপাতালে নেবার পর মৃত্যুবরণ করেন। গুলি করার পর হত্যাকারীরা একটি মোটরবাইকে করে পালিয়ে যায় বলে জানিয়েছে স্থানীয় পুলিশ।গুলির শব্দ শুনে আশেপাশের লোকজন এসে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। মি. কুনিওর বুকে, ঘাড়ে এবং কোমরের নিচে তিনটি গুলির চিহ্ন রয়েছে।
এই খুনের ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাওয়ালা মুন্নাফ হোসেন, মি. কুনিওর ব্যবসায়িক পার্টনার মো. জাকারিয়াসহ সহ চারজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানিয়েছেন, মি. কুনিও গত ৩-৪ মাস যাবত রংপুর শহরে অবস্থান করছিলেন। তিনি একজন বাংলাদেশির ব্যক্তির সাথে যৌথভাবে আলুটারি এলাকায় উন্নত ধরনের জাপানি ঘাস চাষের একটি প্রকল্প চালাচ্ছিলেন। সেই খামারে যাওয়ার পথেই তিনি গুলিবিদ্ধ হন
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, তিনটি মোটর সাইকেলে করে ৬ জন আরোহী এসে রিকশা থামিয়ে মি. কুনিওর পথ রোধ করে। তারা সবাই হেলমেট পরা ছিল এবং হেলমেট রঙিন গ্লাস ছিল। আর যে জায়গাতে খুন করা হয় সেটি গ্রামীণ কাঁচা রাস্তা। ঘাসের খামারটি সেই রাস্তা থেকে ১শ গজের মত দূরত্বে।
এর মাত্র ৫ দিন আগে গত সোমবার রাতে ঢাকার গুলশান এলাকায় একজন ইতালীয় নাগরিককে গুলি করে হত্যা করা হয়। দুটো হত্যার ঘটনাতেই হামলাকারীরা মোটরসাইকেল আরোহী ছিল বলে জানা যাচ্ছে।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, দুটি হত্যাকান্ডই একই ভাবে ঘটানো হয়েছে এবং এগুলো মধ্যে কোন যোগসূত্র আছে কিনা - তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, দুটি ঘটনাই একই উদ্দেশ্যে ঘটানো হয়ে থাকতে পারে। "প্রাথমিকভাবে যেটুকু বুঝতে পারছি - তাতে মনে হচ্ছে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য এবং বিদেশীদের কাছে দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল বলে তুলে ধরার জন্য হয়তো এগুলো করা হচ্ছে।"
রংপুরের এই হত্যাকাণ্ডকারা ঘটিয়েছে সে সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায়নি। পুলিশ বলছে, নিহত ব্যাক্তির কাছ থেকে কোন মূল্যবান দ্রব্য খোয়া যায়নি।
স্থানীয় সাংবাদিক জুয়েল আহমেদ জানান, মাল্টিপল ভিসা নিয়ে তিনি প্রথম বাংলাদেশে আসেন সাত-আট মাস আগে। এর মাঝে তিনি একাধিকবার জাপানে আসা যাওয়া করেছেন। সর্বশেষ ২৮শে আগস্ট তিনি আবারও রংপুরে আসেন। তিনি শহরের একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন এবং জাপানে প্রবাসী একজন বাংলাদেশী ব্যক্তির সাথে যৌথভাবে খামারটি চালাচ্চিলেন।
মি. কুনিও যে বাসায় থাকতেন আরও কয়েকজন বিদেশী ছাত্র ভাড়া থাকেন বলে জানান, সাংবাদিক জুয়েল আহমেদ। প্রায় প্রতিদিন তিনি পরিচিত রিকশায় সেই খামারে যেতেন বলে জানান তিনি।
ওই বাড়ির নৈশপ্রহরী জানিয়েছে, মি. কুনিও প্রতিদিন সকালে বেরিয়ে যেতেন এবং রাতে ফিরতেন।
এদিকে ৫দিনের ব্যবধানে বাংলাদেশে দুজন বিদেশী নাগরিককে হত্যার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি।
আজ নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে এ ধরনের ঘটনার পেছনে সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ি করা হয়।
গত সোমবার ঢাকার গুলশানে ইতালির নাগরিক তাভেল্লা সিজারকে গুলি করে হত্যা করা হয় এবং সেখানেও আততায়ীরা মোটরসাইকেল আরোহী ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন