শনিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৫

ভারতে লেখকদের সুরক্ষার দাবি জানালো সাহিত্য একাডেমী

 
                                
ভারতে লেখকদের অব্যাহত প্রতিবাদের মুখে অবশেষে দেশটির সাহিত্য বিষয়ক সর্বোচ্চ সংস্থা 'সাহিত্য একাডেমী' লেখকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছে।
ভারতের প্রায় ৩৫ জন খ্যাতিমান লেখক সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার প্রেক্ষিতে এক জরুরী সভার পরে এই আবেদন জানিয়েছে একাডেমী।
ওই লেখকেরা গোমাংস খাওয়ার গুজব ছড়িয়ে একজন মুসলমানকে পিটিয়ে মেরে ফেলার প্রতিবাদ, ক্রমবর্ধমান ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা এবং হিন্দুত্ববাদীদের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন – এমন কয়েকজন লেখকের হত্যার বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
একের পর এক সাহিত্যিকের পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনার প্রেক্ষিতে আজ সাহিত্য একাডেমীর কার্যনির্বাহী বোর্ডের যে সভা হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে যে সব ধর্ম, বর্ণ, মতবাদের মানুষে সহাবস্থানই ভারতের বহুত্ববাদকে পৃথিবীর কাছে পরিচিত করেছে। একে রক্ষা করতেই হবে। একই সঙ্গে লেখকদের বাক স্বাধীনতা যাতে কোনও ভাবেই ব্যাহত না হয়, এবং সাহিত্যিকদের ওপরে হামলা না হয়, তা-ও কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলিকে সুনিশ্চিত করতে হবে।
              ঘরে গরুর মাংস রাখার গুজবে দাদরিতে পিটিয়ে হত্যা করা হয় মোহাম্মদ আখলাককে                
ওই বৈঠকের পরে সাহিত্য একাডেমীর সভাপতি ও হিন্দী সাহিত্যের খ্যাতনামা কবি বিশ্বনাথ প্রসাদ তিওয়ারী বিবিসি বাংলাকে বলেন, “সাহিত্য একাডেমী সবসময়েই লেখকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে থেকেছে। কেন্দ্র আর রাজ্য সরকারগুলির কাছে তাই আবেদন যে লেখকদের ওপরে হামলা বা তাঁদের হত্যার মতো ঘটনা যাতে কখনও না ঘটে – এটা সরকারগুলোকে সুনিশ্চিত করতে হবে।“
লেখক এম এম কালবুর্গি বা আরও কয়েকজন সাহিত্যিক – বুদ্ধিজীবীর হত্যার ঘটনাগুলির কড়া ভাষায় নিন্দা করেছে একাডেমী। একই সঙ্গে যেসব সাহিত্যিক তাঁদের পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছেন বা একাডেমী থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন, তাঁদেরও সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হয়েছে।
উত্তরপ্রদেশের দাদরিতে সম্প্রতি গোমাংস খাওয়া নিয়ে গুজব ছড়িয়ে যেভাবে ৫০ বছর বয়সী এক মুসলমানকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে, সেপ্রসঙ্গ উঠে এসেছিল প্রতিবাদী লেখদের মুখে।
একাডেমীর প্রধান যদিও জানিয়েছেন যে দাদরির ওই ঘটনাটি নিয়ে বিশেষ কোনও আলোচনা হয় নি আজকের বৈঠকে, তবে সাধারণ ভাবে বহুত্ববাদ বজায় রাখার আবেদন জানানো হয়েছে।
                 সাহিত্য একাডেমীর প্রধান বিশ্বনাথ প্রসাদ তিওয়ারী                
সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছেন – এমন একজন হিন্দী ভাষার কবি রাজেশ যোশী বিবিসি বাংলাকে টেলিফোনে বলছিলেন, একাডেমী সাহস করে ক্রমবর্ধমান ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বা সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারল না!
রাজেশ যোশীর কথায়, “বোঝাই যাচ্ছে যে একাডেমীর সাহস নেই – যে কারণে এতজন লেখক পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছে, সে ব্যাপারে সরকারের হস্তক্ষেপ দাবী করতে পারল না, প্রধানমন্ত্রী বা সংস্কৃতি মন্ত্রীর বিবৃতি দাবী করতে পারল না একাডেমী!!”
ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা আর সাম্প্রদায়িকতা যে ভাবে বেড়ে চলেছে সরকারী তরফে, তারই তো ফল লেখক কালবুর্গির হত্যা অথবা দাদরি গ্রামের ঘটনা, মন্তব্য হিন্দী কবি রাজেশ যোশীর।
সাহিত্য একাডেমীর বৈঠকের আগে আজ দিল্লিতে লেখক-সাহিত্যিকেরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে এক মিছিলে সামিল হয়েছিলেন। তবে একাডেমীর বৈঠক থেকে পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার বা একাডেমীর সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করার যে ঘোষণা ৩৫ জন লেখক করেছিলেন, তা নিয়ে কেউই এখনও সিদ্ধান্ত নেন নি। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে তবে এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ ঘোষণা করবেন বলে জানা যাচ্ছে।


 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন