আফ্রিকার মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক ভিত্তিতে বিদেশে শিক্ষালাভ করতে যাওয়ার খবর নতুন নয়।
এদের বেশীরভাগই লেখাপড়া শেষে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে থেকে যায় ভাল ক্যারিয়ার গড়ার আশায়। কিন্তু আফ্রিকার জনগোষ্ঠির মধ্যে এখন শিক্ষা লাভ শেষে নিজেদের মেধা ও জ্ঞান দেশের কাজে লাগানোর জন্য স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সাইদ বিজনেস স্কুলে শিক্ষাপ্রদানের যেসব আধুনিক কলাকৌশল ব্যাবহার করা হয়, তার একটি হল সিনেমা দেখানো।
ক্লাসে যে সিনেমাটি দেখানো হচ্ছিল, তার উদ্দেশ্য হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের এমন একটি বিশ্বের জন্য প্রস্তুত করা যেখানকার বাজার ব্যবস্থার নেতৃত্বে থাকবে এশিয়া ও আফ্রিকা।
সাইদ বিজনেস স্কুলের আন্তর্জাতিক কৌশল বিভাগের পরিচালক স্টিফেন চেম্বারস বলছিলেন, "ওইসব দেশে কি হচ্ছে তা জানা আমাদের জন্য খুবই জরুরী। এবং যারা ওইসব দেশের অর্থনীতির উন্নয়ণ করছে, তারা যাতে সেটা দায়িত্বশীল ও আকর্ষণীয় উপায়ে সেটা করতে পারে সেজন্যও তাদেরকে আমাদের সাহায্য করা জরুরী। আমরা দক্ষিণ আফ্রিকার জনা ত্রিশেক ছাত্রের জন্য এমবিএর কিছু ঐচ্ছিক কোর্স চালু করতে যাচ্ছি আগামি বছর, যেখানে তারা শিখবে আফ্রিকায় গিয়ে কিভাবে তারা ব্যাবসা বাণিজ্য করতে পারবে"।
এমবিএ হলো ব্যবসায় শিক্ষার সবচাইতে সম্মানজনক প্রোগ্রামগুলোর একটি। কিন্তু অক্সফোর্ড কর্তৃপক্ষ এখন এটা বুঝতে পারছে যে এখন হয়তো কৌশল বদলাবার সময় চলে এসেছে।
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এবং মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি এই অক্সফোর্ড। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে প্রায় নয়শো বছরের পুরনো বলে মনে করা হয়।
পুরো সময় জুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি বহু প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, শিল্পী ও লেখক তৈরি করেছে।
বহু আফ্রিকান ছাত্রছাত্রী এখন এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আসছে কিছু দক্ষতা অর্জনের জন্য যাতে করে তারা নিজ দেশে ফিরে নেতৃত্ব দেবার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারে, সেটা রাজনীতিতেই হোক আর ব্যবসা বানিজ্যেই হোক।
এদের একজন মকটার কানে, ২৪ বছর বয়েসী এই যুবক মালি থেকে এসে দর্শন নিয়ে পড়ছে। তার দেশে ক্রমবর্ধমান জিহাদী সংগঠনগুলোর উত্থানের হুমকি এবং ভঙ্গুর গণতন্ত্র সত্বেও মকটার বিশ্বাস করে বিদেশী থাকা আফ্রিকান ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা শেষ করে দেশের সেবা করবার জন্য ফিরে যাওয়া উচিত।
"আমি মনে করি ব্রেইন ড্রেইন মানে শুধুমাত্র আফ্রিকা থেকে মেধা চলে যাওয়া নয়, আমার কাছে ব্রেইন ড্রেইন মানে আফ্রিকার টাকাপয়সাও অন্য দেশে চলে যাওয়া। আমার মতো মানুষ যারা মালির সরকারী স্কুলে লেখাপড়া করেছে, তারা যদি বিদেশে গিয়ে থেকে যায় তাহলে তাদের পেছনে সরকারের পয়সা খরচ করার কি মানে মানে থাকে"?
এটা অবশ্য একজন অক্সফোর্ড পড়ুয়া আফ্রিকান ছাত্রের চিন্তা।
কিন্তু দেখা যাচ্ছে এই চিন্তার প্রতিফলন রয়েছে লন্ডনে থাকা কিছু আফ্রিকান পেশাজীবীর মধ্যেও।
রিক্রুটমেন্ট এজেন্সিগুলো বলছে তাদের তথ্যভান্ডারে দশ লাখের মতো আফ্রিকান তালিকাভুক্ত রয়েছে।
গ্লোবাল ক্যারিয়ার্স কোম্পানির মানসম্পদ বিভাগের পরিচালক শেহেরযাদে যেকার বলছেন, মানুষ এখন আফ্রিকায় ফিরে যেতে প্রস্তুত।
"কিছু খাতে আমরা খুব আগ্রহ দেখতে পাচ্ছি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যাংকিং, ফাইনান্স, তেল-গ্যাস, আইসিটি এবং প্রফেশনাল সার্ভিস। গত বছর তেল-গ্যাস খাতে আগ্রহ সবচাইতে বেশী ছিল, কিন্তু বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমতে থাকায় এবছর আর তেল-গ্যাস খাতে আফ্রিকায় খুব একটা ফিরতে চাচ্ছে না কেউ। যেসব পেশাজীবী ফিরতে চান তারা আমাদেরকে বলেছেন যে, তাদেরকে যে বেতন প্যাকেজের প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে সেটা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ না, তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দেশে ফিরে তারা কি প্রভাব তৈরি করতে পারছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ"।
তারা হয়তো আবেগপ্রবণ কিন্তু, তারপরও তাদেরকে অনেক বাস্তবসম্মত চিন্তা করতে হয়।
এই মুহুর্তে আফ্রিকান দেশগুলোর মুদ্রা বেশ দুর্বল হয়ে রয়েছে। হাসপাতাল বিদ্যুতের মতো মৌলিক সেবাগুলো যথাযথভাবে পাওয়া যাচ্ছে না।
উৎপাদন খাতগুলোতে দেখা দিয়েছে সমস্যার লক্ষ্মণ। ফলে আফ্রিকায় মকটার কানের মতো মানুষের ভবিষ্যত চাকরির বাজার যে নিশ্চিত সেটা বলা যাচ্ছে না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন