প্রদোষ চন্দ্র মিত্রের প্রথম আবির্ভাব হয়েছিল আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে ছোটদের পত্রিকা সন্দেশে। এই প্রদোষ চন্দ্র মিত্রের ডাকনাম ফেলুদা।
১৯৬৫ সালে জন্ম ফেলুদা চরিত্রটির – একটা ছোট গল্পের মাধ্যমে । এক বাঙালী গোয়েন্দা তিনি সেই সময়ে তার বয়স ছিল ২৭ বছর।
কিন্তু তারপরের ৫০ বছর ধরে একই চেহারা রয়ে গেছে চরিত্রটার। সাধারণ বাঙালী যে সমস্যার সমাধান করতে পারেন না, সেটা একমাত্র পারেন সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা।
এখনও ফেলুদার সিনেমা হাউসফুল হয়ে চলে সপ্তাহের পর সপ্তাহ। বাঙালী পাঠককে দুই জেনারেশনেরও বেশী সময় ধরে মাতিয়ে রেখেছে এই ফেলুদা চরিত্রটি।
অপরাধীদের ধরার জন্য কিভাবে কৌশল অবলম্বন করতে হয় সে বিষয়টি উঠে এসছে ফেলুদা চরিত্রে।
খ্যাতনামা চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের তৈরি করা এই চরিত্র দশকের পর দশক পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের পাঠকদের মন মাতিয়ে রেখেছে। আজ থেকে ৫০ বছর আগে সত্যজিৎ রায় এই চরিত্রটি তৈরি করেন।
এই পঞ্চাশ বছর উপলক্ষে কলকাতায় একটি বই প্রকাশ করা হলো। ক্রিকেট ইতিহাসবিদ বোরিয়া মজুমদার এই বইটি লিখেছেন।
কিন্তু পঞ্চাশ বছর পর এই ফেলুদা চরিত্রটি পাঠক এবং দর্শকদের মনে কতটা দাগ কাটতে পারছে?
মি: মজুমদার বলেন এই ফেলুদা হচ্ছে এমন একটি চরিত্র যার সাথে সাধারণ পাঠক নিজেদের মেলাতে পারেন।
ফেলুদা চরিত্রটির চালন-বলন, আচার-ব্যবহার এবং ভাষা – সবকিছুই একজন সাধারণ মধ্যবিত্ত বাঙালীর মতো।
মি: মজুমদার বলছেন জেমস বন্ড বা শার্লক হোমস হচ্ছে স্বপ্নের চরিত্র। তার কাছে মানুষ পৌঁছতে পারেনা। কিন্তু অনেক মানুষ নিজেকে ফেলুদার জায়গায় ভাবতে পারেন।
এই প্রকাশনা উৎসবে প্রায় এক হাজারের মতো লোক জড়ো হয়েছিলেন।
অনুষ্ঠানে আসা একজন দর্শক বলেন, “আমরা যতটা ট্রাই (চেষ্টা) করি আদর্শ মানুষ হবার, ফেলুদা হচ্ছে সেই আদর্শ চরিত্র।”
ফেলুদা চরিত্রটিকে নিয়ে সত্যজিৎ রায় ৩৫টি গল্প লিখেছেন। গল্পের পাশাপাশি ফেলুদা চরিত্রটিকে নিয়ে তৈরি হয়েছে অনেক সিনেমা এবং টেলিভিশন ধারাবাহিক।
কিন্তু ফেলুদাকে নিয়ে একটি হিন্দি টেলিফিল্ম ছাড়া অন্য ভারতীয় ভাষায় কোন সিনেমা হয়নি। এর কারণটা কী?
সত্যজিৎ রায়ের ছেলে এবং চলচ্চিত্র পরিচালক সন্দীপ রায় বলেন, “ ফেলুদা ট্রান্সলেট (অন্য ভাষায়) করা খুব কঠিন। এই গল্পে যে বাঙালিয়ানা আছে সেটাকে অন্যভাষায় অনুবাদ করা যায়না।”
ফেলুদা হচ্ছে এমন একটি চরিত্র যার সাথে প্রযুক্তির কোন সম্পর্ক নেই। তিনি মোবাইল ফোন, ফেসবুক কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না।
মি: মজুমদার প্রশ্ন তোলেন তাহলে এই প্রজন্মের কাছে ফেলুদা চরিত্রটি কতটা প্রাসঙ্গিক থাকবে? এই চরিত্রটিকে এগিয়ে নিতে কী করা দরকার? এ বিষয়গুলো মি: মজুমদার তার বইতে তুলে ধরেছেন।
পশ্চিমা দেশগুলোতে জেমস বন্ড এবং শার্লক হোমসকে নিয়ে অনেক কাজ হয়েছে। সময়ের সাথে সাথে সেই চরিত্রগুলোকেও এগিয়ে নেয়া হয়েছে। সেই তুলনায় ফেলুদা চরিত্রটি কি থমকে গেছে?
মি: মজুমদার বলেন জেমস বন্ড এবং শার্লক হোমস শিল্পে পরিণত হয়েছে যেটিকে কেন্দ্র করে ব্যবসা হচ্ছে প্রচুর।
তিনি বলেন, “ যেখানে জেমস বন্ড থিম পার্ক হচ্ছে, সেখানে কেন ঢাকায় বা কলকাতায় ফেলুদাকে নিয়ে মিউজিয়াম হবেনা?”
তিনি বলেন জেমস বন্ড এবং শার্লক হোমসের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হলে ফেলুদা ব্র্যান্ডকে এগিয়ে নিতে হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন