গজল সম্রাট গুলাম আলি আগামী সপ্তাহে কলকাতায় একটি অনুষ্ঠান করতে চলেছেন।
উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের প্রতিবাদের মুখে অনুষ্ঠান বাতিল করে ফিরে যেতে হয়েছিল মুম্বই থেকে।
ব্যথিত শিল্পী বলেছিলেন, তিনি ভারতে আর কোনোদিনই অনুষ্ঠান করবেন না।
তখনই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার আজ জানিয়েছে, আগামী ১২ই জানুয়ারি কলকাতায় গজলের অনুষ্ঠান করবেন গুলাম আলি।
আজ মোহনবাগান ফুটবল ক্লাবের মাঠ ও স্টেডিয়াম ঘুরে দেখে সেখানেই অনুষ্ঠানটি করার সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।
প্রথমে ইডেন গার্ডেনে ওই অনুষ্ঠানটির কথা ভাবা হলেও ১৫ তারিখে আই সি সি-র কর্মকর্তারা মাঠ পরিদর্শন করতে আসবেন বলে সেখানে গুলাম আলির অনুষ্ঠান করা যাবে না বলে জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা সি এ বি-র সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলি।
গুলাম আলির অনুষ্ঠানের কথা সরকারিভাবে ঘোষণা করেন রাজ্য সংখ্যালঘু বিত্ত ও উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান ও তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য সুলতান আহমেদ।
মি. আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “আমরা আজ মোহনবাগান মাঠ আর গ্যালারী পরিদর্শন করে ওখানেই অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছি। ১২ তারিখ ওখানেই গাইবেন গুলাম আলি।”
মুম্বইতে গুলাম আলির অনুষ্ঠান উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হুমকির মুখে বাতিল করে দিতে হয়েছিল গত বছর।
হিন্দু সংগঠন শিবসেনা বলেছিল ওই পাকিস্তানী শিল্পী যদি মুম্বইতে গান করেন, তাহলে বানচাল করে দেওয়া হবে অনুষ্ঠানটি।
তারা বলেছিল ওই শিল্পীর বিরুদ্ধে বিদ্বেষ নেই, কিন্তু যে পাকিস্তান থেকে একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা চালানো হচ্ছে ভারতের ওপরে, তারই প্রতিবাদে কোনও পাকিস্তানীকে অনুষ্ঠান করতে দেবে না তারা।
তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সুলতান আহমেদের কথায়, “রামমোহন রায়, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্র, নজরুল – এঁরা হলেন ধর্মীয় সহিষ্ণুতার প্রতীক। পশ্চিমবঙ্গে আমরা সহনশীলতার বাতাবরণ এখনও পাই ওইসব মনীষীদের শিক্ষার ফলেই। গুলাম আলির অনুষ্ঠানের দিন আমরা সেই বিশ্ব-ভ্রাতৃত্বের বার্তাই ছড়িয়ে দিতে চাই।”
গুলাম আলির অনুষ্ঠান নিয়ে কলকাতার সঙ্গীতপ্রেমীদের মধ্যে ইতিমধ্যেই উৎসাহ তৈরি হয়েছে।
সঙ্গীত অনুরাগী বাবজি সান্যাল বলছিলেন, “গুলাম আলি গজলের সম্রাট। তাঁর গান সরাসরি শুনতে পাওয়া সারা জীবনের একটা স্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে – যদি আমন্ত্রণপত্র যোগাড় করে উঠতে পারি। মুম্বই বা দিল্লিতে যদি কোনও রাজনৈতিক কারণে তার অনুষ্ঠান না হয়ে থাকে, তাহলে কলকাতাই হল আদর্শ জায়গা – কারণ এই শহর বা এই রাজ্য সাংস্কৃতিক দিক থেকে অন্যদের থেকে এগিয়ে।”
সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎসাহ থাকলেও ১২ তারিখের অনুষ্ঠানের জন্য কোনও টিকিট থাকছে না।
আয়োজক সরকারি সংস্থাটি এটিকে আমন্ত্রণমূলক অনুষ্ঠান করছেন। প্রায় ১৮ থেকে কুড়ি হাজার আমন্ত্রণ পত্র তৈরি হচ্ছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন