সউদি আরবে শিয়া নেতা আল-নিমরের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার পর ইরান থেকে লেবানন পর্যন্ত যে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে আরো একবার উঠে এসেছে শিয়া সুন্নি দ্বন্দ্ব।
ইসলাম ধর্মের বহু শতাব্দী-প্রাচীন এই দ্বন্দ্ব আজও মধ্যপ্রাচ্যের বহু সংঘাতের পেছনে অন্যতম একটি কারণ।
সিরিয়া বা লেবানন থেকে ইরাক বা পাকিস্তান পর্যন্ত মুসলিম বিশ্বের বহু সাম্প্রতিক সংঘাতের পেছনেই রয়েছে এই গোষ্ঠীগত বিভক্তির ইতিহাস - যা এসব অঞ্চলের বহু সম্প্রদায়কে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলেছে।
ইরাক এবং সিরিয়ায় বর্তমানে যে সংঘাত চলছে, তার ওপর শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্বের গভীর প্রভাব রয়েছে। দুটি দেশেই তরুণ সুন্নিরা বিদ্রোহী গ্রুপগুলোতে যোগ দিয়েছে, যার অনেকগুলোই আল-কায়দা বা এর সমগোত্রীয় আদর্শের অনুসারী।
অন্যদিকে শিয়া তরুণদের দেখা যাচ্ছে সরকারি বাহিনীর হয়ে বা তাদের সমর্থনে যুদ্ধ করছে।
লেবাননে ১৯৮০র দশকে গৃহযুদ্ধের সময় হেজবোল্লাহর সামরিক তৎপরতার কারণে শিয়াদের রাজনৈতিক অবস্থা মজবুত হয়।
পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানে তালেবানের মতো কট্টরপন্থী সুন্নি জঙ্গী গ্রুপগুলো অনেকবারই শিয়া মসজিদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে।
দেখা যাচ্ছে, যে সব দেশে সুন্নিরা শাসনক্ষমতায়, সেসব দেশে শিয়ারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অংশ - এবং তারা নিজেদের বৈষম্য আর নিপীড়নের শিকার বলে মনে করে।
সুন্নিদের মধ্যে কিছু উগ্রপন্থী মতাদর্শ আছে যাদের দিক থেকে শিয়াদের ব্যাপারে ঘৃণাসূচক মত প্রচার করতে শোনা গেছে।
ইরানে ১৯৭৯ সালে বিপ্লবের পর এক বিপ্লবী শিয়া ইসলামপন্থী এজেন্ডা প্রচার শুরু হয়, যা বিশেষত উপসাগরের রক্ষণশীল সু্ন্নি শাসকরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখেন।
এ সময় থেকেই ইরান তার সীমান্তের বাইরে শিয়া মিলিশিয়া এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে সমর্থন দিতে শুরু করে, আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে উপসাগরীয় দেশগুলোও সুন্নি সরকার এবং ধর্মীয় আন্দোলনগুলোর সাথে তাদের যোগাযোগ দৃঢ় করতে শুরু করে।
সুন্নি এবং শিয়া উভয় সম্পদ্রায়ের মুসলিমরাই তাদের পবিত্র গ্রন্থ কোরান এবং নবী মুহাম্মদের অনুসারী - কিন্তু তাদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছিল নবী মুহাম্মদের মৃত্যুর পরপরই - তার পরে কে মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব দেবেন, সেই প্রশ্নে মতপার্থক্যকে কেন্দ্র করে।
মূল ধর্মবিশ্বাস ও রীতিনীতি অভিন্ন হলেও দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্মতত্ব, আচার-আচরণ, আইন এবং ধর্মীয় সংগঠনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু তফাৎ আছে। তাদের নেতাদের মধ্যেও দেখা যায় একে অপরের ওপর প্রাধান্য বিস্তারের চেষ্টা।
মুসলিম বিশ্বে সুন্নিরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ, পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ মুসলিমই সুন্নি। অন্যদিকে শিয়াদের সংখ্যা ১২ থেকে ১৭ কোটির মধ্যে - যা মুসলিম জনসংখ্যার দশ শতাংশের মতো।
ইরান, ইরাক, বাহরাইন, আজারবাইজান এবং কারো কারো মতো ইয়েমেনে শিয়ারা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তবে মউদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিরিয়া, তুরস্ক, কাতার , লেবানন, কুয়েত, আফগানিস্তান, ভারত এবং পাকিস্তানে বড় সংখ্যায় শিয়া জনগোষ্ঠী রয়েছে।
তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকলেও ব্যতিক্রমও যে নেই তা নয়। কিছুদিন আগে পর্যন্তও ইরাকের শহরগুলোতে শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে বিয়ে খুবই সাধারণ ঘটনা ছিল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন