রবিবার, ৩ জানুয়ারী, ২০১৬

ইতিহাসের সাক্ষী: অপুর কাহিনি

 

বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের তিন পর্বে তৈরি অপুর কাহিনি পঞ্চাশের দশকে চলচ্চিত্র জগতে এক বিরাট আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল।
শিশু অপুর বাল্যজীবন নিয়ে এর প্রথম খন্ড পথের পাঁচালি ছিল সত্যজিৎ রায়ের প্রথম ছবি যা মুক্তি পেয়েছিল ৬০ বছর আগে।
তরুণ অপুকে নিয়ে তৈরি তৃতীয় পর্বের নায়ক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বিবিসির উইটনেস্ অনুষ্ঠানে কথা বলেছেন সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং অপুর ভূমিকায় তাঁর অভিনয় নিয়ে।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাহিনি পথের পাঁচালিতে বাংলার এক অজ পাড়াগাঁয়ে কঠোর দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকা এক পরিবারে শিশু অপুর বেড়ে ওঠার কাহিনিকে পর্দায় যেভাবে মূর্ত করে তুলেছিলেন সত্যজিৎ রায়, তা তাকে বিশ্ব চলচ্চিত্রের দরবারে অন্যতম সবচেয়ে প্রভাবশালী চিত্র পরিচালক করে তুলেছিল। পাশপাশি এই চলচ্চিত্র বিশ্বের মানুষের কাছে সেই প্রথমবারের মত তুলে ধরেছিল সেসময় ভারতের গ্রামীণ জীবনের ছবি।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেছেন কাব্য ও সুরের মধ্যে দিয়ে সবকিছুকে দেখার ও ছোঁয়ার একটা বিশেষ ক্ষমতা সত্যজিৎ রায়ের ছিল যা তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলেছিল ।
পথের পাঁচালি মুক্তি পাবার সময়ে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বয়স ছিল খুবই কম। তার মনে আছে ছবিটি তার ও তার বন্ধুদের ওপর কীধরনের প্রভাব ফেলেছিল।
তিনি বলেছেন, ''আমাদের দেশে কোনো পরিচালক এধরনের ছবি বানাতে পারেন তা আমার ধারণার বাইরে ছিল। আমরা উৎসুক হয়ে রইলাম এরপর উনি কী ছবি করেন তা দেখার জন্য।''
এরপর সত্যজিৎ রায় পথের পাঁচালির পরবর্তী পর্ব ‘অপরাজিত’ তৈরির কাজে হাত দিলেন। বালক অপুর কিশোর হয়ে ওঠার কাহিনি। অপুর ভূমিকায় অভিনয় করার জন্য সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে ডেকে পাঠালেন পরিচালক সত্যজিৎ রায়। সৌমিত্র রীতিমত হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন কারণ তিনি এর আগে কখনও সিনেমায় অভিনয় করেন নি।
অপুর কাহিনির দ্বিতীয় পর্বে কিশোর অপুর ভূমিকায় অভিনয় করার জন্য সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বয়স ছিল বেশি তাই অপরাজিততে অভিনয়ের সুযোগ তার হল না। তবে সত্যজিৎ রায় যখন তৃতীয় ও শেষ পর্ব ‘অপুর সংসার’ তৈরির কাজ হাতে নেন, তখন তিনি নায়কের ভূমিকায় নামান সৌমিত্রকে।
সৌমিত্র বলেছেন নিজের ওপর আস্থার জায়গাটা সত্যজিৎ রায়কে এনে দিয়েছিল আন্তর্জাতিক খ্যাতি। তিন পর্বের অপুর কাহিনি ‘অপুস্‌ ট্রিলজি’ বিশ্বব্যাপী ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছিল। তার এই ছবিগুলোই ছিল প্রথম ভারতীয় চলচ্চিত্র যা বিশ্ব চলচ্চিত্রে বড়ধরনের একটা আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং বেশ কয়েকটি পুরস্কারে ভূষিত হয়।
বিবিসির এই অনুষ্ঠানে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেছেন সত্যজিৎ রায়ের ছবিগুলো অন্তরকে নাড়া দিত।। তার মনে হয় না আগামী ৫০ বছরে আর একজন সত্যজিৎ রায় বাংলার বুকে জন্ম নেবেন।
১৯৯২ সালে মারা যান সত্যজিৎ রায়। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তার ১৪টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। এখনও তিনি অভিনয় করে যাচ্ছেন রূপোলী পর্দায় ও মঞ্চে।
ইতিহাসের সাক্ষীর এই পর্ব পরিবেশন করেছেন মানসী বড়ুয়া।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন