রবিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৫

জ্যোতির নাবালক ধর্ষক মুক্ত, ভারতে তোলপাড়

 
    india rape
                 বয়সের কারণে জ্যোতি সিং ধর্র্ষণ ও হত্যা মামলায় অন্যতম আসামী (মুখ ঢাকা) মুক্তি পেয়েছে (ফাইল ফটো)
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে তিন বছর আগে একটি চলন্ত বাসে জ্যোতি সিং-য়ের গণধর্ষণ ও হত্যা মামলায় দোষীদের মধ্যে যে নাবালক ছিল, সে আজ তিন বছরের সাজার মেয়াদ শেষে সংশোধনাগার থেকে মুক্তি পেয়েছে।
তার আইনজীবী এই মুক্তির খবর নিশ্চিত করলেও এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছুই জানানো হয়নি – কারণ এই যুবকের মুক্তির বিরুদ্ধে গত কয়েকদিনে ভারতে তীব্র জনমত গড়ে উঠেছে।
ধর্ষিতার বাবা-মাই তার মুক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
তার মুক্তি আটকানোর জন্য শেষ মুহুর্ত অবধি চেষ্টা চালিয়ে গেছেন জ্যোতি সিংয়ের বাবা-মা। রাজধানী দিল্লির ইন্ডিয়া গেটে তারা এদিন বিক্ষোভ মিছিলের পরিকল্পনা করেও শেষ মুহুর্তে পুলিশের বাধায় তা থেকে পিছিয়ে এসেছেন।
তবে আগামিকাল (সোমবার) সুপ্রিম কোর্টে এই যুবকের মুক্তি বাতিল করার জন্য একটি আবেদনেরও শুনানি আছে।
ওই তরুণীর মা আশা সিং এদিন বলেছেন, তাদের মেয়ের একজন ধর্ষণকারী মাত্র তিন বছরের শেষেই সমাজে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে স্রেফ আইনের সীমাবদ্ধতার সুযোগ নিয়ে, অথচ সরকার কিছুই করতে পারল না।
জ্যোতি সিংয়ের বাবা বদ্রিনাথ পাশ থেকে যোগ করেন, যে দেশে মধ্যরাতের পর সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা কোর্ট খুলিয়ে জঙ্গীদের ফাঁসি কার্যকর করার নির্দেশ দিতে পারেন, সেখানে কেন মাঝরাতের পর এই ধর্ষণকারীকে জেলে আটকে রাখার নির্দেশ দেওয়া গেল না – সেটা তার বোধগম্য নয়।
রবিবার বিকেলে যখন তারা এই শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ততক্ষণে দিল্লি বা তার আশেপাশে কোনও অজানা স্থান থেকে মুক্তি দিয়ে দেওয়া হয়েছে ওই কিশোর ধর্ষণকারীকে। ঘটনার সময় তার বয়স ছিল সতেরো বছর নয় মাস।
তার আইনজীবী এ পি সিং এই মুক্তির খবর নিশ্চিত করলেও কোথায় কীভাবে সে মুক্তি পেল, সংশোধনাগার থেকে বেরিয়ে কোথায় গেল সে সব কিছুই জানাননি।
ধর্ষণ                 ধর্ষণ দিল্লিতে বড় ধরনের হুমকি (ফা্‌লি ফটো)                
সরকারও এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নীরবতা বজায় রেখেছে – যদিও সরকারি সূত্রগুলো ইঙ্গিত দিয়েছে তাকে কখনই রাডারের বাইরে যেতে দেওয়া হবে না, বরং কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মারফত তাকে সমাজের মূল স্রোতে ফেরানোর চেষ্টা চলবে।
ওদিকে এখনও তার মুক্তি বাতিল করার ব্যাপারে হাল ছাড়ছেন না দিল্লি মহিলা কমিশনের চেয়ারম্যান স্বাতী মালিওয়াল।
মিস মালিওয়াল, যিনি গত রাতে এই মুক্তি আটকাতে রাত দুটোয় সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন, বলছেন সোমবার সকালে শীর্ষ আদালত এই আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন – ফলে সব আশা এখনও শেষ হয়নি।
তার কথায়, ‘‘সুপ্রিম কোর্টই এখন শেষ ভরসা – কারণ গোটা দেশ এর মুক্তির বিরুদ্ধে হলেও জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট বা নাবালকদের জন্য আইনই যেন সবার হাত-পা বেঁধে রেখেছে।’’
জ্যোতি সিংয়ের মা, যিনি মাত্র দু-তিনদিন আগেই প্রথমবার তার মেয়ের আসল নাম জনসমক্ষে প্রকাশ করেছেন – তিনি অবশ্য এটাকে স্রেফ লোকদেখানো বলেই মনে করছেন। তিনি পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছেন, সবাই তো জানত তিন বছর পরেই ওই ছেলেটি মুক্তি পাবে, তাহলে তা ঠেকানোর জন্য কেউ এতদিন কিছু করেনি কেন?
আশা সিংয়ের প্রশ্ন, ‘‘আমি জানতাম ও ছাড়া পাবে, সবাই জানত। তারপরও কেউ একবারও ভাবেনি, এই রকম একজন অপরাধী তিন বছরের মধ্যে জেল থেকে বেরিয়ে এলে সমাজে কী প্রভাব পড়বে? না কি ওকে মুক্তি দিয়ে আমরা আসলে এটাই প্রমাণ করছি আমাদের আইনকানুন সবই আসলে ফাঁপা, বাইরে গিয়ে আমাদের মেয়েদের ধর্ষণ কর, হত্যা কর – আমরা কিছুই করব না!’’
ধর্ষিতার মা যখন এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছেন, তখন ভারতে নৃশংস অপরাধের ক্ষেত্রে নাবালকের বয়সসীমা আঠারো থেকে ষোলোতে নামিয়ে আনার জন্য প্রস্তাবিত বিল পার্লামেন্টে আটকে আছে।
আর নাম-পরিচয় প্রকাশিত না-হওয়া, এখন একুশ বছর ছুই ছুই ওই ধর্ষণকারী সমাজে তার নতুন জীবনের প্রস্তুতি শুরু করছেন – যদি না সুপ্রিম কোর্ট তাতে আবার বাদ সাধে!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন