বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৫

ভারতের শিবিরে সাবেক ছিটমহল বাসিন্দার মৃত্যু

 
    chitmahal_deathআশ্রয় শিবিরে ঈশ্বর নারায়ণ রায়ের মৃতদেহের পাশে শোকসন্ত্রস্ত পরিবার। ঘর-বাড়ি ছেড়ে এসে এক মাসও বাঁচলেন না তিনি।   
             
নিজের দেশে, নিজের পরিচয়ে বাঁচার আশা নিয়ে ফিরে ভিটে-বাড়ি ছেড়ে ভারতের মূল ভূখণ্ডে এসেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র রায়।
কিন্তু ঠিক একমাসের মধ্যেই তার জীবন চলে গেলে।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা সাবেক ভারতীয় ছিটমহল এক নম্বর দহলা খাগড়াবাড়ি থেকে ভারতের মূল ভূখণ্ডে চলে আসা ৭৪ বছর বয়সী ঈশ্বর নারায়ণ রায় একটি আশ্রয় আজ (বুধবার) সকালে মারা গেছেন।
পরিবার ও প্রতিবেশীদের অভিযোগ অসুস্থ শরীরে ঠাণ্ডার প্রকোপ সহ্য করতে না পেরেই তার মৃত্যু হয়েছে।
তারা জানিয়েছেন, নয়জনের একটা পরিবারের জন্য সরকারের তরফে মাত্র দুটি কম্বল দেওয়া হয়েছিল ওই পরিবারটিকে। চারদিকে ঢেউ টিনের ঘরে ঠাণ্ডার হাত থেকে বাঁচতে খড়ের গাদা পেতেছিল ওই পরিবারটি। সেই খড়ের ওপরেই সকালে মৃত্যু হয় ওই বৃদ্ধের।
প্রয়াত মি. রায়ের ছোট ছেলে অক্ষয় কুমার বিবিসি বাংলাকে বলেন, “বাবার অসুস্থ ছিল, যার জন্য বর্ডার পেরুনোর পরেই সরাসরি হাসপাতালে চিকিৎসা করতে হয়েছিল, রক্তও দিতে হয়েছিল। কিন্তু ভীষণ ঠাণ্ডা পড়েছে, তার ওপরে টিনের ঘর। দুটো মাত্র কম্বল পেয়েছি। খড় বিছাতে হয়েছিল মেঝেতে। শীতের পোশাকও ঠিকমতো নেই। ঠাণ্ডা সহ্য করতে পারল না বাবা।“
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার অবশ্য স্বীকার করছে না যে ঠাণ্ডার কারণেই মারা গেছেন মি. রায়।
ইশ্বর নারায়ন                 ভারতের মূল ভূখন্ডে আসার জন্য প্রয়াত ঈশ্বর নারায়নের অনুমতি পত্র                
ক্ষমতাসীন তৃনমূলের কোচবিহার জেলার শীর্ষ নেতা ও বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন,“ওই ব্যক্তির স্বাভাবিক মৃত্যুই হয়েছে। আর ত্রাণ সামগ্রীরও কোনও অভাব নেই। সরকার যা দিয়েছে, তার ওপরে বিধায়করাও তাঁদের কোটা থেকে বাড়তি কম্বল দিয়েছে। তাই ঠাণ্ডা সহ্য করতে না পেরে উনি মারা গেছেন, এ কথা সঠিক নয়।“
ঠিক একমাস আগে ২৪ নভেম্বর সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আসে মি. রায়ের পরিবার। তাঁদের রাখা হয়েছে কোচবিহারের হলদিবাড়ি এলাকার একটি অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরে।
মি. রায়ের মৃত্যুর পরে অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরে ত্রাণের অপ্রতুলতা নিয়ে অভিযোগ করছেন আরও অনেকেই।
হলদিবাড়ি এলাকার ওই শিবিরেই আশ্রয় পেয়েছেন বাংলাদেশের ভেতরে থাকা সাবেক ভারতীয় ছিটমহল নাজিরগঞ্জের বাসিন্দা জয়প্রকাশ রায়।
তিনি বলেন, “পরিবার পিছু দুটো করে ঘর দেওয়া হয়েছে। একটা তোষক, দুটো বালিশ, একটা মশারী আর মেঝেতে পাতার জন্য দুটো ত্রিপল দিয়েছে সরকার থেকে। মেঝেগুলো বাঁধানো আর আড়াই ফুট পাকা দেওয়াল, তার ওপরে পুরোটাই টিন। ছাদও টিনের। এগুলোতে শীতে যেমন প্রচণ্ড ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে, গরমকালেও সেরকম গরম হয়ে উঠবে।“
কোচবিহারের জেলাশাসকের সঙ্গে অনেকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায় নি।
তবে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলছেন, “ত্রাণসামগ্রী কম নেই, কিন্তু অস্থায়ী শিবির বা পুরনো ছিটমহলগুলোতে উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটা বড়সড় সমস্যা দেখা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার যে টাকা দেবে বলেছিল, তার প্রায় কিছুই দেয় নি। প্রায় সবটাই রাজ্য সরকারকে খরচ করতে হচ্ছে। এটা তাড়াতাড়ি সমাধান না করা গেলে খুবই অসুবিধায় পড়তে হবে সবাইকে।“

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন