বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৫

স্থানীয় নির্বাচন নাকি রাজনীতির লড়াই?

 
                     নরসিংদীতে অলিগলি পর্যন্ত প্রার্থীদের পোষ্টারে পোষ্টারে ছেয়ে গেছে। মিছিল-মিটিং, অভিনব মাইকিংসহ প্রচারণা এখন তুঙ্গে।   
             
বাংলাদেশে সাত বছর পর দলীয় প্রতীক নিয়ে ভোট যুদ্ধে নামা আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা আসন্ন পৌর নির্বাচনকে সাধারণ কোন ভোট হিসেবে দেখছেন না। বরং তাদের মতে এটি রাজনৈতিক লড়াই।
ভোটারদের অনেকে বলেছেন, ৫ই জানুয়ারির বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ একটা ভাবমূর্তির সংকটে পড়েছিল। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তারা রাজনৈতিকভাবে পৌর নির্বাচন করছেন।
৫ই জানুয়ারির নির্বাচন বয়কট করে বিএনপি ভুল করেছিল বলে অনেক ভোটারের ধারণা। তারা মনে করেন, সেই উপলব্ধি থেকে দলটি পৌর নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।
নরসিংদী পৌরসভায় প্রধান সড়কের পাশে একটি মার্কেটে কয়েকজন ভোটার বলছিলেন, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি স্ব স্ব রাজনৈতিক চিন্তা নিয়ে মাঠে নেমেছে।
ফলে এবার পৌর নির্বাচন পুরোপুরি রাজনৈতিক চেহারা পেয়েছে।
আইনজীবী এম এম খোকন বলেছেন, “বিএনপি ভুল বুঝতে পেরে এই নির্বাচনে অংশ নেয়ায় তাদের নেতাকর্মীরা মানুষের কাছে যাওয়ার একটা সুযোগ পেলো। আর আওয়ামী লীগও তাদের জনসমর্থন যাচাই করার সুযোগ পেলো।”
গৃহিণী সুমনা হক মনে করেন, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় বিএনপি এতে অংশ নিয়েছে।
দলীয় প্রতীক নিয়ে প্রধান দুই দল সর্বশেষ মুখোমুখি হয়েছিল বিগত সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।
২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন বয়কট করে বিএনপি সংসদের বাইরে রয়েছে।
যদিও এর মাঝে উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা অংশ নিয়ে অনেকে বিজয়ী হন।
কিন্তু সেই নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হয়নি।
নরসিংদী উপজেলার চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় বিএনপি নেতা মঞ্জু এলাহী বলছিলেন, দীর্ঘ সময় পর দলীয় প্রতীক নিয়ে তারা মাঠে নেমেছেন।
এটি রাজনৈতিকভাবে তাদের দলের সঠিক সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও এই পৌর নির্বাচনকে রাজনৈতিকভাবে নিয়েছেন।
৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগকে যে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়।
সেখানে দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এই ভোটে বিএনপির অংশগ্রহণকে আওয়ামী লীগের জন্য একটা বড় অর্জন হিসেবে দেখছেন।
নরসিংদী আওয়ামী লীগের নেতা আমজাদ হোসেন বাচ্চু বলছিলেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের প্রতি মানুষের আস্থার বিষয়টা যেনো উঠে আসে, এখন সেটিই তারা চাইছেন।
দুই দলের তৃণমূলের নেতারাই তাদের এখনকার দলীয় পদক্ষেপকে সঠিক বলে বর্ণনা করছেন।
নরসিংদীতে বেসরকারি একটি কলেজের অধ্যক্ষ মশিউর রহমান মৃধা মনে করেন, নির্বাচনের ফলাফলের আগেই রাজনৈতিক দিক থেকে দুই দলেরই একটা ইতিবাচক অর্জন হয়েছে।
এর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন, দীর্ঘ সময় নির্বাচনের বাইরে থাকায় বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পিছিয়ে পড়েছিল।
সেই প্রেক্ষাপটে পৌর নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি আরও বলেছেন,অন্যতম একটি প্রধান দল বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নেয়ায়, সেটি আওয়ামী লীগের জন্যই ইতিবাচক হয়েছে।
তবে দল দু’টি এই নির্বাচনকে রাজনৈতিক লড়াই হিসেবে নিলেও প্রচারণায় কিন্তু স্থানীয় সমস্যাগুলোই অগ্রাধিকার পাচ্ছে।
নরসিংদীতে অলিগলি পর্যন্ত প্রার্থীদের পোষ্টারে পোষ্টারে ছেয়ে গেছে।
মিছিল-মিটিং, অভিনব মাইকিংসহ প্রচারণা এখন তুঙ্গে।
দলীয় ভিত্তিতে পৌর নির্বাচন রাজনৈতিক নির্বাচনে পরিণত হয়েছে।এ নিয়ে বাড়তি উৎসাহ থাকলেও ভোটারদের অনেকের মধ্যে এক ধরণের ভয়ও কাজ করছে।
শেষপর্যন্ত দুই দলের এই ভোট যুদ্ধে পরিবেশ যেন সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ থাকে,সেটাই ভোটারদের প্রত্যাশা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন