বাংলাদেশে পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য পাহাড়ীদের শীর্ষ সংগঠন জনসংহতি সমিতি সরকারকে এক মাসের আলটিমেটাম দিয়েছে। না হলে, জানুয়ারি থেকে সংগঠনটি অর্থনৈতিক অবরোধ-হরতালের মতো কর্মসূচির হুমকি দিয়েছে।
সাবেক বিদ্রোহী নেতা এবং জনসংহতি সমিতির প্রধান সন্তু লারমা আজ বুধবার রাঙমাটিতে এক জনসমাবেশে এই আলটিমেটাম দিয়েছেন।তিনি বলেছেন, শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের দেড়যুগ পরও তা বাস্তবায়নে সরকারের সদিচ্ছা এবং আন্তরিকতার অভাবের কারণে পার্বত্য তিন জেলায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে।
আঠারো বছর আগে ১৯৯৭ সালের দোসরা ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার এবং জনসংহতি সমিতির মধ্যে পার্বত্য শান্তি চুক্তি সই হয়।
পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না, এই অভিযোগ তুলে জনসংহতি সমিতির নেতা সন্তু লারমা বিভিন্ন সময় আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন।
শেষপর্যন্ত গত মে মাসে সমিতির পক্ষ থেকে পার্বত্য তিন জেলায় অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি নেয়া হয়। এর মূল বিষয় ছিল, স্থানীয় প্রশাসন বা সরকারি বিভাগগুলোকে পাহাড়ীরা যেন সহযোগিতা না করে।
কিন্তু সেই কর্মসূচিতে তেমন সাড়া মেলেনি বলে স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছেন।
এখন সন্তু লারমা জানুয়ারি থেকে পার্বত্য তিন জেলায় পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে অবরোধ এবং হরতালের মতো কর্মসূচি নেয়ার কথা বলেছেন।
মি: লারমা বিবিসিকে বলেছেন, “আমাদের সংখ্যালঘু করার জন্য পার্বত্য এলাকায় বাঙালীকরণ এবং ইসলামীকরণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সে কারণে চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তাবায়নের ক্ষেত্রে সরকারের আন্তরিকতার অভাব দেখা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য আমরা আন্দোলনে নেমেছি।”
চুক্তি স্বাক্ষরের আঠারো বছর পূর্তিতে জনসংহতি সমিতি যেমন পার্বত্য তিন জেলায় সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও আলাদাভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছিল।
রাঙ্গামাটিতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভি বলেছেন, চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের আন্তরিকতার কোন অভাব নেই।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর বলেছেন, “চুক্তি বাস্তবায়ন হয়নি, একথা যেমন সত্য নয়। তেমনি চুক্তির সব বাস্তবায়ন হয়ে গেছে, সেটাও সত্য নয়। তবে চুক্তির বেশিরভাগ বিষয় বাস্তাবায়ন হয়েছে।”
চুক্তি বাস্তবায়ন হয়নি, একথা যেমন সত্য নয়। তেমনি চুক্তির সব বাস্তবায়ন হয়ে গেছে, সেটাও সত্য নয়।
সন্তু লারমা বলেছেন, ভূমি সমস্যা ঝুলিয়ে রাখার পাশাপাশি পার্বত্য তিন জেলায় এখনও সেনা শাসন চালানো হচ্ছে। চুক্তি অনুযায়ী সেনা ক্যাম্পগুলো প্রত্যাহার করা হচ্ছে না।
তিনি উল্লেখ করেছেন, চুক্তি অনুযায়ী পুলিশ বাহিনীকে এখনও পার্বত্য জেলাপরিষদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। মৌলিক এই বিষয়গুলো ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
তবে প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর বলেছেন, সেনা ক্যাম্প পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করা হচ্ছে। ভূমি সমস্যাসহ মৌলিক কিছু বিষয়ে অনেক পুরোনো আইনে পরিবর্তনের প্রক্রিয়া জটিল হওয়ায় বিলম্ব হচ্ছে। এ নিয়ে জনসংহতি সমিতি একটা ভুল বোঝাবুঝির অবস্থানে চলে যাচ্ছে। কিন্তু এগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোন সময়সীমা বা কোন আলটিমেটাম তিনি মানতে রাজি নন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন