বুধবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৫

'ভারত ছেড়ে চলে যাবেন কিনা' - ভাবছেন আমির খান

 
    amir_khan                 ধর্মীয় অসহিষ্ণুতায় শঙ্কা প্রকাশ করে মন্তব্যের জন্য বিজেপির তোপের মুখে পড়েছেন আমির                
ভারতে ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতার অভিযোগ নিয়ে বিতর্ক চলছে, তাতে নিজের পারিবারিক ও ব্যক্তিগত উদ্বেগ ব্যক্ত করার পর সরকারের তোপের মুখে পড়েছেন বলিউড অভিনেতা আমির খান।
তিনি বলেছিলেন, দেশের অবস্থা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ভারত ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত কি না, তা নিয়েও স্ত্রীর সঙ্গে তার আলোচনা হয়েছে।
এর পরই অভিনেতা-শিল্পীদের একাংশ আমির খানের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছেন – তাতে যোগ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী বা ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতারাও। ভারতের মানুষই যে তাঁকে আমির খান বানিয়েছেন, মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে সে কথাও।
দেশে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে মুখ খুলে কিছুদিন আগেই বিজেপি-র কট্টরপন্থী নেতাদের রোষের মুখে পড়েছিলেন বলিউড সুপারস্টার শাহরুখ খান। তাঁকে পাকিস্তান চলে যাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছিলেন কেউ কেউ।
আর সোমবার রাতে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকার একটি অনুষ্ঠানে একই বিষয় নিয়ে মন্তব্য করে বিতর্কে জড়ালেন বলিউডের আর এক বিগ খান – আমির।
আমির সেখানে বলেন, ‘আমি ও আমার স্ত্রী কিরণ সারা জীবন ভারতে থেকেছি, কিন্তু সম্প্রতি কিরণ আমায় প্রশ্ন করেছে, আমাদের কি ভারত ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত? এটা ওর জন্য একটা সাঙ্ঘাতিক কথা – কিন্তু ও ওর সন্তানকে নিয়ে ভয় পাচ্ছে, আমাদের চারিদিকে যে ধরনের পরিবেশ তাতে ভয় পাচ্ছে। রোজ সকালে ও খবরের কাগজ খুলতেও ভয় পাচ্ছে।’
‘এ থেকে বোঝা যায় অস্বস্তি আর হতাশা ক্রমেই বাড়ছে ... এতে তো প্রথমত উদ্বেগ তৈরি হয়, কিন্তু তার চেয়েও বেশি গভীর একটা অবসাদ চেপে বসে, আপনার মনে হয় কেন এ সব ঘটছে?’
এই মন্তব্য সামনে আসার পরই ভারতের শিল্প-সংস্কৃতি কিংবা রাজনীতির জগত – উভয়ই আমিরের সমর্থনে ও বিরোধিতায় দুভাগ হয়ে গেছে।
এদিন সকালেই প্রবীণ অভিনেতা অনুপম খের, যার স্ত্রী বিজেপির এমপি, তিনি টুইট করেছেন – আমির কি নিজের স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেছেন ভারত ছেড়ে তিনি কোথায় যেতে চান? ভারতই যে তাঁকে আমির খান বানিয়েছে সেটাও তাঁকে মনে করিয়ে দেন অনুপম খের।
shahrukh_khan
                 চলতি মাসের শুরুতেই ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার প্রতিবাদ করে বিজেপির তোপের মুখে পড়েছিলেন শাহরুখ খান
এর কিছুক্ষণ পরই বিজেপি-র মুখপাত্র শাহনওয়াজ হুসেন অভিযোগ করেন আমির খানের এই মন্তব্য ভারতকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়।
তাঁর কথায়, ‘আমিরের নামডাক-ধনদৌলত সব এই ভারতের লোকই দিয়েছে। আজ সুপারস্টার হওয়ার পর তিনি যখন এ ধরনের কথা বলেন তাতে ভারত-বিরোধীরাই আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের বদনাম করার সুযোগ পেয়ে যান। এতে হয়তো আমির শস্তা প্রচার পেতে পারেন, কিন্তু ভারতের গায়ে যে কালির ছিটে লেগে যায় সেটা তিনি খেয়াল করেন না!’
আসলে আমির খান আসলে শুধু বলিউড অভিনেতাই নন, ভারতে বিদেশি পর্যটকদের টানতে গত বেশ কয়েক বছর ধরে যে ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া বা অতিথি দেবো ভব ক্যাম্পেন চলছে, তারও প্রধান মুখ তিনিই। ভারতের বহু সামাজিক সমস্যা নিয়ে তার টেলিভিশন অনুষ্ঠান সত্যমেব জয়তে-ও ভীষণ জনপ্রিয়।
এহেন আমির অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে সরব হওয়ার পর শুধু বিজেপির পক্ষ থেকেই নয়, প্রায় নজিরবিহীনভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক মন্ত্রীও আজ তাকে ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু পরিসংখ্যান দিয়ে দাবি করেছেন, বিজেপি আমলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা অনেক কমেছে।
সংখ্যালঘু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি বলেছেন, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা কি আমির আসলে তা জানেনই না।
মি নাকভির কথায়, ‘অসহিষ্ণুতা কী জিনিস, তা দেখতে হলে আপনাকে সেখানে যেতে হবে যেখানে মসজিদে নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে, ক্যামেরার সামনে মানুষের শিরশ্ছেদ করা হচ্ছে বা স্কুলে ঢুকে বাচ্চাদের নির্বিচারে গুলি করা হচ্ছে। ভারতে তো মানুষের ডিএনএ-তে সহিষ্ণুতা রয়েছে, মানুষ এখানে ঈদ-বকরি ঈদ-হোলি-দিওয়ালি সব মিলেমিশে উদযাপন করে।’
কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী স্মৃতি ইরানি আবার বলেছেন আমির যে নিজের মনের কথা প্রকাশ্যে বলতে পেরেছেন এটাই প্রমাণ করে ভারতে সহিষ্ণুতা আছে।
কিন্তু পাশাপাশি আবার মুম্বই পুলিশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আমির খানের বিরুদ্ধে কেউ কেউ বিক্ষোভ দেখাতে পারেন এই আশঙ্কায় শহরে তার নিরাপত্তা অনেকগুণ বাড়ানো হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন