মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৫

মহাকাশে প্রতি সেকেন্ডে ৫০০ বোতল মদ ছাড়ছে ধূমকেতু ‘লাভজয়’

এভাবেই অনন্য সবুজাভ আভা ছড়িয়ে পৃথিবীকে বিদায় জানায় ‘লাভজয়’ ধূমকেতু। ছবি: নাসার সৌজন্যেলাভজয়ের কথা আকাশপ্রেমীরা নিশ্চয়ই ভুলে যাননি। পৃথিবীকে সম্প্রতি পাশ কাটিয়ে যাওয়া একটি ধূমকেতুর নাম, ‘লাভজয়’। সম্প্রতি লাভজয় সম্পর্কে বিস্ময়কর আরেকটি তথ্য জানালেন ফ্রান্সের গবেষকেরা। তাঁদের দাবি, ধূমকেতুটি মহাকাশে প্রতি সেকেন্ডে ৫০০ বোতলের মতো অ্যালকোহল বা মদ তৈরি করে চলেছে। এ ছাড়া সাধারণ চিনির মতো আরেকটি জৈব উপাদানও তৈরি করছে এটি।
গবেষকেদের দাবি, কোনো ধূমকেতুতে অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়র মতো ইথাইল অ্যালকোহল পাওয়ার বিষয়টি প্রথমবারের মতো শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়াও জীবনের উদ্ভব ঘটার জন্য প্রয়োজনীয় জটিল জৈব অণুর উৎস যে ধূমকেতু হতে পারে, এই আবিষ্কারের ফলে এটার প্রমাণও পাওয়া গেল।
ফ্রান্সের প্যারিস অবজারভেটরির গবেষক নিকোলাস বিভার বলেন, ‘আমরা প্রত্যক্ষ করেছি যে ধূমকেতুটি যখন সবচেয়ে সক্রিয় থাকে তখন প্রতি সেকেন্ডে এ ধূমকেতু থেকে ৫০০ বোতলের মতো অ্যালকোহল নির্গত হয়।’
‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’ সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণা সংক্রান্ত নিবন্ধ।
গবেষকেরা দাবি করেছেন, লাভজয় ধূমকেতু থেকে ২১টি গ্যাসীয় উপাদানের পাশাপাশি দুটি জৈব উপাদানের সন্ধান পান তাঁরা। এর একটি হচ্ছে অ্যালকোহল, আরেকটি চিনি। গবেষকেরা বলেছেন, এই জটিল জৈব অণু গ্রহে গঠিত হয়, যা থেকে পাথুরে উপাদান তৈরি হতে পারে।
ধূমকেতু সৌরজগতের প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে আদিম উপাদান। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই ধূমকেতুটি ৪৬০ কোটি বছর আগে জন্মেছে। এর আগে এ বছরের ২৪ জানুয়ারি আকাশে যাঁরা চোখ মেলেছিলেন, তাঁদের মধ্যে সৌভাগ্যবান অনেকে হয়তো খালি চোখেই লাভজয় (সি/২০১৪ কিউ২) ধূমকেতুটিকে দেখতে পেয়েছিলেন। তিন বছর ধরে এই ধূমকেতুটি জ্যোতির্বিদদের সম্মোহিত করে রেখেছিল। ২৪ জানুয়ারি পৃথিবীকে বিদায় জানায় এটি। এই ধূমকেতুটি আকাশপ্রেমীদের বিশেষ আকর্ষণ করেছিল এর অনন্য সবুজ আভার জন্য, যা একে অন্যান্য ধূমকেতুর চেয়ে পৃথক করে তুলেছিল। বিজ্ঞানীদের মতে, বিশেষ ডাইঅ্যাটমিক কার্বন গ্যাসের কারণেই লাভজয়ের এই সবুজাভ আভা দেখা গিয়েছিল।
ওই সময় গবেষকেরা জানিয়েছিলেন, ধূমকেতুটি এ বছরের ৩০ জানুয়ারি পেরিহেলিয়নে (সূর্যের সর্বোচ্চ কাছাকাছি) পৌঁছানোর পরই আট হাজার বছরের জন্য মহাশূন্যে হারিয়ে যাবে। ৭ জানুয়ারি এটি পৃথিবীর সর্বোচ্চ কাছ (৭ কোটি কিলোমিটার) দিয়ে অতিক্রম করেছিল। এটি ১১ হাজার বছর পরে পৃথিবীর এত কাছে এসেছিল। পৃথিবীকে দীর্ঘদিনের জন্য বিদায় জানিয়ে গেলেও বেশ কিছু তথ্য বিজ্ঞানীদের জন্য ছেড়ে গেছে লাভজয়।
অস্ট্রেলিয়ার শৌখিন জ্যোতির্বিদ টেরি লাভজয় ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে এই ধূমকেতুটি আবিষ্কার করেন। তাঁর নামেই এই ধূমকেতুটির নাম। prothomalo

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন