ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের বরাক উপত্যকার জেলাগুলিতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার পটভূমিতে বিজেপির ডাকে আজ বনধ পালিত হয়েছে।
কংগ্রেস নেতৃত্ব অবশ্য বলছে, তুচ্ছ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিজেপিই সেখানে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন তৈরি করতে চাইছে।
এর পাশাপাশি রাজ্যের ধুবড়ি জেলার আগমনীতেও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার জেরে কারফিউ জারি করা হয়েছে।
ভারতের আসামে আগামী বছরের মে মাসে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা – আর সেই ভোটের মাসকয়েক আগে থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত দুমাসে রাজ্যের অন্তত সাতটি জেলায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাজনিত ঘটনায় অনেকে গ্রেফতারও হয়েছে।
সবশেষ এই ঘটনাটি ঘটেছে বরাক উপত্যকায় – যেখানকার কাছাড়, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি এই তিনটি জেলাতেই আজ হিন্দুত্ববাদী বিরোধী দল বিজেপি বনধ ডেকেছিল।
ঘটনাটার সূত্রপাত কীভাবে, তা বর্ণনা করে শিলচরের কংগ্রেস এমপি সুস্মিতা দেব বিবিসিকে বলছিলেন, ‘ঈদের দিন এলাকার একটি মন্দিরের সামনে মাংস মিলেছিল বলে অভিযোগ। স্থানীয় মানুষজন তা নিয়ে তেমন কোনও তাপউত্তাপ দেখাননি, কিন্তু বিজেপিই এই ঘটনাকে কাজে লাগিয়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনায় উসকানি দিতে চেষ্টা করে।’
মিস দেবের বক্তব্য, পুলিশ সেদিনই কড়া ব্যবস্থা না-নিলে অবস্থা অনেক খারাপ হত। তিনি আরও জানিয়েছেন, শিলচরে এর আগেও মন্দিরের সামনে মেলা মাংসের টুকরো পরীক্ষা করে দেখা গেছে সেটা আদৌ গোমাংস নয়।
বিজেপি অবশ্য এসব যুক্তি মানতে রাজি নয় – রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের কেন্দ্রীয় নেতা মহেন্দ্র সিং রাজধানী গুয়াহাটি থেকে বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন আসামের কংগ্রেস সরকারই পরিকল্পনামাফিক বিজেপি নেতাদের হেনস্থা করছে ও দাঙ্গা বাঁধাতে চাইছে।
মি সিংয়ের কথায়, ‘কংগ্রেস-শাসিত এই রাজ্যের সবদিকে এখন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাহাঙ্গামার পরিস্থিতি। আর এই অজুহাতে সরকার বিজেপির নেতা বিধায়কদের আটক করছে, মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। এর প্রতিবাদেই গোটা বরাক উপত্যকা জুড়ে আমরা বারো ঘন্টার বনধ ডেকেছিলাম।’
‘আমাদের নেতা-কর্মীরা হেনস্থা হবেন, আমাদের মন্দিরের সামনে গরুর মাংসের টুকরো ছুঁড়ে ফেলা হবে – তখন তো আমরা তো হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারব না!’, রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়েই বলেন মহেন্দ্র সিং।
আজকের বনধ পুরোপুরি সফল হয়েছে বলে বিজেপি দাবি করলেও স্থানীয় এমপি সুস্মিতা দেবের বক্তব্য, শহর শিলচরের বাইরে কাছাড় জেলার বহু এলাকাতেই বনধের কোনও প্রভাব পড়েনি।
পুলিশে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও গুয়াহাটি থেকে এসে শিলচরে পড়ে ছিলেন। এলাকায় সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতিওি এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে বলে রাজ্য সরকার দাবি করছে।
এদিকে আসামের অন্য প্রান্তে ধুবড়ি জেলাতেও একটি মন্দিরের সামনে প্রায় অনুরূপ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত তিন-চারদিন ধরে তীব্র সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা চলছে। শনিবার থেকেই সেখানে চলছে অনির্দিষ্টকালীন কারফিউ – যা এখনও প্রত্যাহার করা যায়নি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন