বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

চীনে শুধু মেয়েদের জন্য মসজিদ শত শত বছর ধরে

china_women-only_mosqueImage copyrightGetty
গোটা ইসলামিক বিশ্ব জুড়েই সংস্কৃতি আর রীতিনীতির ভিন্নতা আছে, নানা দেশের মুসলিমদের সকলের ধর্মাচরণও ঠিক একই রকমের নয়।
এই বৈচিত্র্যেরই একটা দারুণ দৃষ্টান্ত হল চীনে শুধু মহিলাদের জন্য মসজিদ – যা সে দেশে বহু কালের এক পরম্পরা।
এমনই একটি মসজিদ আছে চীনের হেনান প্রদেশের কাইফেং শহরে, ইয়েলো রিভার বা পীত নদীর অববাহিকার ঠিক মাঝখানে।
কাইফেং ছিল সং রাজবংশের প্রাচীন রাজধানী। এক হাজার বছর আগে বিশ্বের প্রধান শহরগুলোর অন্যতম ছিল কাইফেং, আর নানা ধর্মের সমাবেশ হয়েছিল এই ঐতিহ্যশালী নগরীতে।
ইসলাম ও খ্রীষ্টধর্ম – উভয়ই কাইফেংয়ে পা রাখে সপ্তম শতাব্দীতে। ওই শহরের ওল্ড সিটির সরু গলিগুলোর মাঝে আজও আছে খ্রীষ্টানদের গীর্জা, মুসলিমদের মসজিদ, বৌদ্ধ ও দাওয়িস্টদের মন্দির।
এমন কী সেখানে চীনের হাতে গোনা কিছু ইহুদী সম্প্রদায়েরে লোকজনও আছেন, আছে তাদের উপাসনালয়ও।
তবে কাইফেংয়ের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল শুধু নারীদের জন্য মসজিদ। সে মসজিদের ইমামও একজন মহিলা।
china__women-only_mosque_islam
Image captionকাইফেং শহরে মহিলা ইমাম ও তার বন্ধুদের সঙ্গে বিবিসির মাইকেল উড
শহরে পুরুষদের জন্য যে প্রধান মসজিদটি আছে, তার উল্টোদিকের গলিতেই মেয়েদের জন্য এই মসজিদ। আশেপাশে বহু খাবারের দোকানও আছে সেখানে।
মসজিদের ইমামের নাম গুয়ো জিংফাং। তার বাবা ছিলেন পুরুষদের মসজিদের ইমাম, তার কাছেই ইমামতি শিখেছেন তিনি।
শুধুমাত্র নারীদের জন্য কাইফেংয়ে যে সব মসজিদ আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো এই ‘ওয়াংজিয়া গলির মসজিদ’। এটি তৈরি হয়েছিল প্রায় দুশো বছর আগে, ১৮২০তে।
ইমাম গুয়ো জিংফাং বলছিলেন, নারীদের জন্য মসজিদ চীনের একটি বৈশিষ্ট্য। তবে হেনান প্রদেশেই এই ধরনের মসজিদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
কাইফেং শহরেই যেমন মেয়েদের জন্য মসজিদ আছে মোট ষোলোটি। আশেপাশের গ্রামীণ এলাকায় আরও প্রচুর। ইয়ুনান বা ঝেংজোউ-তেও আছে শুধু মেয়েদের জন্য আলাদা অনেক মসজিদ।
তবে চীনের যেটা একমাত্র মুসলিম প্রদেশ, সেই শিনজিয়াংয়ে কিন্তু এমন কোনও মসজিদ নেই। তারা সেখানে সুন্নি ইসলামেরই একটি মধ্য এশিয়া-ঘেঁষা ধারা অনুসরণ করে থাকেন।
বিবিসির গবেষক মাইকেল উড বলছেন, ষোড়শ শতাব্দীতে চীনের মুসলিম সমাজের মধ্যে এই উপলব্ধিটা ক্রমশ বাড়তে থাকে তাদের ধর্মবশ্বাসকে টিঁকিয়ে রাখতে হলে মেয়েদের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
china__women-only_mosque_islamImage copyrightGetty
চীনের মুসলিমদের মধ্যে তখন থেকেই মেয়েদের পড়াশুনো করানোর ওপরও বিশেষ জোর দেওয়া হতে থাকে।
কাইফেংয়ে গুয়ো জিংফাং ও তার বন্ধুরা বলছিলেন – প্রথমে মেয়েদের কোরান ও ধর্মশিক্ষা দেওয়ার জন্য নানা স্কুল গড়ে তোলা হয়। পরে সেগুলোই অষ্টাদশ শতাব্দীতে এসে পুরোদস্তুর মসজিদের রূপ নেয়।
এক মুসলিম মহিলা সেখানে বলছিলেন, ‘‘আমাদের মায়েরা যখন ছোট ছিলেন তখন গরিব মুসলিম মেয়েদের পড়াশুনোর একমাত্র সুযোগ ছিল এই মসজিদগুলো। মেয়েরাই তখন মেয়েদের দেখেছে’’।
‘‘আমি জানি মুসলিম দুনিয়ার অনেক জায়গাতেই মেয়েদের জন্য আলাদা মসজিদের কোনও অনুমতি নেই। কিন্তু আমাদের এখানে এটা একটা খুব ভাল ব্যাপার বলেই আমরা মনে করি’’, তিনি আরও যোগ করেন।
১৯৪৯ থেকে চীনে মুসলিম মেয়েদের মর্যাদা অনেক বেড়েছে – আর শুধু মেয়েদের জন্য এই মসজিদগুলো সেই প্রক্রিয়ারই এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে মনে করছেন কাইফেংয়ের মুসলিম নারীরা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন