বাংলাদেশে আজ পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস। বাংলাদেশের নানা প্রান্তে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন নানান স্তরের মানুষ।
বাংলাদেশে মানুষের মধ্যে ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা থাকলেও ভাষার ব্যবহারে সচেতনতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সবচেয়ে বড় একটি সমস্যা হচ্ছে বাংলা বানানে।
লেখার ক্ষেত্রে বানানের ভুলভ্রান্তিকে অনেকটা আশঙ্কাজনক হিসেবে দেখছে বাংলা একাডেমি। এর সাথে রয়েছে বানান নিয়ে বিভ্রান্তিও।
কথ্য ভাষায় উচ্চারণ এবং বিকৃতি নিয়ে যেমন বিতর্ক রয়েছে, তেমনি বানানের ক্ষেত্রে ভুলভ্রান্তিও ব্যাপক।
রাস্তার দু’পাশের সাইনবোর্ড, ব্যানার, দেয়াল-লিখন কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের বাংলা লেখার হাল দেখলেই এই দুরবস্থা চোখে পড়বে।
“বাংলা ভাষার প্রতি আমরা একটু উদাসীন হয়ে গেছি। মনে করি একটা হইলেই হইছে। ছাত্ররাও সচেতন না, আবার অনেক সময় শিক্ষকরাও দেখি আমাদের কনসিডারেসন কইরা দিতেছে। যে কারণে গাইডলাইনও পাওয়া যাচ্ছে না” বলেন একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে আসা একজন তরুণ।
তবে বানান নিয়ে সব ভুলভ্রান্তি যে শুধু মাত্র সাধারণ মানুষের মধ্যে তা-ই নয়। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডেও দেখা যায় ভুল বানানে লেখা। যেখানে বাংলা একাডেমি প্রণীত প্রমিত বানানরীতি এখনো অনুসরণ করা হয়নি।
বাংলা একাডেমি এখন একাডেমি শব্দটি হ্রস-ই কার দিয়ে লিখলেও সরকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যেমন শিশু একাডেমি কিংবা শিল্পকলা একাডেমি কিন্তু এখনো দীর্ঘ-ঈ কার দিয়েই বানান করে যাচ্ছে। অবশ্য এক্ষেত্রে কিছু আইনগত জটিলতাও রয়েছে।
এর বাইরে বিভিন্ন দোকান বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে, ফেস্টুনে কিংবা পোস্টারে অহরহই ভুল বানান দেখা যায়।
ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব ভুল বানানে লেখাগুলো হাস্যরসের খোরাক যোগাচ্ছে।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলছেন, বানান নিয়ে অসচতেনতার একটি বড় কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলার প্রতি অবহেলা।
“এখানে পরিবারের একটি দায়িত্ব আছে, এরপর আছে স্কুলের দায়িত্ব এবং সবশেষে সমাজের দায়িত্ব। এই তিন ক্ষেত্রেই আমরা ব্যর্থ হচ্ছি। দুচারজন ভুল করতে পারে, কিন্তু শত শত লোক সব জায়গায় ভুল করছে, এটাতো হতে পারে না”, বলছেন মি. খান।
বানানের ক্ষেত্রে শুধু দুর্বলতাই নয়, বাংলা বানানরীতিতে পরিবর্তনের সাথেও সবাই খাপ খাইয়েও নিতে পারছে না।
অনেকেই ছোটবেলা থেকে স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তকে যে বানানে বাংলা লেখা শিখে এসেছে, বাংলা একাডেমির প্রমিত বানানরীতিতে তার কিছু পরিবর্তন এসেছে।
অথচ এর সাথে পরিচিত নয় অনেকেই - আর এর ফলে তৈরি হচ্ছে ব্যাপক বিভ্রান্তিও।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ বলছেন শিক্ষার বিভিন্ন পর্যায়ে একটি সুনির্দিষ্ট ভাষানীতি অনুসরণ করা না হলে এই বিভ্রান্তি থেকেই যাবে।
“স্কুল টেক্সটবুক বোর্ড, বাংলা একাডেমি এবং সরকার যদি বলে যে, এই হচ্ছে আমাদের বানানরীতি এবং স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এই রীতিই চলবে, তাহলেই এই বিভ্রান্তি দূর করা সম্ভব হতে পারে ”, বলছেন অধ্যাপক ঘোষ।
তবে ভাষার রীতিনীতি যাই থাকুক না কেন সাধারণ মানুষ ভাষা এবং বানান শেখে মূলত চর্চার মাধ্যমে। আর সেখানেই ঘাটতি থেকে গেলে সেটি থেকে উত্তরণও কঠিন হয়ে পড়ে।
বাংলা একাডেমি এবং বিশেষজ্ঞরাও একমত, বাংলা বানান নিয়ে যে নৈরাজ্য সৃষ্টি হচ্ছে সেটিকে ঠেকাতে উপযুক্ত শিক্ষা এবং সরকারি উদ্যোগের কোনও বিকল্প নেই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন