বাংলাদেশে ইংরেজী দৈনিক দ্যা ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে একের পর এক মানহানির মামলা নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতারা ভিন্ন ভিন্ন মতামত দিচ্ছেন।
এদের একাংশ বলছেন, একজন সম্পাদকের বিরুদ্ধে এই মামলা সরকার ও দলের জন্য অস্বস্তি তৈরি করছে। অন্য অংশটি মামলার প্রতি সমর্থন জানাচ্ছেন।
মি. আনামের বিরুদ্ধে এপর্যন্ত ৭৩টি মামলা হয়েছে। বেশিরভাগ মামলায় মানহানির অভিযোগ এনে বলা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে মি: আনাম ডিজিএফআইয়ের দেয়া তথ্য যাচাই না করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পত্রিকায় খবর প্রকাশ করেছিলেন।
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের শাস্তি চেয়ে প্রথম বক্তব্য তুলে ধরেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা এবং ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়। ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে তিনি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে মাহফুজ আনামের গ্রেপ্তার এবং বিচার চেয়েছিলেন।
এরপরই দেখা গেছে, সংসদে ইস্যুটি তোলেন আওয়ামী লীগের কয়েকজন সদস্য। এখন সারাদেশে একের পর এক মামলা হচ্ছে মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে।
তবে প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানার স্বামী শফিক সিদ্দিকী একের পর এক মামলা করাকে বাড়াবাড়ি বলে মনে করেন।
''আমার অবাক লাগে - এটা নিয়ে একটু বাড়াবাড়ি হয়েছে। জয় কিন্তু কথা বলে ছেড়ে দিয়েছে। জয় কোনো কেস করে নাই। প্রধানমন্ত্রী কোনো কেস করে নাই। অন্য লোক মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা করছে। মাহফুজ আনাম দেশদ্রোহী না। ভিন্নমত হইতে পারেন।'' বেসরকারি টেলিভিশন বাংলাভিসনে নিউজ অ্যান্ড ভিউজ নামে অনুষ্ঠানে বলেন শফিক সিদ্দিকী।
তিনি প্রশ্ন তোলেন মানহানির মামলা অন্য কেউ কীভাবে করেন?
মাহফুজ আনামকে ঘিরে এই ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে কোনো বক্তব্য এখনও আসে নি।
তবে আওয়ামী লীগের ভেতর থেকে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য শোনা যাচ্ছে। এখনকার পরিস্থিতি নিয়ে সরকার এবং আওয়ামী লীগ যে সমালোচনার মুখে পড়ছে সেটা দলের অনেকেই স্বীকার করছেন।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ আলম লেনিন মনে করেন, পরিস্থিতিটা সরকার এবং তাদের দলের জন্য অস্বস্তি তৈরি করছে।
“ফেসবুকে দেয়া সজিব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্যের সাথে মামলার কোন সম্পর্ক নেই। এটা একটা সাধারণ প্রতিক্রিয়া হয়েছে। সেই প্রতিক্রিয়া থেকে কেউ উৎসাহে, কেউ অতিউৎসাহে মামলা করছে।”
মি: লেনিন আরও বলেছেন, “একদিকে কর্মীদের ক্ষোভের প্রকাশ ঘটছে, এটা যেমন সত্য, তেমনি এত মামলা দেয়ার ফলে অস্বস্তিকর পরিবেশও তৈরি করছে। এবং অহেতুক সরকারের ওপর দায় আসছে।”
তবে দলটির নেতাদের সাথে কথা বলে মনে হয়েছে, যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয় একটি বক্তব্য তুলে ধরেছিলেন, ফলে আওয়ামী লীগের তরুণ অংশ সেটাকে একটা দায়িত্ব হিসেবে মনে করেছে। তরুণ অংশই মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে একটা অবস্থান নিচ্ছে। অবশ্য তরুণ অংশের পক্ষে দলের প্রভাবশালী অংশও রয়েছে।
দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, “যেহেতু আমাদের দলীয় নেত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা খবর ডেইলি স্টার প্রকাশ করেছিল, সেকারণে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে মামলা করছে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে কী ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল এবং কারা তা করেছিল, এসব আইনগতভাবে তদন্তে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন।”
যদিও সরকার এবং আওয়ামী লীগ দলীয় কোন পর্যায়ে মাহফুজ আনামের ইস্যূ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোন আলোচনা করেনি বা কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি, কিন্তু সারাদেশে মামলাগুলো করছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, মাহফুজ আনামের ভুলের কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জেল খাটতে হয়েছিল। ফলে তারা এটি হালকাভাবে নিচ্ছেন না।
তিনি আরও বলেছেন, “মাহফুজ ভুল স্বীকার করায় তাঁর নিজেরই প্রত্রিকার সম্পাদকের পদ থেকে সরে যাওয়া উচিত।”
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন