শুক্রবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৬

যেভাবে হত্যা করা হয় নাজিমুদ্দিনকে


নাজিমুদ্দিন
Image captionহৃষিকেশ দাস রোডের এই দর্জির দোকানের সামনে কুপিয়ে এবং গুলি করে নাজিমুদ্দিনকে হত্যা করা হয়

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার পুরোনো অংশে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাঁটাপথ সূত্রাপুরের হৃষিকেশ দাস রোডে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাজিমুদ্দিন সামাদকে হত্যা করা হয় বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে।
সন্ধ্যায় ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরছিলেন আইন বিভাগের এই ছাত্র।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ব্যস্ত রাস্তাটির পাশে এবং শুকনো নর্দমায় ছোপ ছোপ রক্ত রয়েছে। জায়গাটুকু ইটের টুকরো দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের সময় এই রাস্তার দু’পাশে দোকান পাটের অধিকাংশই খোলা ছিল। সব ধরণের যানবাহন চলাচল করছিল।
ছোট যে দর্জির দোকানের সিঁড়ির কাছেই নাজিম উদ্দিনের নিথর দেহ পড়ে ছিল, তার মালিক হত্যাকাণ্ডের সময় দোকানে একাই ছিলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বিবিসিকে বলেন, “হঠাৎ দেখি রাস্তায় মানুষ ভয়ে ছোটাছুটি করছে আর ঐ যুবকটিকে চার পাঁচ জন মিলে কোপাচ্ছে। পিস্তলের গুলির শব্দও হলো। তখন দেখি, আশে পাশের সব দোকানের সাটার নামাচ্ছে। আমিও সাটার নামিয়ে দোকানের ভিতরে বসে ছিলাম"।
আশপাশের মানুষজন যখন আতঙ্কে সিটিয়ে গেছে, তার মধ্যেই হত্যাকারীরা খুব সহজে মানুষের ভিড়ে মধ্যে মিশে পালিয়ে যায়।

নাজিমুদ্দিনImage copyrightbbc
Image captionবৃহস্পতিবার সারাদিন ধরেই নাজিমুদ্দিনের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শিক্ষার্থী

হৃষিকেশ রোডের চুলকাটার দোকান ও পাশের মিষ্টির দোকানের কর্মচারীরা জানান, আতংকে মানুষ ছোটাছুটি করলে মুহূর্তেই ঐ এলাকা ফাঁকা হয়ে যায়। নাজিম উদ্দিনের মৃতদেহ রাস্তার পাশে নর্দমার কাছে পড়ে থাকে।
কাছের এক দোকানদার বলেন, ঘটনা শেষ হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে তিনি তার দোকানের কাছে এসে দেখেন যুবকটির মাথায় গভীর আঘাতের চিহ্ন। সেখান থেকে রক্ত ঝরছে। আর মানুষটি হা করে আছে। পা পূর্ব দিকে এবং মাথা রয়েছে পশ্চিম দিকে। হামলার পরপরই সে মারা যায় বলে ঐ দোকানদারের ধারণা।
ঐ দোকান মালিক জানান, ঘটনার পঁচিশ মিনিট পর পুলিশ এসে মৃতদেহটি মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যায়।
সেসময় ঐ এলাকার সব ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে দ্রুত বাড়িতে চলে যান।

nazimuddinImage copyrightNazimuddin Samad Facebook Page
Image captionঅনলাইনে, বিশেষ করে ফেসবুকে, কট্টরে ইসলামের সমালোচনা করতেন নাজিমুদ্দিন।

সূত্রাপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তপন চন্দ্র সাহা বিবিসি বলেন, তারা খবর পাওয়ার সাথে সাথেই ঘটনাস্থলে যান। পুলিশ সেখানকার ব্যবসায়ীদের মুখে ঘটনার বর্ণনা শুনে তদন্ত শুরু করেছে।
বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নাজিমুদ্দিনের ময়না তদন্ত শেষ হয়।
রাতেই নিহতের লন্ডন প্রবাসী ভাই এসে মৃতদেহ সিলেটের বিয়ানীবাজারে তাদের গ্রামে নিয়ে যাবেন বলে জানা গেছে।
কট্টর ইসলামকে সমালোচনা করে অনলাইনে লেখালেখি করতেন নাজিমুদ্দিন। লেখালেখির কারণেই তাকে হত্যা করা হয়েছে কিনা পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন