শুক্রবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৬

তনু হত্যার ঘটনা আড়া​ল করতে নাজিমকে হত্যা : ইমরান

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজিমুদ্দিন সামাদের হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত মশাল মিছিলকুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা থেকে মানুষের দৃষ্টি সরাতে নাজিমুদ্দিন সামাদকে হত্যা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সকার। তিনি বলেছেন, তনু হত্যার বিচারের দাবিতে মানুষ যখন সোচ্চার, তখন মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য একটি পক্ষ সুপরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
|আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজিমুদ্দিন সামাদের হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত মশাল মিছিলপূর্ব সমাবেশে ইমরান এসব কথা বলেন। সরকারের উদ্দেশে ইমরান বলেন, ‘একের পর এক হত্যাকাণ্ডের দায় আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, রহিম উদ্দিন-করিম উদ্দিনের নামে দিয়ে যাবেন, আর আমরা আপনাদের পড়ানো স্ক্রিপ্ট গলাধঃকরণ করব, তা আর হবে না। যারাই এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে থাকুক না কেন বিচার করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘যদি আপনারা মনে করেন, কোনো উগ্রবাদী গোষ্ঠী এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে আছে, তাহলে তাদের ধরে আপনাদের প্রমাণ করতে হবে। আপনারা বারবার একই কথা বলে যাবেন আর আমাদের ভাইবোনেরা হত্যার শিকার হবে, আমরা তা মেনে নেব না।’
ইমরান বলেন, এমনকি অদ্ভুত জিনের আছর পড়লে বাংলাদেশে, ‘যে একটার পর একটা ঘটনা ঘটবে। কিন্তু কোনো ঘটনার ক্লু আপনারা খুঁজে পাচ্ছেন না। আপনারা একটা খেলা পেয়েছেন? একটার পর একটা ঘটনা ঘটবে আর আপনারা নানা ধরনের গান হাজির করবেন, সংবাদ সম্মেলন করবেন। একদিন বলবেন আনসারুল্লাহ বাংলা, আরেক দিন বলবেন জেএমবি, আরেক দিন বলবেন এদের কেউ না, অন্য কোনো গোষ্ঠী। এসব বলে জনগণের দৃষ্টি আরেক দিকে সরিয়ে দেবেন। সেটা হবে না।’
মঞ্চের মুখপাত্র বলেন, নাজিমুদ্দিন সামাদের হত্যাকাণ্ডের পর পরিষ্কারভাবে মনে হচ্ছে, এসব হত্যাকাণ্ড কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এগুলো পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে এমন কোনো শক্তি আছে, যে শক্তি থাকার কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চোখে কালো চশমা পরে আছে। তারা কিছুই দেখছে না। একজন প্রতিবাদী তরুণকে হত্যা করার পর বলা হয়- যারা হত্যা করেছে তারা নাকি ‘আল্লাহু আকবার’ স্লোগান দিয়ে চলে গেছে। এই কথাটি বলে একটি সুনির্দিষ্ট গোষ্ঠীর দিকে তাক করা হয়। এই তাক করার ফলে বিচার পাওয়ার যে সম্ভাবনা, তা নষ্ট হয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘যদি আপনারা মনে করেন কোনো সুনির্দিষ্ট গোষ্ঠী এই হত্যাকাণ্ড করেছে, তাহলে তাদের গ্রেপ্তার করছেন না কেন? কারা এই স্লোগান দিয়েছে আমরা জানতে চাই। আমি পরিষ্কারভাবে মনে করি, এই স্লোগানগুলোর কথা বলে সুনির্দিষ্ট গোষ্ঠীর দিকে তাক করে পুরো ঘটনাকে আড়াল করার একটা চেষ্টা করা হয়। তাই একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটে যাচ্ছে, আমরা বিচার পাচ্ছি না।’
সমাবেশের পরে চলমান হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দেওয়ার প্রতিবাদে আগামীকাল শুক্রবার বিকেল চারটায় শাহবাগে সংহতি সমাবেশ করার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সমাবেশ শেষে সন্ধ্যা ছয়টায় ঘটনার প্রতিবাদে একটি মশাল মিছিল বের হয়। মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ঘুরে পুনরায় শাহবাগে এসে শেষ হয়।
Prothomalo.com

তনু হত্যা তদন্তে র‍্যাবের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

mizan
Image captionমানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান (ফাইল ফটো)
বাংলাদেশের কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় সংঘটিত তনু হত্যাকাণ্ডকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চলছে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে লেখা এক চিঠিতে তিনি তাঁর এই আশংকার কথা জানিয়ে এই হত্যার সুষ্ঠু তদন্তের ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন।
কেন এই সন্দেহ -- এই প্রশ্নে বিবিসিকে তিনি এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে র‍্যাবের "ছায়া তদন্ত" নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
"ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে গিয়ে কোনো কোনো সংস্থা থেকে অতি সতর্কতা দেখেছি। আগে থেকেই কিছু কাজ করা হয়েছে যা তদন্তে বাধা তৈরি করতে পারে।"
এ প্রসঙ্গে মি রহমান তনুর মৃতদেহ খুঁজে পাওয়ার জায়গাটি খুঁড়ে ফেলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
"জায়গাটি পরিষ্কার করে রাখা হয়েছে...যেভাবে মাটি উত্তোলন করা হয়েছে তাতে মনে হবে যেন সদ্য একটি খবর খুঁড়ে কাউকে শায়িত করা হয়েছে"।
কোন সংস্থা এটি করে থাকতে পারে-- এই প্রশ্নে মি রহমান বলেন, "আমাদের কাছে বলা হয়েছে র‍্যাব থেকে সম্ভবত এই কাজটি করা হয়েছে"।
পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের প্রসঙ্গ তুলে মিজানুর রহমান বলেন, র‍্যাব প্রকারান্তরে স্বীকার করেছে তারা একটি "ছায়া তদন্ত" করছে।
"এরকম ছায়া তদন্তের কোনো এখতিয়ার বাংলাদেশের আইনে আছে কিনা, কেন এ ধরণের তদন্তের প্রয়োজন হলো .. এসব নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন উঠছে"।
tonuImage copyrightFacebook
Image captionতনু হত্যার প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।
তনু হত্যার তদন্ত নিয়ে তার উদ্বেগ প্রসঙ্গে মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান ময়না তদন্তের প্রশ্নও তুলেছেন।
তিনি বলেন প্রথম ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসার আগেই কেন আরেকটি ময়না তদন্ত করে রিপোর্ট দেওয়া হলো তা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন দিয়েছে।
মার্চ মাসে কুমিল্লার কলেজ ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই বাংলাদেশ জুড়ে এর বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ চলছে। সেনানিবাস এলাকার ভেতরে এই হত্যাকাণ্ডকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে বলে বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করছে।

মানচিত্র থেকে মুছে যাচ্ছে বগুড়ার করতোয়া

kortoa
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক প্রধান তিনটি নদী পদ্মা মেঘনা যমুনা ছাড়াও সরকারি তথ্যে ছোট বড় ৪০৫টি নদীর হিসেব পাওয়া যায়। উজান থেকে পানি প্রবাহ কমে যাওয়া, দখল-দূষণ এবং গতিপথে মানুষের হস্তক্ষেপে বিপন্ন হচ্ছে বাংলাদেশের অধিকাংশ নদ-নদী। উত্তরাঞ্চলের অন্যতম প্রধান নদী করতোয়াও এখন মৃতপ্রায়।
করতোয়া নদীর সবচে খারাপ অবস্থা বগুড়া অংশে। শহরের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা করতোয়াকে বলা হচ্ছে মৃত নদী। উজান থেকে পানির প্রবাহ নেই। দখল আর দূষণে এ নদী জর্জরিত। ৭৩ বছর বয়সী বগুড়ার সাবিদ আলীর অভিজ্ঞতায় এখনো আছে স্রোতস্বিনী করতোয়ার স্মৃতি।
“আমার বিয়া হয় একাত্তরে। তার আগে পরেতো নদী এখানে এ ছিলনা, নদী ভরা ছিল, ঘাট ছিল, পানির সবসময় স্রোত চলিছে। নদীর অনেকটা দখল হয়ে গেছে, আমরা যা দেখিছি তার চেয়ে এমুরো ওমুরো দখল হইচ্ছে। আর আবর্জনাতো আছেই।”
kortoa
Image captionবগুড়ার বাসিন্দা সাবিদ আলী
বগুড়া শহর থেকে উত্তরে এগিয়ে গেলে নিকট অতীতেও করতোয়ার প্রশস্ততার প্রমাণ মেলে নদীর ওপর সড়ক সেতু দেখলে। সেতুর নিচ দিয়ে নদীর প্রশস্ত সীমারেখা বোঝা গেলেও নদীতে পানির প্রবাহ জীর্ণ নালার মতো। আর নদীর বুকে অনেক জায়গায় দেখা যায় চাষাবাদও হচ্ছে।
করতোয়ার গতিপথ ধরে আরো এগিয়ে গেলেই ঐতিহাসিক মহাস্থানগড় এলাকা। আড়াই হাজার বছর আগে এ সভ্যতা গড়ে উঠেছিল করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে। একটি বেসরকারি সংগঠনের ব্যানারে বগুড়ার করতোয়া নদী রক্ষার আন্দোলনে সক্রিয় কে.জি.এম ফারুক। তিনি বলেন, “জনশ্রুতি আছে যে এখানে সওদাগরী জাহাজ, লঞ্চ এবং বড় বড় নৌকা বজরা যেটা বলে সেটা যাতায়াত করতো। পণ্য পরিবহন হতো এবং ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্র ছিল বগুড়া। এবং করতোয়া নদীকে কেন্দ্র করে এ সভ্যতা গড়ে উঠেছে।”
মহাস্থানগড় এলাকায় শীলা দেবীর ঘাটে বসে মি ফারুক বলছিলেন, সামাজিক আন্দোলন, আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি করতোয়া রক্ষার দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর পর্যন্ত গেছে তাদের স্মারকলিপি। তিনি বলেন, আশির দশকে কাটাখালী নদীতে বাঁধ এবং স্লুইস গেট বসানোর পর পুরোপুরি শুকিয়ে যায় বগুড়া অংশে করতোয়া নদীটি।
“এ নদী অবৈধ দখল এবং দূষণের সাথে প্রভাবশালী লোকজন জড়িত এমনকি রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গও জড়িত আছে। গাইবান্ধার কাটাখালীতে পরিবেশ বিরোধী যে বাঁধটি দেয়া হয়েছে সে বাঁধটি পুরোপুরি অপসারণ করতে হবে। পুরোপুরি অপসারণ এবং নদীর সংস্কার প্রয়োজন।”
kortoaImage copyrightbbc
Image captionকরতোয়া শুকিয়ে খাল
কাটাখালী নদীও অনেক যায়গায় চর পড়ে শুকিয়ে গেছে। ভরা বর্ষাতেও প্রায়ই বন্যার কবলে পড়ে এই জনপদ। নদী তীরবর্তী বাসিন্দা বুলবুলি বলছিলেন, “এদিগি মনে করেন যে এখন শুকোয় যাইচ্ছে (করতোয়া) এখন এ নদীডা (কাটাখালী) থাকিচ্ছে। তা এই নদীডা মনে করেন যে (বর্ষায়) জমিজমা সব কিছু ভাইঙ্গে যাইচ্ছে। তাহলি কেমনে হামরা কী কইরা খামু কও"?
অন্যদিকে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের পর কাটাখালী নদীটি আবার করতোয়া নামে প্রবাহিত হয়েছে। করতোয়া নামে এ ধারাটি বাঙালী নদীর সঙ্গে মিশে যমুনায় পড়েছে। গাইবান্ধার মৎস্যজীবী নিজাম উদ্দিন বলেন-“অনেক মানুষ উঠে গেছে। মাছ নাই মাছ কমে গেছে। এই জন্যি উঠে গেছে। আর হামরা যারা আগেথ্থেকেই মাছ মারি, আমরাতো আর অন্য কাজ কইরতে পারবো না। ওই একশ টাকার মাছ হইলেও আছি, দুইশ টাকার মাছ হলিও আছি।”
kortoa
Image captionড: মোমিনুল হক
করতোয়া নদীর উৎস এবং এর গতিপ্রকৃতি জানান নদী গবেষক ড. মমিনুল হক সরকার। স্যাটেলাইট চিত্র দেখিয়ে তিনি জানান, বগুড়া অংশে করতোয়ার কোনো চিহ্ন এখন আর পাওয়া যায় না। “বগুড়ার পাশ দিয়ে যেটা গেছে, সেটার একটা ক্ষীণ ধারা বোঝাটাই খুব মুশকিল, দেখেও মনে হবে না যে এটা নদী হতে পারে। গাইবান্ধায় এসে একটা করতোয়া ভাগ হয়ে গেল দুইটা করতোয়ায়। আবার দিনাজপুরের এদিকে এসে, দিনাজপুরে নিচের দিকে এসে ভারত বাংলাদেশের বর্ডার ক্রস করেছে আবার বাংলাদেশে ঢুকেছে।”
বাংলাদেশে নদী মরে যাওয়ার কারণ নিয়ে মি হক বলেন, প্রাকৃতিকভাবেই নদীর দিক পরিবর্তন হয় কোথাও শুকিয়ে যায়। তবে মানুষের হস্তক্ষেপে নদীর মৃত্যু তরান্বিত হয়। আর শুষ্ক মৌসুমে উজানে পানি প্রত্যাহার করায় ভাটিতে বাংলাদেশের অনেক নদ নদী শুকিয়ে যায়।
তিনি বলেন,“ভারতেও একটা বাধ আছে যেটা দিয়ে পানি ইরিগেশনের জন্য ডাইভার্ট করা হয়, বাংলাদেশে যেটুকু আছে সেটুকুও যদি পানি ডাইভার্ট করা হয় তাহলে আস্তে আস্তে ডাউনস্ট্রিমে কী হবে? নদী মরে যাবে"।
kortoaImage copyrightbbc
Image captionচরম দূষণের শিকার করতোয়া
নদী গবেষক মমিনুল হক সরকার বলেন, নদীর যখন প্রয়োজন অর্থাৎ শুষ্ক মৌসুমেই উজানে পানি অপসারণ করা হয়-“এটা তিস্তার বেলায়ও সত্যি, পদ্মার বেলায়ও সত্যি। ফারাক্কা দিয়ে ড্রাই সিজনেই পানি ডাইভার্ট করা হয়, বর্ষাকালে কেউ করে না। এটা যদি বলতে হয় নদী মরে যাচ্ছে, মরা মানে ড্রাই সিজনেই মরে যাচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমটা যখন আমাদের পানির বেশি দরকার তখনই মরে যাচ্ছে”।

যেভাবে হত্যা করা হয় নাজিমুদ্দিনকে


নাজিমুদ্দিন
Image captionহৃষিকেশ দাস রোডের এই দর্জির দোকানের সামনে কুপিয়ে এবং গুলি করে নাজিমুদ্দিনকে হত্যা করা হয়

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার পুরোনো অংশে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাঁটাপথ সূত্রাপুরের হৃষিকেশ দাস রোডে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাজিমুদ্দিন সামাদকে হত্যা করা হয় বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে।
সন্ধ্যায় ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরছিলেন আইন বিভাগের এই ছাত্র।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ব্যস্ত রাস্তাটির পাশে এবং শুকনো নর্দমায় ছোপ ছোপ রক্ত রয়েছে। জায়গাটুকু ইটের টুকরো দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের সময় এই রাস্তার দু’পাশে দোকান পাটের অধিকাংশই খোলা ছিল। সব ধরণের যানবাহন চলাচল করছিল।
ছোট যে দর্জির দোকানের সিঁড়ির কাছেই নাজিম উদ্দিনের নিথর দেহ পড়ে ছিল, তার মালিক হত্যাকাণ্ডের সময় দোকানে একাই ছিলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বিবিসিকে বলেন, “হঠাৎ দেখি রাস্তায় মানুষ ভয়ে ছোটাছুটি করছে আর ঐ যুবকটিকে চার পাঁচ জন মিলে কোপাচ্ছে। পিস্তলের গুলির শব্দও হলো। তখন দেখি, আশে পাশের সব দোকানের সাটার নামাচ্ছে। আমিও সাটার নামিয়ে দোকানের ভিতরে বসে ছিলাম"।
আশপাশের মানুষজন যখন আতঙ্কে সিটিয়ে গেছে, তার মধ্যেই হত্যাকারীরা খুব সহজে মানুষের ভিড়ে মধ্যে মিশে পালিয়ে যায়।

নাজিমুদ্দিনImage copyrightbbc
Image captionবৃহস্পতিবার সারাদিন ধরেই নাজিমুদ্দিনের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শিক্ষার্থী

হৃষিকেশ রোডের চুলকাটার দোকান ও পাশের মিষ্টির দোকানের কর্মচারীরা জানান, আতংকে মানুষ ছোটাছুটি করলে মুহূর্তেই ঐ এলাকা ফাঁকা হয়ে যায়। নাজিম উদ্দিনের মৃতদেহ রাস্তার পাশে নর্দমার কাছে পড়ে থাকে।
কাছের এক দোকানদার বলেন, ঘটনা শেষ হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে তিনি তার দোকানের কাছে এসে দেখেন যুবকটির মাথায় গভীর আঘাতের চিহ্ন। সেখান থেকে রক্ত ঝরছে। আর মানুষটি হা করে আছে। পা পূর্ব দিকে এবং মাথা রয়েছে পশ্চিম দিকে। হামলার পরপরই সে মারা যায় বলে ঐ দোকানদারের ধারণা।
ঐ দোকান মালিক জানান, ঘটনার পঁচিশ মিনিট পর পুলিশ এসে মৃতদেহটি মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যায়।
সেসময় ঐ এলাকার সব ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে দ্রুত বাড়িতে চলে যান।

nazimuddinImage copyrightNazimuddin Samad Facebook Page
Image captionঅনলাইনে, বিশেষ করে ফেসবুকে, কট্টরে ইসলামের সমালোচনা করতেন নাজিমুদ্দিন।

সূত্রাপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তপন চন্দ্র সাহা বিবিসি বলেন, তারা খবর পাওয়ার সাথে সাথেই ঘটনাস্থলে যান। পুলিশ সেখানকার ব্যবসায়ীদের মুখে ঘটনার বর্ণনা শুনে তদন্ত শুরু করেছে।
বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নাজিমুদ্দিনের ময়না তদন্ত শেষ হয়।
রাতেই নিহতের লন্ডন প্রবাসী ভাই এসে মৃতদেহ সিলেটের বিয়ানীবাজারে তাদের গ্রামে নিয়ে যাবেন বলে জানা গেছে।
কট্টর ইসলামকে সমালোচনা করে অনলাইনে লেখালেখি করতেন নাজিমুদ্দিন। লেখালেখির কারণেই তাকে হত্যা করা হয়েছে কিনা পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।

শুক্রবার, ১ এপ্রিল, ২০১৬

সাড়ে চার মিলিয়ন ডলার ফেরত পেলো বাংলাদেশ


Image copyrightThinkstock

মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের একাউন্টে থাকা বাংলাদেশের রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে আজ বাংলাদেশ সাড়ে চার মিলিয়ন ডলার ফেরত পেয়েছে।
ফিলিপাইনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জন গোমেজ বিবিসিকে বলেছেন তার সামনেই সেখানকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৪ দশমিক ৬৩ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ ব্যাংককে ফেরত দিয়েছে।
কিভাবে ফেরত পাওয়া গেলো ওই টাকা জানতে চাইলে মিস্টার গোমেজ বলেন ক্যাসিনোর অপারেটর মাইক ওয়াং সিনেটের শুনানিতেই বলেছিলেন তার কাছে ৪.৬৩ মিলিয়ন ডলার আছে এবং ক্যাসিনোতে আরও ৪৫০ মিলিয়ন পেসো (১০ মিলিয়ন ডলারের সমমান)রয়েছে।
তিনি জানান সেটাই প্রথম অংশ আজ বাংলাদেশকে ফেরত দেয়া হয়েছে।
কয়েকদিনের মধ্যেই আরও কিছু টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

Image captionরিজার্ভ চুরির ঘটনার পর নৈতিক দায় নিয়ে পদত্যাগ করেছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীণ গভর্নর আতিউর রহমান।

কিন্তু পুরো টাকাটা ফেরত পাওয়া যাবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত জন গোমেজ বলেন, “ফিলিপাইনের সিনেটররাই বলছে বাংলাদেশ ৩৪ মিলিয়ন ডলার ফেরত পাবে কিন্তু তাতে তো সন্তুষ্ট হতে পারিনা। পুরোটাই তো উদ্ধার করতে হবে”।
ক্যাসিনোতে যাওয়া টাকা পাওয়ার বিষয়ে যে সংশয় রয়েছে সে বিষয়ে তিনি বলেন, “ক্যাসিনোতে চলে গেছে বলে টাকা পাবেনা তাতো মানবোনা। সিনেট দারুণ কাজ করছে। সিনেটর বলছেন ৩৪ মিলিয়ন ডলার পাওয়া যাবে। আমরা ধাপে ধাপে আগাবো”।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন রিজার্ভ চুরির সাথে প্রধানত যারা জড়িত তাদের সবাইকে চিহ্নিত করা হয়েছে। চারজনের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল কেস হয়েছে।
ফিলিপাইনের আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দেবে বাংলাদেশ, বললেন ভারতের বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক কাপিল দেব


kapil_devImage copyrightGetty Allsport
Image caption১৯৮৩তে বিশ্বকাপ জেতার পর ট্রফি হাতে কপিলদেব
টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর থেকে বাংলাদেশকে বেশ হতাশ হয়ে ফিরতে হলেও ভারতের ক্রিকেট কিংবদন্তী কাপিল দেব কিন্তু মনে করছেন এই দলটা আগামীতে সবাইকে চমকে দেবে।
পুরোপুরি স্পিন-নির্ভর বোলিং আক্রমণ থেকে তারা যেভাবে ফাস্ট বোলিংকে তাদের দলের বড় অস্ত্র করে তুলেছে, তার অসম্ভব তারিফ করেছেন কাপিল দেব।
বিবিসি বাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ভারতের বিশ্বকাপজয়ী এই সাবেক অধিনায়ক আরও বলেছেন – বাংলাদেশ দলে দুর্দান্ত কিছু অ্যাথলিট আছে, এখন তাদের চাই শুধু আর একটু পরিণতি!
এমন কী বেঙ্গালুরুতে ভারতের কাছে বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য হারের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি। দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলা গ্রাউন্ডে মুখোমুখি হয়েছিলাম এমনই এক অন্তরঙ্গ কাপিল দেবের।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে কপিল দেব অবসর নিয়েছেন প্রাই বাইশ বছর আগে – কিন্তু টিভিতে ধারাভাষ্য, ক্রিকেট অ্যাকাডেমি বা কোচিংয়ের সুবাদে এই খেলাটার সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ক রয়েই গিয়েছে।
cricket_bangladesh_india_t20_worldImage copyrightbbc
Image captionকপিল নিশ্চিত বাংলাদেশ কখনও বেঙ্গালুরুর মতো ওভাবে আর হারবে না
আর এই সময়সীমাটায় যে দলটার উত্থান তাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছে, কাপিল নির্দ্বিধায় বলছেন সে দলটার নাম বাংলাদেশ।
তিনি বলছিলেন, ‘‘ভীষণ উন্নতি করেছে ওরা, এখন ওদের শুধু আরও ম্যাচিওরড হয়ে উঠতে হবে। বাংলাদেশ দলে যে জিনিসটা আমার সবচেয়ে ভাল লাগে তা হল মাত্র দশ-পনেরো বছর আগেও স্পিনাররাই ছিল তাদের একমাত্র ভরসা। আর এখন দেখুন, ঢাকার এশিয়া কাপে ওরা কী দারুণ সিমিং ট্র্যাক বানাচ্ছে আর সেখানে ওদের ফাস্ট বোলাররা কাঁপিয়ে দিচ্ছে।’’
‘‘ফাস্ট বোলাররা এখন ওদের বড় শক্তি, এবং সেটা ভারতের ফাস্ট বোলিং অ্যাটাকের চেয়েও ভাল। এটা তো আপনাকে সমীহ করতেই হবে।’’
দেড় দশক আগে যখন বাংলাদেশ আইসিসি-র পূর্ণ সদস্যপদ পায়, তারপর প্রথম কয়েক বছর বাংলাদেশের পারফরম্যান্স নিয়ে কম সমালোচনা হয়নি।
কাপিল দেব কিন্তু মনে করেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মানিয়ে নিতে এই সময়টা তাদের দরকার ছিল – এবং এখনকার বাংলাদেশ দলটার আত্মবিশ্বাসই আলাদা।
বিবিসি বাংলার সঙ্গে সাক্ষাৎকারের এক ফাঁকে কপিল দেবImage copyrightBBC Bangla
Image captionবিবিসি বাংলার সঙ্গে সাক্ষাৎকারের এক ফাঁকে কপিল দেব
‘‘ইদানীংকালে তাদের যেভাবে আত্মবিশ্বাসে টগবগ করতে দেখছি সেটা প্রায় অবিশ্বাস্য। এই একই জিনিস কিন্তু শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রেও ঘটেছিল – টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর দলটা যেভাবে দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়েছিল তা ভাবাই যায়নি।’’
‘‘বাংলাদেশকে সে জায়গায় পৌঁছতে অবশ্য আরও ভাল পারফর্ম করতে হবে। কিন্তু আমার বিশ্বাস সেটা সম্ভব – কারণ ক্রিকেট নিয়ে যে মাতামাতি ওখানে, আর বাঙালিরা তো পাগল আমি সব সময়ই বলি ... ’’
‘‘আর বাংলাদেশ দলে কয়েকজন সাঙ্ঘাতিক অ্যাথলিট তো আমাকে একেবারে চমকে দিয়েছে। (সৌম্য) সরকার যেমন কয়েকটা ক্যাচ নিয়েছে, ভাবাই যায় না। দলে কিন্তু ওদের এমন ক্রিকেটারেরই প্রয়োজন – শুধু বাইরের নানা দেশের সিনিয়র ক্রিকেটাররা এসে যদি ওদের ঠিকমতো পরামর্শ দিতে পারে তাহলে আর দেখতে হবে না! ’’
কিন্তু এরকম প্রতিভাবান একটা দল বেঙ্গালুরুতে তিন বলে দু’রান তুলতে না-পেরে কীভাবে ভারতের কাছে হেরে গেল, এবারের ওয়ার্ল্ড টিটোয়েন্টিতে এখনও সেটা সবচেয়ে বড় রহস্য। কাপিল অবশ্য ভেবে ভেবে এর একটা উত্তর বের করেছেন!
soumya_sarkarImage copyrightGetty
Image captionকপিলের অন্যতম প্রিয় ক্রিকেটার সৌম্য সরকার
তার ব্যাখ্যা হল, ‘‘দেখুন, ওরকম পরিস্থিতিতে দশবারের মধ্যে নবারই যে কোনও দল জিতবে। এমন কী আফগানিস্তানও। ফলে ভারত যদি শেষ পর্যন্ত এই টুর্নামেন্টে জেতে, তাহলে আমি বাংলাদেশকে একটা ফুলের তোড়া পাঠাতে চাই।’’
‘‘কিন্তু হাসির কথা নয়, আমি যেটা বলতে চাইছি ক্রিকেটে এমন অনেক কিছু ঘটে যা আপনি কখনও ভাবতেও পারেন না – আর তাই খেলাটা এমন মহান অনিশ্চয়তার। খেলার ঠিক সেই মুহুর্তে, ওই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা সঠিক পরিণতিবোধটা দেখাতে পারেনি – কিন্তু আমি নিশ্চিত ওরকম অবস্থায় তারা আর কখনও হারবে না।’’
ব্যক্তিগতভাবে কাপিলও বিশ্বের আরও নানা ক্রিকেট-পন্ডিতের মতো বাংলাদেশের মুস্তাফিজুর রহমানের ভক্ত – যদিও তিনি ওর বোলিংয়ে আরও বৈচিত্র্য দেখতে চান।
ভারতের ক্রিকেট মহলে স্পষ্টবাদী ও অপ্রিয় কথা বলার জন্য পরিচিত কাপিল সরাসরি আর একটা বলছেন – আগামী পাঁচ বছরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ডার্ক হর্স হিসেবে তার বাজি হবে বাংলাদেশই!