মঙ্গলবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

ভারতে কন্যা ভ্রূণ হত্যা ঠেকাতে মানেকার প্রস্তাব


maneka gandhi
Image copyrightPIB
Image captionমানেকা গান্ধী
ভারতে কন্যাভ্রূণ হত্যা রোধ করার জন্য লিঙ্গ নির্ণয়ের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা আছে – তা তুলে নিয়ে সম্পূর্ণ বিপরীত দৃষ্টিকোণ থেকে এই সমস্যার প্রতিকারের কথা ভাবছে সরকার।
ভারতের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী মানেকা গান্ধী বলেছেন, সরকার চাইছে কোনও নারী গর্ভবতী হওয়ার পরই তার সন্তানের বাধ্যতামূলকভাবে লিঙ্গ নির্ণয় করা হোক – যাতে সরকার দেশের প্রতিটি জন্ম মনিটর করতে পারে এবং ঠেকাতে পারে কন্যাভ্রূণের হত্যা।
তবে এই প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে নিয়ে ভারতের নারী আন্দোলনের নেত্রীরা কার্যত দুভাগ – একাধিক বিরোধী দলও জানিয়েছে পার্লামেন্টে তারা এর বিরোধিতা করবে।
ভারতে কন্যাভ্রূণ হত্যার নিষ্ঠুর প্রবণতা বন্ধ করার জন্য সরকার নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে বহু বছর ধরেই – বর্তমান নরেন্দ্র মোদি সরকারের বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও কর্মসূচী যেমন চলছে, তেমনি বাইশ বছর আগে চালু হওয়া ভারতে ভ্রূণের লিঙ্গ পরীক্ষা নিষিদ্ধ করার আইনও এখনও বহাল আছে।
কিন্তু এখনও পর্যন্ত তাতে নাটকীয় কোনও সাফল্য মেলেনি, আর সরকার এখন চাইছে পুরো চেষ্টাটাই উল্টোদিক থেকে করে দেখতে।
জয়পুরে এক সরকারি সম্মেলনে গিয়ে ভারতের নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী মানেকা গান্ধী প্রস্তাব দিয়েছেন, মহিলারা গর্ভবতী হওয়ার পর শুরুতেই তাদের নথিভুক্ত করে বাধ্যতামূলকভাবে ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ণয় করা হোক – যাতে সরকার মনিটর করতে পারে ওই সন্তান শেষ পর্যন্ত জন্মালো কি না।
তিনি বলেছেন, ‘এতে সেই সন্তানকে গর্ভাবস্থায় ঠিকমতো পুষ্টিও জোগানো যাবে, গ্রামের পঞ্চায়েতে রেকর্ডও থাকবে গর্ভে ছেলে ছিল, না মেয়ে’।
হাজারো প্রচার, কড়া আইন সত্ত্বেও সব মেয়েকে বাঁচানোর চেষ্টা সফল হচ্ছে না বলেই যে সরকার এভাবে ভাবতে বাধ্য হচ্ছে – মন্ত্রী সেটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
india foeticide protestsImage copyrightGetty
Image captionকন্যা ভ্রূণ হত্যার প্রতিবাদে ভারতে বিক্ষোভও হয়েছে
কিন্তু ভারতে নারী আন্দোলনের পুরোধা ও মানবাধিকার কর্মী কবিতা কৃষ্ণন মনে করছেন নতুন প্রস্তাবটা আসলে সরকারের ব্যর্থতারই স্বীকারোক্তি।
তার যুক্তি হল, ‘কোনও সরকারই লিঙ্গ নির্ণয় নিষিদ্ধ করার আইন ঠিকমতো প্রয়োগ করেনি, বরং উল্টে বলেছে কতজনকে আমরা গ্রেফতার করব? আর এখন সেই আইনটাই বাতিল করে তারা লিঙ্গ নির্ণয়কে আইনসিদ্ধ করতে চায়। কিন্তু এটা আসলে একটা ভুল ব্যাখ্যা’।
ভারতে কন্যাভ্রূণ হত্যা নিয়ে গবেষণা করেছেন অধ্যাপক শাশ্বতী ঘোষ – তিনি আবার নতুন প্রস্তাবটাকে সরাসরি খারিজ করে দিতে রাজি নন।
তাঁর কথায়, ‘দুটো জিনিস হলে আমি এই প্রস্তাবটা ভেবে দেখেতে রাজি। এক, দেশের সব আল্ট্রাসাউন্ড মেশিন নথিভুক্ত করতে হবে। গোপনে সরকারের নজর এড়িয়ে কোনও মেশিনে লিঙ্গ নির্ণয় চলবে, সেটা হতে পারবে না।’
‘আর দ্বিতীয় কথা হল, মনে রাখতে হবে গ্রামের প্রত্যেক মা গর্ভবতী হলে তাদের যখন প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে নথিভুক্ত করাতে হবে – অনেক সময়ই তাদের সবচেয়ে কাছের কেন্দ্রটাও কিন্তু কুড়ি কিলোমিটার দূরে। খারাপ রাস্তায় সেই কেন্দ্রে যেতে গিয়েও কিন্তু তাদের গর্ভপাত হয়ে যেতে পারে’, বলছিলেন অধ্যাপক ঘোষ।
অর্থাৎ ভারতে স্বাস্থ্য পরিষেবা বা অবকাঠামোর যে হাল, তাতে প্রতিটি গর্ভধারণ নথিভুক্ত করাটাই এক বিরাট চ্যালেঞ্জ।
তা ছাড়া এই ব্যবস্থা চালু হলেও গর্ভস্থ কন্যাসন্তানের ভরণপোষণে অসুবিধাই আরও বাড়বে বলে মনে করেন জনতা দল ইউনাইটেডের নেতা ও এমপি কে সি ত্যাগী।
তিনি বলছেন, ‘নারী ও শিশুকল্যাণমন্ত্রীর এই প্রস্তাবটাই শিশুর স্বার্থবিরোধী। এতে তো গর্ভে মেয়েদের বড় করে তোলা আরও কঠিন হয়ে পড়বে। আমি বুঝতেই পারছি না লিঙ্গ নির্ণয়ের পর নিষেধাজ্ঞা মন্ত্রী কেন তুলে দিতে চাইছেন – সংসদে এই প্রস্তাব এলে আমরা অবশ্যই বিরোধিতা করব।’
গোটা বিতর্কে মূল কথাটা হল, গর্ভের সন্তান কন্যা – এটা জানার পরও পরিবার কি তার সঠিক যত্ন নেবে?
আগের প্রয়াসটা ছিল মা-বাবাকে সন্তান ছেলে না মেয়ে তা না জানিয়ে, আর এখন সরকার সেটাই করতে চায় তাদের প্রথম থেকে জানিয়ে। কিন্তু ভারতীয় সমাজে এই নতুন পদ্ধতি কতটা কাজে দেবে বিশেষজ্ঞরা তা নিয়ে সন্দিহান।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন