ভারতের সংসদের এক নারী সদস্য বলেছেন যে সংসদের আলোচনা একঘেঁয়ে লাগলে অন্য নারী সদস্যদের সঙ্গে তিনি শাড়ি, সাজগোজ নিয়ে গল্প করতে থাকেন। সংসদের গ্যালারী বা টি ভি তে তখন দেখলে মনে হবে খুব গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যু নিয়ে আলোচনা করছেন তাঁরা।
ন্যাশানালিস্ট কংগ্রেস পার্টির প্রধান ও প্রাক্তন গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং ক্রিকেট কর্তা শারদ পাওয়ারের মেয়ে সুপ্রিয়া সুলে এই মন্তব্য করেছেন। বেশ কয়েকবারের সংসদ সদস্য তিনি।
মিসেস সুলে গিয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের নাসিকে একটি কলেজ ছাত্রীদের অনুষ্ঠানে। সেখানেই তিনি বলেন যে সংসদে একজন বা দুজন বক্তার ভাষণের পরে তৃতীয় ব্যক্তি আগের দুজনের ভাষণই আবারও বলতে থাকেন। তখনই তাঁর একঘেয়ে লাগতে থাকে আর তিনি অন্য নারী সংসদ সদস্যদের সঙ্গে গল্পগুজবে মেতে ওঠেন – ঠিক যেমনটা কলেজ ছাত্রীরা করে।
মিসেস সুলে আরও বলেন টিভি তে বা সংসদের গ্যালারী থেকে কেউ তাঁকে চেন্নাইয়ের এক নারী সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা বলতে দেখে হয়তো ভাববে সেখানকার সাম্প্রতিক বন্যা নিয়ে দুজনে আলাপ করছেন। মোটেই তা নয়, তাঁরা তখন আলোচনা করছিলেন কোথা থেকে শাড়ী কিনেছেন তাঁরা!
মিসেস সুলের কিছুটা হাল্কা চালে করা এই মন্তব্য টি ভি চ্যানেলগুলিতে দেখানোর পরে তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
সি পি আই এম দলের রাজ্যসভার তরুণ সদস্য ঋতব্রত ব্যানার্জী বলছিলেন, “সংসদ হল দেশের সর্বোচ্চ আইনসভা। আইনপ্রণয়ণের সময়ে যদি কেউ সেখানে শাড়ি, গয়না, ফেসিয়াল করার মতো ব্যক্তিগত বিষয়ে আলোচনা করে.. এই মন্তব্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক। নিজে একজন সংসদ সদস্য হয়ে মর্মাহত উনার এই মন্তব্য জেনে।“
মি. ব্যানার্জী আরও বলছিলেন, মিসেস সুলে এই মন্তব্য করছেন কলেজ ছাত্রীদের সামনে; তাদের কাছে রাজনীতিবিদদের সম্বন্ধে কী ধারণা তৈরী হচ্ছে!
তবে বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য মিসেস সুলের বক্তব্য জেনে বিস্মিত হয়েছেন, কারণ একজন সিরিয়াস রাজনীতিবিদ হিসাবেই সংসদের ভেতরে-বাইরে পরিচিত তিনি।
কংগ্রেস দলের অন্যতম জাতীয় মুখপাত্র ও সুপ্রিয়া সুলের কাছাকাছিই সংসদে যাঁর আসন – এমন একজন সুস্মিতা দেব আসামের শিলচরের সংসদ সদস্য।
মিজ. দেবের কথায়, “যদিও তিনি আমার দলের কেউ নন, তবু বলব ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, শিক্ষা, বাজেট সহ প্রতিটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে খুব সিরিয়াস ভাষণ দেন সুপ্রিয়া সুলে। সংসদের বাইরেও তামাক বিরোধী প্রচার বা অপুষ্টি নিয়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন সুপ্রিয়া। উনার মতো একজন সিরিয়াস সংসদ সদস্য হয়তো কোনও জায়গায় গিয়ে মজার ছলে একটা কথা বলেছেন। সেটাকে নিয়ে বিতর্কের কোনও অর্থ হয় না।“
রাজনীতিবিদ বা সংসদ সদস্যদের মধ্যে মিসেস সুলের মন্তব্য নিয়ে বিভেদ থাকলেও ফেসবুক টুইটারে অনেক সাধারণ মানুষ বিরূপ মন্তব্য করছেন।
তাঁদের কথায়, সাধারণ মানুষ কি শাড়ি আর পার্লার নিয়ে আলোচনা করতে তাঁকে ভোট দিয়ে সংসদে পাঠিয়েছে!
কেউ বলছেন, সংসদে আসলে ঠিক কীরকম গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়, সেই সত্যি কথাটাই সুপ্রিয়া সুলে বলে ফেলেছেন!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন