বাংলাদেশে বিরোধীদল বিএনপির নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার দীর্ঘসময় ক্ষমতায় থাকার টার্গেট নিয়ে এগুতে চাইছে।
প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্যে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে বলে তারা মনে করছেন।
আর সেকারণেই আওয়ামী লীগ জাতীয় নির্বাচন বা সংলাপে আগ্রহ দেখাচ্ছে না বলেও বিএনপি নেতাদের ধারণা।
মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে দেশবাসীর সহযোগিতা চেয়েছেন।
তবে এটাকে ভিশন বা লক্ষ্য হিসেবে বর্ণনা করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
তারা বলেছেন, দীর্ঘ সময় ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার জন্য নয়, আওয়ামী লীগ সরকার জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য একটা ভিশন নিয়ে এগুচ্ছে।
আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নির্বাচনে রূপকল্প২১ শিরোনামে তাদের নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছিল।
তাতে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার স্বপ্ন বা লক্ষ্য হিসেবে তুলে ধরা হয়েছিল।
সেই নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার বছর তিনেক পর আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করার বক্তব্য তুলে ধরে।
আওয়ামী লীগের এই বক্তব্য নিয়ে সরকার বিরোধীরা প্রশ্ন তুলে আসছিল যে, আওয়ামী লীগ দীর্ঘ সময় ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে চায় কিনা।
সর্বশেষ জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের লক্ষ্যকে আরও পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেছেন।
তিনি বলেছেন, “আশাবাদী এবং আত্মবিশ্বাসী দেশবাসীকে সাথে নিয়ে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশে পরিণত করব ... আমি আপনাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা চাই।”
মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণের আগের দিনে ঢাকায় আওয়ামী লীগের জনসভায় দলটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও বলেছিলেন, তাদের সরকারের আরও কয়েক মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা দরকার।
বিরোধীদল বিএনপির নেতারা বলেছেন, দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার চিন্তা থেকে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে কোন সংলাপে আগ্রহী নয় এবং তারা রাজনীতিকেই একটা সীমিত বা নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করার মধ্য দিয়েই আওয়ামী লীগ তাদের ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে চেয়েছে। এখন প্রধানমন্ত্রী ভাষণে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার ইঙ্গিত এলো। তবে সংলাপ বা নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে কোন দিক নির্দেশনা পেলাম না।”
বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে তাতে ব্যর্থ হয়েছিল।
সেই নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকের বক্তব্যে এমন ইঙ্গীত ছিল যে, অল্প সময়ের মধ্যে সব দলের অংশ গ্রহণে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে।
কিন্তু দু’বছরে আওয়ামী লীগ আত্মবিশ্বাসী হয়ে বেশ মুক্ত অবস্থানে এসেছে। ফলে সহসা জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাবনা কম।
পাঁচ বছর মেয়াদ শেষে অর্থাৎ ২০১৯ সালের আগে কোন নির্বাচন নয়, এমন চিন্তাই এখন আওয়ামী লীগের মধ্যে কাজ করছে।
এতে বিএনপিতে সন্দেহ বেড়েছে যে, আওয়ামী লীগ দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকতে চাইছে।
তবে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম বলেছেন, “এ সরকার ২০৪১ সাল পর্যন্ত থাকার কথা কোথাও বলা হয়নি। কিন্তু আওয়ামী লীগ অবশ্যই চাইবে, স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকুক। তা না হলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে না।”
তিনি আরও বলেছেন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করার বিষয়টি একটি ভিশন বা স্বপ্ন।
জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী ভিশন বাস্তবায়নে তাদের সহযোগিতা চেয়েছেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন